বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নির্দিষ্ট বয়সসীমা না রেখে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলন করছে সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। আরও একটি কিংবা দু’টি কমিটি পূর্বের মতো বয়সসীমা না রেখেই ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা, ত্যাগ স্বীকারের কারণে পদ-পদবি দিয়ে সম্মান জানানোর জন্য ৯ জুন থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতারা। তবে আন্দোলন করে বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের কোন লাভ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। দলটির সিনিয়র নেতা এবং ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের জন্য গঠিত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০০ সাল ও পরবর্তী সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের দিয়েই কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা আন্দোলন করলেও তিনি আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোন ইঙ্গিত দেননি। বরং ঘোষিত যোগ্যতার ভিত্তিতে কাউন্সিল আয়োজনের জন্য কমিটির নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই বছরের কমিটি দিয়ে পাঁচ বছর ছাত্রদল পরিচালিত হওয়ার পর গত ৩ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় বিএনপি। একইসাথে ২০০০ সাল এবং এর পরবর্তী সময়ে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়াসহ তিনটি শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বলা হয়। এতোদিন ধরে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ প্রায় সবকটি সম্পাদকীয় পদেই ২০০০ সালের পূর্বে এসএসসি পাস করা ছাত্র নেতারা ছিলেন। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে এসব ছাত্র নেতা আগামী কমিটিতে অযোগ্য বিবেচিত হন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৯জুন থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন শুরু করেন তারা। ওইদিন কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় বক্তব্য ও স্লোগান দেয়ায় সমালোচিত হন। ওই দিনই বিকেল বিক্ষুব্ধদের গুলশানে ডেকে নেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। যাদেরকে নতুন কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বিক্ষুব্ধদের দাবি নিয়ে তারেক রহমানের সাথে আলোচনার আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করবে বিক্ষুব্ধরা। দাবি আদায়ে এদিন আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না।
এদিকে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ইতোমধ্যে নানাভাবেই তারা আন্দোলনকারীদের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। এমনকি এই আন্দোলনের পেছনে যেসব সাবেক ছাত্র নেতার ইন্ধন রয়েছে তাদেরকেও সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের আন্দোলনের বিষয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারেক রহমান। গত ১৫ জুন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্কাইপিতে যুক্ত হন তিনি। এসময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে ভেতরে রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করে দিনভর বিক্ষোভ করার কারনে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে চরম ক্ষুব্ধ হন তিনি। স্থায়ী কমিটির নেতাদের তিনি বলে দিয়েছেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই নিয়ে কাজ করছেন। তারাই সমাধান করবেন। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ছাত্রদলের এই আন্দোলনের পেছনে সাবেক ছাত্রনেতাদের দু’তিনজনের ইন্ধন রয়েছেন বলেও জানতে পেরেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারা এই আন্দোলনকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চান। এদেরকে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অন্যত্থায় বহিষ্কারেরও হুমকি দেয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও একজন সিনিয়র নেতা জানান, আন্দোলনরত বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের বেশিরভাগই ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করা। যাদের বয়স ইতোমধ্যে অন্তত:পক্ষে ৩৯ থেকে ৪৩ বছর বয়স। বয়সের কারণে তারেক রহমান বিলুপ্ত কমিটির নেতাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল এমনকি বিএনপিতে পুনর্বাসন করার চিন্তা করছেন। অন্যদিকে ছাত্রদলকে ক্রমান্বয়ে নিয়মিত ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে চান। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এবার ২০০০ সালে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী দিয়ে কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যারা ছাত্র নয়, তাদের ছাত্র রাজনীতি করা উচিত নয়। ছাত্র রাজনীতির পরিসমাপ্তি আছে। এরপর তারা অন্য রাজনীতি বা জাতীয় রাজনীতিতে আসে। যদি আমরা পণ করি আজীবন ছাত্রদল করব সেই ভাবনা সঠিক নয়। আমি হরতালের কারণে সময়মতো চাকরির দরখাস্ত দিতে পারিনি- এটা কেউ শুনবে? তবে যারা ছাত্র নেই তারা রাজনীতি করতে চাইলে দল শতভাগ সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, যারা দীর্ঘিদিন ছাত্র রাজনীতি করেছে তাদের সুযোগ আছে রাজনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার। তাছাড়া ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতি করবে এটা সাধারণ মানুষের ইচ্ছা। যারা ছাত্র নয়, তারা ছাত্র রাজনীতি করলে মানুষ সমালোচনা করে। যাদের যেখানে মানায় তাদের সেখানে থাকা উচিত। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে এটা তারেক রহমানের কথা।
এদিকে ঘোষিত যোগ্যতা অনুযায়ি নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য কাজ করছে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটি। জানা গেছে, কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে ছাত্রদলের ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ভোটার হিসেবে উল্লেখ করে ২৩৪ জনের ভোটার তালিকা লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছেন। একইসাথে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও কাউন্সিল আয়োজনের সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য তার কাছে সময় চেয়েছে সার্ব কমিটি। তিনি সময় দিলেই সার্চ কমিটি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন এবং কাউন্সিলের জন্য তফসিল ঘোষণা করবেন।
তবে কাউন্সিলের প্রার্থী হওয়ার যোগ্য ছাত্র নেতারাও ইতোমধ্যে অনেকেই অন্ধকারে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিলের জন্য বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫ দিনের বেশি অতিক্রম হয়েছে। ৪৫ দিনের মধ্যে এখন এক মাসেরও কম সময় আছে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হয়নি বিএনপি এই সিদ্ধান্তেই থাকবে কিনা। এছাড়া তফসিল ঘোষণা না করায়ও দ্বিধায় রয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য গঠিত আপিল কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সময় চেয়েছি। তিনি সময় দিলেই সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে যেহেতু ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ছাত্রদের দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।