Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জোটের রাজনীতিতে সাফল্যের চার শর্ত এবং কিছু কথা

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৯, ১২:১১ এএম

রাজধানী থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক’র গত ২৫ অক্টোবর ২০১৮ সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছিল জোটের রাজনীতি নিয়ে। সেখানে প্রতিবেদক ১৪টি জোটের নাম দিয়েছিলেন, কোন জোটে কতটি দল তার সংখ্যা দিয়েছেন এবং জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে মোট ক’টি নিবন্ধিত দল ছিল তার উল্লেখ করেছিলেন। পার্লামেন্ট নির্বাচন এলেই জোট গঠন বা জোটের মধ্যে ভাঙাগড়া বেশি দেখা যায়, এটা সত্য। তবে সুপ্রতিষ্ঠিত জোটগুলো নির্বাচনের পরও টিকে থাকে। জোটের নামবদল হলেও বড় বড় জোটের জীবনে বিরতি এসেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটগুলো এখনো পরিবর্তিত নাম ও আকৃতিতে সসম্মানে বিদ্যমান। স্বাধীনতার আগে ও পরে, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) ভাঙনের শিকার হয়েছিল, কিন্তু ভগ্নাংশগুলো দেশের রাজনৈতিক মাটিতে টিকতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্য বৃহত্তম দল বিএনপিবিএনপিতেও দুই-একবার ভাঙনের সূত্রপাত হয়েছিল, কিন্তু কোনোমতেই সেই ভগ্নাংশ অগ্রসর হতে পারেনি। ১৯৮০-এর দশকে জন্ম নেয়া জাতীয় পার্টি একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে এবং এই মুহূর্তেও নামের মধ্যে ‘উনিশ-বিশ’ পার্থক্য নিয়ে জাতীয় পার্টির কমপক্ষে পাঁচটি অংশ আছে, কিন্তু মূল অংশই রাজনীতির ময়দানে সুপরিচিত। ১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলেরও (জাসদ) অন্তত তিনটি অংশ আছে। আসলে দলে ভাঙন আনা সহজ বা সম্ভব হলেও সেই ভগ্নাংশকে নিয়ে টিকে থাকা বা রাজনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ নয়। তাই দল ভাঙার কাজকেও কেউ ইতিবাচকভাবে দেখে না।

যাহোক, আমরা চাই ২০ দলীয় জোট শক্তিশালী থাকুক, আরো শক্তিশালী হোক এবং লক্ষ্য অর্জনে সফল হোক। সাফল্য আসবে কিছু শর্তসাপেক্ষে; সেই প্রসঙ্গে কয়েকটি বক্তব্য। আমি বা আমরা মনে করি, পৃৃথিবীর রাজনৈতিক অঙ্গনে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন এসেছে, বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন এসেছে, সাধারণভাবে এশিয়ায় এবং বিশেষভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনগুলোকে মনে রেখেই বাংলাদেশের রাজনীতি আবর্তিত হবে। আমরা মনে করি, নগদ লাভের উদ্দেশ্যেই রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয়া অনৈতিক এবং নগদ টাকা লাভের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করা অনৈতিক কাজ। আমরা মনে করি, অবস্থান পরিবর্তনের যুক্তিসঙ্গত কারণগুলো হতে পারে: নীতিগত পার্থক্য ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা। জোটের রাজনীতিতে চারটি উপাত্ত সর্বদাই প্রয়োজন হয়। যথা- সমঝোতা, ধৈর্য, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন ও ত্যাগ স্বীকার। এর যেকোনো একটিতেও ঘাটতি হলে জোটের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। যে কথাটি প্রায়ই অনুচ্চারিত থাকে, সেটি হলো- জোটের শরিকদের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক মনের মিল থাকলে হবে না, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাও থাকতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে এটাও বলতে হবে যে, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা তখনই আসে যখন একজন আরেকজনকে গভীরভাবে চেনেন, একজন আরেকজনের যোগ্যতা সম্বন্ধে অবহিত এবং একজন আরেকজনের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সুপরিচিত। এখন আমাকে বলতেই হবে যে, বাংলাদেশের প্রধান জোটগুলোর জন্ম ও কর্মক্ষেত্র কোনো না কোনো একটি প্রধান রাজনৈতিক দল কেন্দ্রিক। ২০ দলীয় জোটের জন্ম ও অস্তিত্ব বিএনপি কেন্দ্রিক। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে অনেক দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন এসেছে গত তিন-চার বছরে। যার কারণে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও আস্থা সৃষ্টি অতি ধীর গতিতে হয়েছে বা বাধাগ্রস্ত হয়েছে কিংবা হয়নি বললেও চলে। জোটের সক্রিয় সম্মানজনক অস্তিত্ব রক্ষার কাজটি কঠিন নয়, তেমনি আবার খুব সহজও নয়। অর্থাৎ জোটের সাফল্যের প্রধান শর্ত হলো সফল অস্তিত্ব। জোটের রাজনীতিতে সমঝোতা, ধৈর্য, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এবং ত্যাগ স্বীকার করা সর্বদাই প্রয়োজন হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে যতগুলো জোট ব্যর্থ হয়েছে, তার কারণ খুঁজলেই এই চারটি শর্তের একটা না একটা পাওয়া যাবে। আমি স্পষ্ট নাম নিয়ে উদাহরণগুলোর ব্যাখ্যা দিচ্ছি না। তবে উল্লেখ করে রাখি যে, আমার নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে, আমাদের দল নিয়ে আমরা মোট দুইটি জোটের সাথে পরিচিত। প্রথম জোটটির জন্ম ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের সাত-আট সপ্তাহ আগে। এই জোটটি নির্বাচনের পরে আর বেঁচে থাকেনি। বর্তমানে আমরা ২০ দলীয় জোটের শরিক।

জোটে এই মুহূর্তে আমরা যারাই আছি, পরস্পরকে চিনতে হবে, গভীরভাবে জানতে হবে। আমরা যদি একে অপরের থেকে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনো উপকার আশা করি, তাহলে প্রত্যেকটি দল পরস্পরকে চিনতে হবে, জানতে হবে, প্রত্যেকটি দলের সক্ষমতা সম্বন্ধে অবহিত হতে হবে এবং আশ্বস্ত হতে হবে। আমাদের এটাও আশ্বস্ত হতে হবে যে, আমাদের লক্ষ্য কোনটি। কারণ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশান চেয়ারপারসন কার্যালয়ে জোটের জন্মকালীন ঘোষণাপত্রে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। সেই ঘোষণাপত্রের বক্তব্যগুলোকে পুনরায় নিশ্চিত করতে হবে। গত সাত বছর পথ চলতে গিয়ে কী কী ভুল হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে, সেই ভুলগুলোর পোস্টমর্টেম করতে হবে যেন অনুরূপ ভুল আর একবারও না হয়। একটি জোটকে কোনোমতেই একটি প্যাসেঞ্জার বাস বা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন কল্পনা করা উচিত হবে না। একটি প্যাসেঞ্জার বাস এক জায়গা থেকে রওনা দেয়, পথে প্যাসেঞ্জার তোলে, প্যাসেঞ্জারেরা ঘুমায়, ঝিমায়, গল্প করে, বাসের কন্ডাক্টর প্যাসেঞ্জার তোলে ও নামায়, ড্রাইভার মসৃণভাবে হোক বা ঝাঁকি দিয়ে হোক বাস চালাতেই থাকে। প্যাসেঞ্জারেরা দেখতে থাকে গন্তব্য কখন আসবে। গন্তব্য এলে নেমে যায়। পথে যদি বাস খারাপ হয়ে যায় বা অ্যাক্সিডেন্ট করে, তখন প্যাসেঞ্জারেরা সরব হয়ে ওঠে। একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন, বাসের মতো না হলেও বাসের সাথে এর কিছু মিল আছে। ট্রেনের চালক ট্রেন চালায়। প্যাসেঞ্জারদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু ট্রেনের মূল শরিক প্যাসেঞ্জারেরা। তারা কোনো ভূমিকা না রাখলেও তাদের নিরাপত্তা এবং তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা হলো চালকের মূল চিন্তা, মূল ধ্যান ও ধারণা। রাজনৈতিক জোটের গঠন ও কর্মপদ্ধতি বাস বা ট্রেনের গঠন বা কর্মপদ্ধতি থেকে একটু ভিন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অব্যাহত ইন্টারঅ্যাকশন বা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া তথা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, মত বিনিময় ও পরামর্শ দেয়া অতি প্রয়োজনীয়। জোটের কোন দলের কোন নেতা বা কোন দলের কোন কর্মী কী অবদান রাখতে পারে সেটা যদি জানাই না থাকে, তাহলে তার অবদান রাখার ক্ষেত্রটি চিহ্নিত হবে কিভাবে? আমরা কোনোদিন ২০ দলীয় জোটে এরকম মানসিক অনুশীলন করিনি।

বর্তমানে জোটের রাজনীতি বলতে সব দিকেই লো-প্রোফাইল বা ¤্রয়িমাণ অবস্থা। সরকারি ১৪ দলীয় জোটে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকিদের অফিসিয়ালি পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজনীতির ময়দানের বিরোধী দল, বিএনপি কেন্দ্রিক ২০ দলীয় জোট বহুদিন ধরেই ¤্রয়িমাণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে এক মনস্তাত্তি¡ক উত্তাপ। উত্তাপটি হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে, বিএনপি কোনটির প্রতি বেশি আকৃষ্ট বা কোনটির প্রতি বেশি অনুগত, এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াজনিত উত্তাপ। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বা তার নেতাকর্মীরা, বিএনপির কোটি কোটি নির্যাতিত-নিপীড়িত বঞ্চিত নেতাকর্মীর অনুভূতির সাথে একাত্ম। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি বা দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা, এলডিপি জন্মের আগে বিএনপিরই নেতাকর্মী ছিলেন; অতএব এলডিপির সভাপতি এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের অনুভূতি অবশ্যই বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মীর অনুভূতির সাথে একাত্ম হওয়াই স্বাভাবিক। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম বড় বা গুরুত্বপূর্ণ শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, বিএনপির সাথে পথ চলছেন অন্ততপক্ষে ২০ বছর ধরে। এই দলটির নিজেদেরই নেতাকর্মীরা অবিশ্বাস্যরকম নির্যাতিত-নিপীড়িত। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীরা যে বিএনপির নিপীড়িত-নির্যাতিত কোটি কোটি নেতাকর্মীর অনুভূতির সাথে একাত্ম হবেন, এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এই একাত্ম হওয়ার প্রক্রিয়াটিও উভয়মুখী হওয়া বাঞ্ছনীয়।

একটি জোটের মধ্যে প্রধান শরিক যে সিদ্ধান্ত নেয়, সাধারণত অন্য শরিকেরা সেটিকে মেনে চলে বা সমর্থন দেয়। সমর্থন নীরবে হলেও দেয়। বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতা জাতীয়ভাবে পরিচিত হলেও, জোটের অন্যদের অবস্থান ভিন্ন। যথা- এলডিপি সভাপতি ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম বা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইবরাহিম বীর প্রতীকের জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ হলো, মিডিয়ার মোকাবেলা করতে হয়, টিভি টকশোতে অথবা টিভি রিপোর্টারের সামনে ইন্টারভিউতে অথবা পত্রিকার সাংবাদিকের ইন্টারভিউতে অথবা কলাম লিখে। অতএব নীরব সমর্থনের কোনো জায়গা নেই, সরব সমর্থনই একমাত্র অপশন। একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও, বন্ধুপ্রতিম একটি দেশের সিদ্ধান্ত, অন্যান্য বন্ধুদের প্রভাবান্বিত করে; বন্ধু রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক সমর্থন দেয়ার প্রশ্ন সামনে আসে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের গতিবিধি নিয়ে অনেক প্রশ্ন এখন সামনে জ্বলজ্বল করছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন; রাজনৈতিক দল বা জোটের অবস্থান স্পষ্ট করা প্রয়োজন; বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যেমন বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবের বাইরে যাওয়া মুশকিল, তেমনই একটি মাত্র দল যথা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির পক্ষেও সার্বিকভাবে দেশের রাজনীতির প্রবণতাকে উপেক্ষা করা কঠিন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন জনমুখিতা নেই বললেই চলে। সরকার বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল যে সিদ্ধান্তই নেবে, সেই সিদ্ধান্তের সুফল ও কুফল উভয়ই ভোগ করবে বাংলাদেশ নামক দেশ ও রাষ্ট্র এবং পুরো জাতি। অনুরূপভাবে, রাজনৈতিক জোটের ভেতরে প্রধান শরিক যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার সুফল বা কুফল ভোগ করবে জোটের সব দলের নেতাকর্মী এবং জোটের দলগুলোর কোটি কোটি শুভাকাক্সক্ষী। অতএব এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে কোনোমতেই ছেলেখেলায় পর্যবসিত হতে দেয়া যায় না; দেয়া মোটেও উচিত নয়। বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিবিদ বা জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা যদি এই উচিত বা অনুচিতের পার্থক্য বের করতে না পারেন বা পার্থক্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে না পারেন, তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশী প্রজন্ম, ১০ বছর বা ২০ বছর বা ২৫ বছর পরের প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। কল্যাণ পার্টি অগ্রসরমান, প্রসারমান, বর্ধিষ্ণু একটি রাজনৈতিক দল, যারা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে আজকের সময়টি বেশি সঙ্কটময়, বেশি চ্যালেঞ্জপূর্ণ, বেশি প্রশ্নবিদ্ধ, বেশি উত্তরের জন্য অপেক্ষমাণ।

এক. আমেরিকা, চীন ও ভারত- এই তিনটি দেশের প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনীতির মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান কী নিয়মে সুসংহত ও নিরাপদ করা যায়? কারণ, একবার তিমি মাছের পেটে ঢুকলে যতক্ষণ মাছ বমি না করবে, ততক্ষণ মাছের পেট থেকে আর বের হওয়া যায় না। দুই. ইরান ও সৌদি আরব পরস্পরের প্রতি বৈরী। কিন্তু ভারত, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুপ্রতীম। অতএব, ইরান ও সৌদি আরব প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কী অবস্থান হতে পারে? তিন. চীন ও ভারত পরস্পরের প্রতি বৈরী। কিন্তু কোনো না কোনো প্রশ্নে যদি চীন ও ভারত আমেরিকার বিরুদ্ধে এক হয়, তাহলে কী হতে পারে? চার. বাংলাদেশ সৌদি নেতৃত্বাধীন ইসলামী সামরিক জোটের অংশীদার। সৌদি আরব আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার বৈরিতায় বাংলাদেশের অবস্থান কী হতে পারে? পাঁচ. বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের প্রভাব দীর্ঘদিন যাবৎ অনুভূত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের ক্যারিশমেটিক প্রভাব যেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর থাকে এ জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই করছে। অপর পক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্যারিশমেটিক প্রভাব বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকে অনেক দূরে, কারণ সেই ক্যারিশমাকে জীবন্ত রাখার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চ্যালেঞ্জ হলো- নতুন ক্যারিশমা কোথায় পাব বা কিভাবে সৃষ্টি করব? ছয়. প্রবাদ আছে, ‘পুরান চালে ভাত বাড়ে’। চার দলীয় জোট বা তাদের বর্ধিত রূপ ২০ দলীয় জোট পুরনো। কিন্তু এর যদি ধার কমে যায়, তাহলে সেই ধার কিভাবে পুনরায় দিতে হবে, সেটি আলোচনা করা প্রয়োজন। সাত. যুদ্ধক্ষেত্রে শুধু সৈন্যবাহিনী থাকলে হয় না, সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্বও বা কমান্ডারদের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে, দখলদার পাকিস্তানিদের প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য বাংলাদেশের মাটিতে ছিল; কিন্তু তারা দুই দিনের হুমকি-ধমকিতেই সারেন্ডার করে; নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আজ থেকে ১৪৩৮ হিজরি বছর আগে, বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন জয়ী হয়েছিলেন, এক হাজার কাফেরের বিরুদ্ধে : উভয় পক্ষের তথা পরাজিত কাফের পক্ষে এবং বিজয়ী মুসলিম পক্ষে, নেতৃত্বের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রধান শক্তি বিএনপি, অপর ভাষায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল অন্যতম প্রধান জোট। কর্মী সংখ্যার দিক থেকে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোট প্রধান। তাহলে এই বিশাল কর্মী তথা সৈন্যবাহিনীকে কেন রাজনৈতিক রণাঙ্গনে নামানো যাচ্ছে না, এটি বিশ্লেষণ করা অতীব জরুরি। এখানে নেতৃত্বের ভূমিকা কতটুকু বা কতটুকু থাকা উচিত বা কতটুকু নেই সেটি বিশ্লেষণ করাও অতীব জরুরি।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।



 

Show all comments
  • ASIK SIKDER ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    এত ভাল তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদুল হাসান রাশদী ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    যদিও আমার কাছে মনে হচ্ছে আর্টিক্যালটি আরো অনেকটা বড় করে লিখা উচিত ছিলো। ছোট থাকার কারণে সব কিছুতেই সংক্ষিপ্ত করতে আপনি বাধ্য হয়েছেন। তবে আমিও এটা বলতে বাধ্য যে; আপনার এই লিখায় নতুন কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    এই দেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • motahar hossain ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    কেউ মন্তব্য করছেন না যে দুই প্রধান নেত্রীর পাশাপাশি হৃদ্যতাপূর্ণভাবে বসে থাকার দৃশ্যটি কতই মনোরম। এ দৃশ্য স্থায়ী হলে দেশ কত এগিয়ে যেত! বিভেদের রাজনীতি আমাদের এ কথা কী মনেও আসতে দেয় না?
    Total Reply(0) Reply
  • md.shahed ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারার কোন সুযোগ পাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Khurram Sajid ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
    জোটবদ্ধতার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে ভালোভাবেই। এবারের ভোটের লড়াই
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ জুন, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
    দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি রুপরেখা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ এরকম গবেষণামূলক একটি আলোচনা করার জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জোটের রাজনীতি
আরও পড়ুন