বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পদ্মার পানি কমে গেলে জেগে উঠে পলিমাটির চর। বিস্তীর্ণ এ চরাঞ্চলে কৃষকরা রোপন করেন চিনামাদাম। বর্ষা মৌসুম শুরু হয় জুনের মাঝামাঝি। বীজ বপন করে ফসল ঘরে তুলতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচমাস। দীর্ঘদিন ধরে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আসছেন ঈশ^রদী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী সাঁড়া ও লক্ষীকুন্ডা দুই ইউনিয়নের কৃষকরা।
এখন মাঠের পর মাঠ শুধু চিনাবাদামের সবুজ ক্ষেত। দেখে মনে হয় শিল্পীর রং তুলিতে চরে সবুজের ঢেউ লেগেছে। এখন চিনাবাদামগুলো ঘরে তোলার পালা। বর্ষা শুরু হতে যাচ্ছে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করবে। চাষিরা ব্যস্ত বাদাম তোলার কাজে। বাদামসহ সবুজ গাছগুলো টেনে উপড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আর সেই গাছ থেকে বাদাম ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাড়ির বধূ, শিশু ও কিশোরীরা। পদ্মা পাড়ের এলাকা ও চর ঘুরে এসব দৃশ্যই এখন চোখে পড়ে। চিনাবাদাম চাষে খরচ কম। সার, কীটনাশক ব্যবহারের করার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে ও রোগ বালাই কম হওয়ায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার পাকশী রেলওয়ে ডিগ্রী কলেজের অনার্সের শিক্ষক চিনাবাদাম চাষী গোলাম সরোয়ার সোহাগ জানান, তিনি ছাত্রজীবন থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় প্রতি বছরই অন্যান্য ফসলের সঙ্গে বাদাম চাষ করেন। এখন চলছে বাদাম তোলার কাজ। পুরুষ শ্রমিকরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দিন হাজিরায় কাজ করছেন। আর নারী ও কিশোরীরা ২৫০ টাকা চুক্তিতে প্রতি মণ বাদাম ছাড়ানোর কাজ করছেন। দামও তুলনামূলক ভালো তাই এবার লোকসান হবে না।
শিশু শায়লা ও কিশোরী শাপলা রোকসানা জানান, তারা স্কুলে লেখাপড়া করে। স্কুলে যাওয়ার আগে এবং বাড়ি ফিরে তারা বাদাম ছাড়ানো কাজ করে। কোন কোন সময় তারা মাঠ থেকে বাড়ির সীমানায় বাদামগাছ নিয়ে এসে বাদাম ছাড়িয়ে থাকে। এ টাকা দিয়ে তারা সংসারের প্রয়োজনসহ নিজেদের লেখাপড়া ও জামা কাপড় বানিয়ে থাকে। তারা প্রতি বছরের মৌসুমে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে এ কাজ করে।
বাদাম শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত কৃষক রহমদ্দিন শেখ (৬৫)। নিজের জমি ছাড়াও পরের জমি বার্ষিক খাজনা নিয়ে বাদাম চাষ করেন। এবার ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বাদামগুলো পোক্ত হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরই নদীতে বর্ষা মৌসুম উপলক্ষে পানি বাড়তে শুরু করবে। তাই দ্রুত বাদামগুলো তুলে নেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে এবার কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মণ হারে বাদাম পাবেন বলে আশা করছেন। খুচরা বাজারে প্রতি মণ দুই হাজার ৪শ’ থেকে দুই হাজার ৮শ’ টাকা দরে বিক্রয় হয়। কিন্তু আড়তে ২ হাজার থেকে দুই হাজার ৪শ’ টাকা দরে বিক্রয় হয়।
বাম্পার ফলন হলেও বাদাম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের। তারা দ্রুত বাদামগুলো শুকিয়ে বস্তায় ভরে ঘরে রাখেন। তারপর সেগুলো লালপুর, নাটোর, পাবনা ও রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে আড়তে বিক্রয় করেন। এসব আড়ৎ থেকে পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চিনাবাদাম সরবরাহ করা হয়। তবে সংরক্ষণের সুব্যবস্থা থাকলে তাদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমত।
ঈশ^রদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ জানান, এবার পদ্মানদীর চরে মোট ১৬০ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম চাষ হয়েছে। যা চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরে ১০০ হেক্টর। আর ল²ীকুন্ডা ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাদামে সার ও কীটনাশক ব্যবহার নেই বললেই চলে। কোন কোন সময় সামান্য পরিমাণে টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। ৫ মাসের এ রবি শস্য খুবই লাভজনক। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোন ব্যবস্থা নেই। তাই কৃষকদের কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।