Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

 সিলেট-আখাউড়া সেকশনের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় রবিবার রাতের ট্রেন দুর্ঘটনায় এক হৃদয়বিদারক ট্রাজেডির জন্ম হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৭ জনের মৃত্যু এবং আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার তথ্য জানা যায়। বরমচাল স্টেশনের কাছে বড়ছড়ায় কালভার্ট ভেঙ্গে ঢাকাগামি আন্তনগর এক্সেপ্রেস ট্রেন উপবনের ৫টি বগি খাদে পড়ে গেলে এই ট্রাজেডি সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার জেরে সিলেটের সাথে ঢাকাসহ সারাদেশের ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগ অন্তত ২০ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। হতাহত আর্ত মানুষের আহাজারিতে সেখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। একে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। দেশের সড়কপথে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। খালে পানি না থাকা এবং মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধারকাজে নেমে পড়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শিদের বরাতে জানা যায়। তবে কোনো বৃষ্টি-বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ট্রেনের নিরাপদ রুটে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। সড়কপথে যানজট, দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বাহন হিসেবেই মানুষ রেলে ভ্রমনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কুলাউড়ার এই দুর্ঘটনা রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে নতুন সন্দেহের জন্ম দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে রেলে ছোটখাট দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কুলাউড়া ট্রাজেডি রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এমন সময় এই দুর্ঘটনা সংঘটিত হল, যখন দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষ রেলপথের উন্নয়ন এবং নতুন সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা আশাবাদি হয়ে উঠতে শুরু করেছে। দেশের রেলপথ, রেলইঞ্জিন ও ট্রেনের যাত্রি পরিষেবা, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে রেলের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার দায় সুষ্পষ্ট। গত সপ্তাহে কিশোরগঞ্জে এবং গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। একই সময়ে উপর্যুপরি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া এবং ভয়াবহ ট্রাজেডির পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে। কুলাউড়া ট্রেন ট্রাজেডি সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রি কল্যান সমিতি গণমাধ্যমে যে বিবৃতি দিয়েছে তা বিবেচনায় নেয়ার দাবী রাখে। রেলের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের জন্য রেল বিভাগে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, রাজনৈতিক কারণে অদক্ষ-অযোগ্যদের পদায়ন এবং সৎ, যোগ্যদের বঞ্চিত রাখার বিষয় তুলে ধরেছে যাত্রি কল্যাণ সমিতি। যে সব কারণে, যাদের গাফিলতিতে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। এই দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলে ঘটনার কারণ ও প্রতিকারের সুপারিশ হয়তো জানা যাবে। এর আগেই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রি থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্টদের এমন বক্তব্য ঘটনার প্রকৃত কারণ উৎঘাটনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ট্রেন দুর্ঘটনার পর একটি মহল শত বছরের পুরনো রেললাইন, পুরনো ব্রীজ-কালভার্ট, ত্রæটিপূর্ণ নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়কে সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। বলাবাহুল্য রেললাইন শত বছরের পুরনো হলেও তা বছরে বছরে বদলানো হয়না। তবে এর স্থায়িত্ব, সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব সময়ই নজরদারিতে রাখতে হয়। এবং সময়ে সময়ে সংস্কার করতে হয়। মূলত উপমহাদেশের পুরনো রেললাইনগুলোর বেশিরভাগই বৃটিশ আমলের। শত বছরের পুরনো রেল লাইন শত বছর ধরে একই অবস্থায় থাকে না। পুরনো-মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের কারণে রেলের গতি কমে যেতে পারে, এ কারণে বগি লাইনচ্যুত হওয়ার মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না। দেশের মানুষ এখন যাতায়াত বিড়ম্বনা ও নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং কিছুটা উদ্বিগ্ন। আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নানাবিধ সংকট, সমস্যা, যানজট, দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ ক্রমে ট্রেনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করছে। সরকার যখন চীনের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে রেলব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করছে, ঠিক তখনি রেললাইনে একের পর এক দুর্ঘটনা ও বিপত্তি দেখা দেয়ার হেতু খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের রেলওয়ের অনগ্রসরতা, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতা সড়ক পথের বাস-ট্রাক আমদানির সিন্ডিকেট, সড়ক পরিবহনে ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রের স্বার্থই রক্ষা করছে। রেলওয়ে বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ চক্রও এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকতে পারে। আমরা আশা করি গঠিত তদন্তে রেলের দুর্ঘটনা, দুর্নীতি ও পিছিয়ে পড়ার সামগ্রিক চিত্র এবং সমাধানের পথও বেরিয়ে আসবে। দোষি বা দায়ি ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে রেল মন্ত্রনালয়কে কার্যকর সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে হবে। রেলওয়েকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সুযোগ সুবিধা ও আধুনিক পরিষেবা সন্নিবেশিত করার আগে রেল বিভাগের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও লুটপাট বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ ট্রেন
আরও পড়ুন