গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাস্তায় বের হলে যানজটের কারণে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তবে এমন অভিজ্ঞতা নতুন কিছু না। ঢাকা শহর যানজটের শহর। বিশেষ করে কিছু কিছু রাস্তায় রিকশার কারণে তীব্র জট তৈরি হয়। আর রিকশার কারণে একবার যানজট সৃষ্টি হলে দীর্ঘ সময় লাগে গন্তব্যে পৌঁছাতে। সিটি করপোরেশন প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এটা খুব ভালো উদ্যোগ। রিকশা বন্ধ হলে প্রধান সড়কগুলোতে যাতায়াতে স্বস্তি আসবে।
কথাগুলো বলছিলেন সালেক মাহমুদ নামে এক বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। শনিবার মধ্যবাড্ডা এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। সালেকের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজধানীর তিন প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগরবাসী। তবে এ সিদ্ধান্ত অনুসারে রিকশা বন্ধ করার বিকল্প হিসেবে রাস্তায় পর্যাপ্ত গণপরিবহনের নিশ্চয়তা চায় তারা।
মধ্যবাড্ডার বাসিন্দা মজনু বলেন, রিকশাগুলো চলাচলে অসুবিধা অনেক। বিশেষ করে মেইন সড়কগুলোতে রিকশা চলাচলে শৃঙ্খলা থাকে না। ওরা (রিকশা চালক) ইচ্ছেমত দাঁড়িয়ে যায়, ডানে বামে টার্ন নেয়, ইচ্ছেমত দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। দেখবেন, একটা রিকশা সামনে থাকলে পেছনে থাকা সব গাড়ির গতি হয়ে যায় রিকশার সমান। জ্যামের ঢাকায় রিকশাগুলো এভাবে চলতে পারে না। মেইন সড়ক হতে রিকশা উঠিয়ে দিয়ে জ্যাম কমানো সম্ভব। তাহলে জনজীবনে যানজট নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।
প্রাইভেটকার চালক খলিল বলেন, মূল সড়কে রিকশার চলাচলের কারণে অনেক রাস্তায় জ্যাম হয়। নিয়মিতই দেখবেন, তিন লেনের রাস্তার দুই লেন রিকশার দখলে। এসব কারণে মূল সড়কগুলো যানজট সৃষ্টি হয়।
সিএনজি অটোরিকশাচালক মাহবুব বলেন, প্রধান সড়কে রিকশার কারণে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতেও চলাচল করতে পারে না।
এদিকে প্রধান রাস্তায় রিকশা বন্ধের দাবি জানালেও, যেসব রাস্তায় পাবলিক পরিবহন নেই সেগুলোতে রিকশা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকজন। নগরীর এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে রিকশার বিকল্প ভাবা কঠিন বলে জানায় তারা।
বনশ্রীর বাসিন্দা সারোয়ার বলেন, আমি ই ব্লক ৮ নম্বর রোডে থাকি। সেখান থেকে টিভি সেন্টার আসার জন্য এক মাত্র ভরসা রিকশা। এ এলাকার ভিতর থেকে থেকে রিকশা তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রধান রাস্তায় বন্ধ হোক। তিনি বলেন, রামপুরা ব্রীজ থেকে মালিবাগ যাব; তখন গণপরিবনে যেতে পারি। আর এ রাস্তায় রিকশা উঠিয়ে দিলে দ্রুত যাওয়া সম্ভব।
কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও সাইন্সল্যাব-শাহবাগ এ তিন প্রধান সড়কে আগামীকাল রোববার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। এসব সড়কের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে ১৪ জুলাই আবারও বৈঠকে বসবে সমন্বয় কমিটি। সুফল পাওয়া গেলে রিকশা বন্ধ হতে পারে রাজধানীর সব সড়কেই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তা থেকে রিকশা তুলে নেওয়াটা হবে খুব ভালো একটা উদ্যোগ। মেইন সড়কগুলো থেকে রিকশা তুলে দেওয়া হলে প্রাইভেট কার, বাস, লেগুনা এগুলোর গতি বেড়ে যাবে। যানজট কমে যাবে।
রিকশা চলাচলে কি ধরনের সমস্যা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিকশা হচ্ছে ধীরগতির যান। বিশ্বের কোনো দেশে মেইন সড়কে ধীর গতির যান বা রিকশা চলাচল করে না। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশের কলকাতা শহরের মেইন রাস্তায় রিকশা চলে না। এসব রিকশা যখন মেইন সড়কে উঠে যায় তখন অন্যান্য গাড়িগুলোর গতি অনেক কমে যায়। একটা গাড়ি যে ফ্লোতে যাওয়ার কথা সে ফ্লোতে যেতে পারেনা। ফলে জট সৃষ্টি হয়। এছাড়া গাড়ির জ্বালানীর অপচয়ও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এক নেতা বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মানুষ মাইলকে মাইল পায়ে হেঁটে চলে। অথচ আমাদের দেশের মানুষ হাঁটতেই চায় না। সামান্য দূরত্বে রিকশায় চড়ে। এতে টাকার যেমন অপচয় হয় তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি। বরং হাঁটলে টাকারও সাশ্রয় হয় স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। সে কারণে রিকশা উঠিয়ে দিলে ফুটপাতকে হাঁটার জন্য মুক্ত রাখতে হবে। যে সব এলাকার রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হবে সে সব রাস্তা যেনো ফুটপাত মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে মানুষ স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।