পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঈদ আর চাঁদ দেখা নিয়ে নানা কথা চলছে। রঙ্গ, ব্যঙ্গ, ক্ষোভ ঝাড়ছে জনগণ। এ নিয়ে ঈদ পরবর্তী ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক বসেছে। ১০ জুনের বৈঠকে আধুনিক যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসল সিদ্ধান্তটা কিন্ত হয়নি! তাই আগে যেমন ঈদ নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে এবারও হলো সামনেও হবে আশা করা যায়। প্রশ্ন হলো আলেম ওলামারা চাঁদ দেখবেন কেন? পাকিস্তান ও সৌদি আরবে চাঁদ দেখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়। আর আমাদের দেশে তার মতব্বরী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। পার্থক্যটা এখানেই। চাঁদের আবর্তনকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের লোকজন ভালো বুঝেন। দায়িত্বটা তাদের দেয়া হয় না কেন?।
বাংলাদেশের পূর্বে থাকা অস্ট্রেলিয়া আর পশ্চিমে থাকা সৌদি আরবসহ সকল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, বৃটেন, আমেরিকা, কানাডাতে বাংলাদেশের আগেরদিন ঈদ হয়। যে চাঁদ ৪ ঘন্টা আগে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে দেখা গেল সেটা ৪ ঘন্টা পর বাংলাদেশের আকাশে দেখা গেল না, আবার সেটা ৩ ঘন্টা পর সৌদির আকাশে দেখা গেল, আরও তিন ঘন্টা পর বৃটেনের আকাশে তারও ৪ ঘন্টা পর আমেরিকা ও কানাডার আকাশে দেখা গেল! তাহলে কি বলবো চাঁদ মামা বাংলাদেশের সাথে সমসময়ই লুকোচুরি করে রোজার ঈদের সময়?
চাঁদের লুকোচুরি সেটা না হয় হলো। এটা কিন্তু খুব লজ্জার খবর যে, আমরা জানলাম যে দেশে চাঁদ দেখার টেলিস্কোপ যন্ত্র নাই। এখন নতুন করে টেলিস্কোপ কিনতে হবে। এদেশে কেনাকাটায় ঝামেলা আছে। ধর্মীয় ইস্যুতে যেন ঘাপলা না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টরা বেশি করে খেয়াল রাখবেন।
দেশে ৪ জুন ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে তৈরি হয়ে ছিলো ধু¤্রজাল। প্রথমে সন্ধ্যায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৪৪০ হিজরি সনের শাওয়াাল মাসের চাঁদ দেশের কোথাও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছিলেন। সেমতে বৃস্পতিবার (৬ জুন) সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাত ১১টায় িেফর সরকারিভাবে বলা হয় চাঁদ দেখার খবর দিয়ে জানায় ঈদ হবে ৫ জুন। সবাই মোটামুটি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পরের দিনের রোজার জন্য। তারাবির নামাজও শেষ করেছেন দেশবাসী। অনেকে সেহেরির জন্য ভোররাতে উঠে জানতে পারেন বুধবারই ঈদ হচ্ছে। রাত এগারোটায় চাঁদ দেখা যাবার খবর কিন্তু এদেশে নতুন নয়। পাঠক নিশ্চয় মনে আছে এর আগে একবার রাত এগারোটার পর বাংলাদেশের আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছিলো। ১৯৯৯ সালে উঠেছিলো দক্ষিণবঙ্গে, ২০১৯ সালে উঠলো উত্তরবঙ্গে।
এদেশে সবই সম্ভব। চাঁদ ওঠা না ওঠাও। মেঘলা আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে কি করে আদম সন্তানেরা? চাঁদ সূর্য নিয়েতো জানি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন। যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাঁদের খোঁজ খবর নেন। এটা তাঁদের কাজ। আমাদের দেশে ওলামায়ে একরামগণ আঁকাশে চাঁদ খুঁজে বেড়ান। মেঘলা আকাশে কখনো চাঁদের দেখা পান কখনো পান না। তাঁরা চাঁদ না দেখলে কি বলতে পারেন চাঁদ দেখেছি? এটা আসলে ওনাদের কাজ নয়। কোথাও এভাবে ধর্মমন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ চাঁদ দেখা কমিটি নাই। এটাতো বিজ্ঞানের ব্যপার সেপার। এটা দেখবেন চাঁদ সূর্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাঁরা। অনেকে আবার নানা ব্যাখ্য অপব্যখ্যা দিচ্ছেন। বলছেন মুসলিমদের নিজে চোখে চাঁদ দেখতে হবে। এটা এক সময় ছিলো, মানা হয়েছে এটা ঠিক আছে। এখন বিজ্ঞানের যুগ। এখন মেঘলা আকাশে ওলামা কেরামগণ চাঁদ খুঁজে হয়রান হবেন কেন? কোরআনে যা আছে তা বিজ্ঞানে প্রমাণ হচ্ছে। আমাদের আল-কুরআন বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ধর্ম গ্রন্থ। এ গ্রন্থে চাঁদ সূর্যের যে ব্যাখ্য রয়েছে তা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পাচ্ছেন। তাইতো চাঁদে গিয়ে ফিরে এসে কারো কারো ইসলাম ধর্ম গ্রহনের নজির রয়েছে। তাই চাঁদ দেখা নিয়ে ধর্মমন্ত্রণালয় নাড়াচাড়া না করে বিজ্ঞান নিয়ে চাঁদ সূর্য নিয়ে যারা কাজ করে তাদেরকেই না হয় দায়িত্বটা দেয়া হোক।
সব সম্ভবের দেশ এ বাংলাদেশ। তাই ঘোষণার আড়াই ঘণ্টা পর ঘোষণা আসে চাঁদ দেখা গেছে তাই ঈদ বুধবার। এটা আন্দাজের বিষয় নয়। যখন চাঁদ খালি চোখে দেখা যাবে না তখন যন্ত্রপাতি দিয়েই চাঁদ দেখতে হবে। সন্ধ্যায় যে চাঁদ দেখা গেলো না তবে তা রাতে দেখা গেলো? এটা কি করে হয়? বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরব, পাকিস্থ্যান, ভারত, মলয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চাঁদ সূর্য ওঠার সময়ের পার্থক্য নির্ধারিত। ৩০ মিনিটের ব্যবধানের ভারতে, পাকিস্তানে, মালয়েশিয়ায় ঈদ হচ্ছে জানছি আমরা। সৌদিতেও ঈদ হলো। সেখানে চাঁদ দেখা না যাবার কথা নয়। আলেমরা যন্ত্রপাতি ছাড়া চাঁদ দেখবেন কি করে?
রোজা রাখার শুরুতে চাঁদ দেখা নিয়ে ধুব্রজালের সৃষ্টি হয়েছিলো। শেষেও আবার চাঁদ দেখা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিলো! চাঁদ দেখা কমিটির কাজ কি ঠিক মতো চলছে? ধর্মীয়ভাবে এই দ্বিধা দ্ব›েদ্ব কিছু বড় ধরনের সমস্যাও হয়। ও আগে দেখেছি মসজিদ থেকে এতেকাফের লোকও বাড়ি চলে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে ঈদ জামাতের খবর জানিয়ে মাইকে ঘোষণাও দেয়া হয়। এর পরিত্রাণ দরকার। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি মুসলমানরা ব্যাবহারিক জীবনে সৌরমাসের ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ধর্মজীবনে চান্দ্রমাসের ক্যালেন্ডার মেনে চলে। অর্থাৎ আকাশের চাঁদ দেখা গেলেই রোজা ভাঙতে হবে। ঈদ করতে হবে। কিন্তু চাঁদ দেখা তো সব সময় সম্ভব নয়। যেসব দেশের আকাশ মেঘাবৃত থাকবে, তারা চাঁদ দেখবে কোথা থেকে? এ জন্য সেই পাকিস্তান আমলেও রুয়তে হেলাল নামে কমিটি গঠিত হয়েছিল। তারা কোথাও চাঁদ দেখা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা দিলে অথবা চাঁদ দেখা নিয়ে সৌদি আরব থেকে কোনো ঘোষণা এলে তখন ঈদ উদ্যাপন করা হতো। এখন সে নিয়ম কেন মানা হয় না? পুরো ৩০ দিন রোজা পালন অনেক সময় হয় না। হঠাৎ হয়তো ঘোষণা এলো, অমুক জায়গায় চাঁদ দেখা গেছে। অমনি হুড়মুড় করে আমরা রোজা ভেঙে ফেলতাম। ঈদ হতো। সেটাতো অনেক আগের কথা। এখন বিশ^ এগিয়েছে। ডিজিটাল যুগে এখন চাঁদ দেখা নিয়ে এমন হবে কেন?
চাঁদ দেখা না দেখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সমন্বয়হীনতার। কেনো এই সমন্বয়হীনতা? চাঁদ দেখা নিয়ে এর আগেও বিভ্রান্তি হয়েছিলো বহুবার। তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। দেশ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, যখন বিজ্ঞানের জয়জয়কার, মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট তখন চাঁদ দেখা নিয়ে এত সংশয় থাকবে কেন? তাহলে কতোটা এগুলো বাংলাদেশ?
লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।