পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমনকি বাজেট বইয়ে ‘কালো টাকা’ শব্দটি ব্যবহার না করে বলা হয়েছে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’। এই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেশে কর দেয়ার আগ্রহ কমানে এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধে মানুষকে নিরুৎসাহিত করবে। কিন্তু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বলছেন, এই সুযোগ পেলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে; চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, বিদেশে টাকা পাচারের প্রবণতা কমে আসবে। বাজেট বইয়ের ভাষায় অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে বিতর্ক মতভেদ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও স্টেক হোল্ডাররা মনে করছেন এতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তবে অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশা অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহারের সুযোগ দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথ সৃষ্টি করবে। বিদেশে বিনিয়োগ বা পাচারের বদলে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা নিজ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।
জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কয়েক বছর ধরে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। দুদকের ভয়ে কালো টাকার মালিকরা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেননি। নতুন অর্থবছর শিল্প ও আবাসন খাতে কালো টাকা কতটা বিনিয়োগ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বলতে যারা বৈধপথে আয় করেছে; কিন্ত কোনো কারণে কর পরিশোধ করেননি। ওইসব অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে আমরা। এটি সুযোগ থাকলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থ পাচার কমবে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নবী চৌধুরী শাওন বলেন, বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় চাঙ্গা হবে আবাসন খাত। কারণ অনেক অপ্রদর্শিত অর্থ এখন বিনিয়োগের জন্য আসবে। বিদেশে অর্থ পাচার কমে যাবে।
সূত্র মতে, প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অর্থপাচার বন্ধ করতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় (কালো টাকা) থেকে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। একই সঙ্গে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় এবং দালান নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেটে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদনজনিত উদ্ভুত আয়কে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে আরও বলা হয়, বিদ্যমান আইনে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় এবং দালান নির্মাণে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে ‘কালো টাকা’ শব্দের ব্যবহার করেননি। তিনি ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এদিকে শিল্প ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে ওই টাকা বৈধভাবে নাকি অবৈধভাবে আয় করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তুলবে না এনবিআর। এ বিষয়ে গত শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলে বিদেশে পাচার কিংবা কর ফাঁকির সম্ভাবনা থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য যুক্তিসঙ্গত কর প্রদান করে অপ্রদর্শিত আয় রিয়েল এস্টেট, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও এই সুযোগ এক সময় ছিল।
এদিকে বৈধপথে আয় করা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বলতে যারা বৈধপথে আয় করেছে; কিন্তু কোনো কারণে কর পরিশোধ করেননি। ওইসব অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে আমরা। এটি সুযোগ থাকলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থ পাচার কমবে। তবে অবৈধ পথে আয় করা অর্থের বিনিয়োগের পক্ষে আমরা নই বলে উল্লেখ করেছেন শেখ ফজলে ফাহিম।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। গতকাল বাজেট পরবর্তী পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই ও সিএসসি’র পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জমি, ফ্ল্যাট, ইকোনমিক জোনে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এই অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারেও যেন বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেই পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট বলেও অভিহিত করা হয়।
অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কালো টাকা মূল ধারায় আনার প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও শঙ্কা আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আয়ের উৎস সম্পর্কে রাজস্ব কর্মকর্তারা কোনো প্রশ্ন না করলেও বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস দেখাতে না পারলে ব্যবস্থা নিতে পারবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই আশঙ্কার কারণেই আবাসন খাতে গত কয়েক বছর ধরে সুযোগ থাকলেও বিনিয়োগে যাননি কালো টাকার মালিকরা। প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে এনবিআর। এ ধরনের অর্থ বিনিয়োগকারীদের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এ বিষয়ে দুদকের ভূমিকা কি হবে, তা নিয়ে ভয় ও শঙ্কা আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কারণ, দুদক আইনে যেকোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়ার সুযোগ আছে। অনুসন্ধানে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান আছে। এ কিষয়ে দুদকের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, কেউ যদি রাজস্ব ফাঁকি দেয়, সেটি দেখবে এনবিআর। আর কেউ দুর্নীতি করলে কি না, তা দেখবে দুদক। এখন কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে সরকার বা এনবিআর যা-ই বলুক না কেন, এটি করতে গিয়ে কেউ যদি দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, তাহলে অবশ্যই দুদক তা দেখতে পারবে, ব্যবস্থা নিতে পারবে। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার যতই সুযোগ থাক না কেন, মানি লন্ডারিং হলে দুদক তা দেখতে পারবে। দুদকের সেই ক্ষমতা আছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কয়েক বছর ধরে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। তখনো বলা হয়েছিল যে এনবিআর থেকে টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। কিন্তু দুদক যে কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। সেই ভয়ে কালো টাকার মালিকরা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেননি। আবাসন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় প্রস্তাব করেছেন, এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আয়ের উৎস সম্পর্কে দুদক যেন জানতে না চায়। তা এখনো কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছর শিল্প ও আবাসন খাতে কালো টাকা কতটা বিনিয়োগ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নবী চৌধুরী শাওন এমপি বলেন, বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় চাঙ্গা হবে আবাসন খাত। কারণ অনেক অপ্রদর্শিত অর্থ এখন বিনিয়োগের জন্য আসবে। বিদেশে অর্থ পাচার কমে যাবে। কারণ দেশেই সুযোগ মিরছে। এতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। তিনি বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী এবং সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সকলের জন্য আবাসনের কথা বলেছেন। তাই আগের মতো দুদক বা এনবিআর আর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝামেলা করার কথা না। আমরা আশা করব, নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে শিল্প ও আবাসন খাতে যারা বিনিয়োগ করবেন, দুদক ঢালাওভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। কিন্ত কালো টাকা বা মানি লন্ড্রারিং’র কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দায় আমরা নিবো না। এক্ষেত্রে দুদক টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কালো টাকা, সাদা টাকা বলে কোনো কথা নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অর্থ পাচার বন্ধে ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। বৈধভাবে আয় করা অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আমি মনে করি।
এনবিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা সাদা হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেন নামে খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাদা হয়েছে নয় হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কালো টাকা সাদা করে এনবিআর রাজস্ব পেয়েছে এক হাজার ৫২৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে। জিএফআইর তথ্যমতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এছাড়া অর্থ পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবেই পাচার হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।