Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিকত্ব হারিয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

আসামে ৪০ লাখ মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাজ্যটিকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করার কর্মসূচির আওতায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রত্যাবাসনের মুখে পড়ার ভয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন, এমনটা বলছেন ভুক্তভোগীদের স্বজন এবং অ্যাক্টিভিস্টরা। গত মে মাসের কোনও একদিন, ৮৮ বছর বয়সী আশরাফ আলি তার পরিবারের সদস্যদের বলেন যে, রোযা ভাঙার জন্য খাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন তিনি। তার পরিবর্তে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এর আগে আশরাফ এবং তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করতে সক্ষম হন এবং ভারতীয় নাগরিকদের একটি তালিকায় নামও তোলা হয় তাদের। কিন্তু তার এক প্রতিবেশী এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেন। আশরাফকে তলব করা হয় তার নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য। যা না পারলে তাকে আটকের হুমকি দেওয়া হয়। “তিনি ভয় পাচ্ছিলেন যে তাকে আটকের পর একটি আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে এবং চূড়ান্ত তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হবে,” মোহাম্মদ ঘানি নামে তার এক গ্রামবাসী একথা বলেন। দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি নামে পরিচিত এই তালিকাটি ১৯১৫ সালে তৈরি করা হয়েছিলো এটা জানতে যে, কারা জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক এবং কারা প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছে। এই প্রথমবারের মত ওই তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। যাতে, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আগে থেকেই নিজেদের আসামের বাসিন্দা প্রমাণ করতে পারে তাদেরকে ভারতের নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ভারতের সরকারের দাবি, রাজ্যে অবৈধ অভিবাসী সনাক্ত করতে এই তালিকা দরকারি। গত জুলাইতে সরকার চূড়ান্ত খসরা প্রস্তাব প্রকাশ করে যা অনুযায়ী আসামে বসবাসরত প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু ও মুসলিম বাঙালি। চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক ঘোষণায় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছরের এনআরসি তালিকাসহ আরও প্রায় এক লক্ষ বাসিন্দার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে যাদেরকে আবারো নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করতে হবে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ৩১ জুলাই এনআরসি›র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে নিজেদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এই রেজিস্ট্রেশন কর্মসূচির কারণে ১৯৮০র দশক থেকেই দেশে বেশ কিছু ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। যারা নিয়মিতভাবেই বিদেশিদের “সন্দেহজনক ভোটার” এবং “অবৈধ অনুপ্রবেশকারী” হিসেবে সনাক্ত করে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। নাগরিকত্বের রেজিস্টার এবং এই ট্রাইব্যুনাল দুটোই আসামের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক অভিযান পরিচালনায় মদদ দেবে কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছে। আসামের এই সংকটের মূলে রয়েছে একটি বিতর্ক যা বহিরাগতদের কথিত “অনুপ্রবেশকারী” হিসেবে গণ্য করাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। এই বিতর্ক আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং বাঙালি অভিবাসীদের মধ্যে জাতিগত দ্ব›দ্ব তৈরি করেছে। পরিবর্তনশীল জনসংখ্যার চিত্র, ভূমি এবং জীবিকার অভাব, রাজনৈতিক শক্তি হস্তগত করার প্রতিযোগিতা, কে নাগরিকত্ব পাবে- এমন সংকটে ঘি ঢেলেছে। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ২০১৫ সালে নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ শুরু হওয়ার পর থেকে তালিকা থেকে বাদ পরে নাগরিকত্ব হারিয়ে আটক হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে অনেক বাঙালি মুসলিম ও হিন্দুরা। “সিটিজেন ফর জাস্টিস এন্ড পিস” সংস্থার সংগঠক জমশের আলি এ ধরণের ৫১টি আত্মহত্যার তালিকা দিয়েছেন। বিবিসি।

 

 



 

Show all comments
  • Tanweir Elahee ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫১ এএম says : 0
    That's why its call India
    Total Reply(0) Reply
  • Mahamud Hasan Masud ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫২ এএম says : 0
    এখনই সোচ্চার হওয়া দরকার, বাংলাদেশকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মত কোন পরিস্থতির স্বীকার হতে হবে কি? বাংলাদেশের মানুষকে সেটাই ভাবিয়ে তুলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Moh'd Sanaullah Azad ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৫ এএম says : 0
    নাগ‌রিকত্ত্ব কে‌ড়ে নেয়া হ‌লে স্বাধীনতার ডাক দাও..কারণ নাগ‌রিকত্ত্ব মানু‌ষের জন্মগত অধিকার।
    Total Reply(0) Reply
  • M Alamgir Rahman ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৬ এএম says : 0
    ভারত আর অখন্ড থাকবে না। আজ বা আগামীকাল ভারত টুকরো টুকরো হবেই।ইতিহাস সাক্ষী এভাবে অন্য ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার করে কেউ টিকে থাকতে পারেনি।জাস্ট ওয়েট এন্ড সী।
    Total Reply(0) Reply
  • Shakhawat Babon ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৭ এএম says : 0
    রুখে না দাড়ালে আসাম বাসিকে মরতে হবে । হয় নাগরিত্ব নিয়ে ঝামেলা বন্ধ করাতে হবে নতুবা স্বাধিন আসামের ডাক দিতে হবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৮ এএম says : 0
    একদিকে কাস্মীর আরেক দিকে আসাম.....আসা করি ইন্ডিয়া আরেকটু চিন্তা করবে......
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shahed ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৮ এএম says : 0
    নাগরিকত্বের নামে মুসলিম বিতাড়িত করাই আসল উদ্দেশ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Anowar Hussain ১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৯ এএম says : 0
    উগ্রপন্থার জন্য শীগ্রই ভারত টুকরাটুকরা হয়ে যাবে!!! এটা লিখে রাখতে পারেন!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিকত্ব

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ