পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য অনেক আগে থেকেই বাংলার মানুষ দেখছে। বলা যায় এ দৃশ্য দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সকলে। এরকম ঘটনা হতেই পারে! কিন্তু কতবার? প্রশ্নটা সরল অংকের মতো। ততবার এরকম ঘটনা হবে, যতবার এরকম ঘটনার পর সঠিক বিচার হবে না। এই যেমন রাজীব হত্যা। কি নির্মম আর ভয়ংকরভাবে হত্যা করা হয় ছেলেটাকে। কিন্তু কি হয়েছে? কিছুই হয়নি। ফেসবুকে সামান্য পোস্ট আর কয়েকজন লেখককের কিছু আবেগপ্রবন লেখা। এতেই শেষ। ফিরে আসেনি রাজীব! ফিরে আসেনি শান্তি। চলছেই অরজকতা। ধর্ষণ, মারামারি, কুপাকুপি, আগুন, হত্যা কি নেই বাকি! সবকিছুই এখন চোখের সামনে ঘটছে। আমরাও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। দাঁড়িয়ে রিফাতকে কোপানোর ভিডিও দেখছি। আজকাল সাংবাদিকের প্রয়োজন নেই বাংলাদেশে। সবাই ফটোগ্রাফার আর সবাই ক্যামেরাম্যান। দু-চার কলম লিখলে সে লেখকও হয়ে যায় এখন। তাই দেশে সাংবাদিক আর ফটোগ্রাফারের অভাব নেই। সবাই ক্যামেরা নিয়ে তৈরি। কেন জানি মনে হচ্ছে, কাল যদি আমার বোনকে রাস্তায় কেউ ধর্ষণ করে তাহলেও সবাই ক্যামেরা নিয়ে তৈরি থাকবে ভিডিও করা জন্য। বাঁচাবে না আমার বোনকে! অবাক হচ্ছেন? কারণ দেখতে দেখতে সব সয়ে গেছে। একটা ছেলেকে দিন দুপুরে রাস্তায় জনসম্মুখে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে, অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না। আবার ভিডিও এবং ছবি তোলছে। আর কেউ কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে সেই কোপানোর দৃশ্য দেখেছে। তাকিয়ে তাকিয়ে দৃশ্য দেখার মানুষ যেন দিন দিন বাড়ছে।
একজন মহিলা, তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে ক’জনের সাথে পারবে? একজনকে আটকাতে গেলে অন্যজন কুপাচ্ছে। যেখানো এতোগুলো পুরুষ থাকতে কেউ আসছে না সেখানে মহিলা ওনিই বা আর কি বাঁচাতে পারবে। ফলাফল আরও একটি হত্যা! এখানেই শেষ নয়। এ হত্যার যদি দৃষ্টিান্ত বিচার না হয়, তবে আরও একটি হত্যা দেখার জন্য সবা তৈরী থাকতে হবে।
একটা বিষয় পরিষ্কার। যেখানে সুষ্ঠ বিচার হবে না, সেখানে কখনও অন্যায়, অপরাধ কমবে না। এইযে ধর্ষণ, হত্যা এসবের কারণ কি? সরল অংকের মতো সোজা! বিচারহীনতার সংস্কৃতি। যতদিন এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি এদেশে থাকবে ততদিন এভাবেই আমাদের জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কুপিয়ে হত্যা করা যেমন অপরাধ তেমনি সে অপরাধের সঠিক বিচার করতে না পারাও রাষ্ট্রের ব্যার্থতা। এ ব্যার্থতা কখনও বর্তমান সরকার থেকে আশা করা যায় না। আমি এ হত্যার বিচার হবে বলে আশা করছি। কারণ নুসরাত হত্যার বিচার বর্তমান সরকার যেভাবে করছে তাতে রিফাত হত্যার বিচারও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু এটাও সম্পূর্ণ সমাধান নয়। হত্যা-বিচার, হত্যা-বিচার এভাবেই কি চলবে! কেন এই হত্যা? এর মূল কোথায় সেটাও বের করতে হবে। যারা খুন করছে তাদের বিচার করলেও যারা খুন করাচ্ছে এবং খুন করাতে যোগান দিচ্ছে তাদের বিচার হচ্ছে না। এতে করে খুনির বিচার হলেও আড়ালা থাকা মূলহোতারা আরও শত শত খুনি তৈরী করতে পারছে। তাই খুনি তৈরিরর কারিগরকে আগে ধরতে হবে। যারা খুনিদের সাহস এবং সহযোগিতা দেয় তারাই প্রকৃত খুনি। তা না হলে আমার সোনার বাংলায় কোন সাহসে রামদা, চাপাটি, দা নিয়ে দিন-দুপুরে মানুষ কোপাবে?
তাই বেশি লম্বা পরিসংখ্যানে যাবো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট চাওয়া থাকবে এরকম হত্যা যেন বাংলাদেশে আর কখনও না ঘটে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আপনি। বর্তমান তরুণ সমাজ আর রক্ত দেখতে চায় না। বন্ধ করতে হবে এ রক্তের খেলা।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিষ্ট, [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।