পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে রেকর্ড অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের দিক দিয়ে এই রেকর্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৩৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ ও পোশাক শিল্প খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আকর্ষণের মধ্য দিয়ে এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়। গত বুধবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৯-এ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের এ চিত্র উঠে এসেছে। আশা করা হচ্ছে অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০১৮ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় চার শতাংশ বেশি। গড়ে সাড়ে তিন শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি (৬৮ শতাংশ)।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পোশাক কারখানাসহ শ্রমভিত্তিক শিল্পগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এফডিআই-এর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জাপান টোবাকোর ইউনাইটেড ঢাকা টোবাকো অধিগ্রহণের বিষয়টিকেও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় কোম্পানি ঢাকা টোবাকো কেনার মাধ্যমে গত বছর ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে জাপান টোবাকো।
ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের বেশিরভাগই (৭০ থেকে ৮০ শতাংশ) হয় ভারতে। গত বছরও দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বোচ্চ ছিল। ২০১৮ সালে ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছয় শতাংশ বেড়ে ৪২০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন, যোগাযোগ ও আর্থিক সেবা খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও গত বছর দেশটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭ শতাংশ কমেছে। ২০১৮ সালে ২৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পেরেছে পাকিস্তান।
শিল্প উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিপুল অগ্রগতি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে এক হাজারেরও বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আসন্ন বছরগুলোতে গড়ে তোলার জন্য আরও অন্তত ৫০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পাইপলাইনে আছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা ২০০-এর বেশি।
অর্থনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকরা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন। তারা আশা করছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখার জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ আইন ও বিধিমালায় সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশ্বব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস-২০১৯ বা সহজে ব্যবসা করার সূচক-২০১৯ এ ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৬তম। এ সূচকটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে বা কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে বিডা। সে অনুযায়ী আইন, বিধি ও প্রক্রিয়ায় সংস্কার চলছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও এ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এত দিন বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল না। এখন সেটা নানাভাবে বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো খুব ভালো ব্যবসা করছে, উচ্চ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। জাপানের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা জেট্রোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মুনাফার সম্ভাবনা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। ব্যবসা সহজ করতে বিডা কাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল গত বছর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা অধিগ্রহণ করেছে। সে অর্থ এখনো আসেনি উল্লেখ করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮ সালে আসা বিনিয়োগগুলো ২০১৬ ও ২০১৭ সালের দিকে নিবন্ধিত। গত দুই বছরে দেশে প্রচুর বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে প্রকৃত বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মনে করেন, সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে শিগগিরই বাংলাদেশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেছেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার কাজ করছে। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচকে বাংলাদেশের যে ঘাটতি রয়েছে, তা দ্রুত পূরণের চেষ্টা চলছে। এক দরজায় সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার বাড়ছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার মজুত বেড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের ওপরে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি সহনীয়। এমনকি নির্বাচনের বছরেও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। দেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার অত্যন্ত বিনিয়োগবান্ধব। তিনি বলেন, নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য জনশক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ প্রাতিষ্ঠানিক মুনাফার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা ও বিভিন্ন উৎসাহমূলক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত ১৭টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে বিদেশিরা। বিদেশিদের মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিধিবিধান শিথিল করা আছে। মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির অবচয় সুবিধা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে বিদেশিরা। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) প্রতিষ্ঠার অনুমতি দান। এসব সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ২০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছিল। এই অর্থবছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ে এসেছে ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই নয় মাসে এফডিআই বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৪৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি।
২০১৮ সালে দেশে মোট নিট এফডিআই এসেছিল ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; যা ২০১৭ সালের তুলনায় ১৪৬ কোটি ডলার বা ৬৭.৯০ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে দেশে সরাসরি নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল ২১৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছর দেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার মধ্যে ইকুইটি মূলধন বা নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বহুজাতিক কোম্পানির পুনর্বিনিয়োগ হিসেবে এসেছে ১৩০ কোটি ৯১ লাখ ডলার। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত বছর আন্তঃকোম্পানির ঋণ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১১৮ ডলার।
নিজ দেশের বাইরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিরা অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ডুইং বিজনেস সূচক, ব্যবসার ছাড়পত্র এবং জমি ও শ্রমের সহজলভ্যতা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২১ সালে মধ্যম ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য পূরণে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। বিশেষ করে বছরে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে এক হাজার কোটি ডলার। ডুইং বিজনেস সূচকের মাধ্যমে একটি দেশে ব্যবসা করার নিয়মকানুন ও প্রক্রিয়া কতটা সহজ বা কঠিন, তার তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণসংক্রান্ত ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, ১৯০টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম। ২০১৭ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। অর্থাৎ গত বছর অবনতি হয়েছে। তবে ২০২১ সালের মধ্যে ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১০০-র নিচে আসতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এরই মধ্যে বিডায় পাইলট আকারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যেখানে মিলছে প্রায় ১৫টি সেবা। বিডা সূত্রে জানা গেছে, ডুয়িং বিজনেসে পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক ও অন্যান্য সূচকে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এজন্য বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। ফলে ইকুইটি বা নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে। আবার যারা আগে থেকে এখানে আছে তারাও উলেস্নখযোগ্য পুনর্বিনিয়োগ করছে। মোট কথা, যারা বাংলাদেশে একবার বিনিয়োগ করে, তারা আর ফেরত যেতে চায় না। এখানে রিটার্নও পাওয়া যায় বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।