পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অনির্বাচিত সরকারের উচ্চাভিলাসী ও গণবিরোধী বাজেট জনগণ প্রত্যাখান করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল বিএনপি চেয়ারর্পাসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কিছু রাখা হয়নি। এর মাধ্যমে ধনী শ্রেণিকে আরো ধনী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই বাজেট জনগণ মেনে নেয়নি। তারা সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করেছে।
সরকারের এই প্রস্তাবিত বাজেট একটি উচ্চাভিলাসী ও গণবিরোধী বাজেট। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একই ভাবে বাজেটও দিয়েছে। এটি জনগণের বিরুদ্ধে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাসী বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট বৃদ্ধি এ প্রবনতা বছর শেষে চুপসে যেতে দেখা যায়। এ বাজেট নিয়ে জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মাশাররফ হোসেন বলেন, সুবিধাবাদীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। কেনো? প্রশ্নটার উত্তর জানতে যদি আমরা একটা কেনোকে খুঁজি। ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো সেটা কেনো ২৯ তারিখ রাত্রে ডাকাতি করতে হলো কেনো? এই জনধিকৃত সরকারকে ভোটের মাধ্যমে সুযোগ পেলে জনগন তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে- এই ভয়ে ২৯ তারিখ রাতে ভোট ডাকাতি হয়েছিলো। যারা ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছে ওই গোষ্ঠির স্বার্থ দেখার জন্যই এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই বাজেট সারা বছরে সরকারের ব্যর্থতার দলিল। এর মাধ্যমে জনগণের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যখন কোনো অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়। এই সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থে বাজেট দিয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কিছু দেশে দেখবেন কিছু মানুষ নিজেরা ব্যবসা করে, তারা দেশ পরিচালনা করে, তারাই আইন প্রণয়ন করে। বাংলাদেশেও একই অবস্থা এখন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঘোষিত বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ- সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দেওয়ালে লেখা দেখা গেছে ‘সময় এখন আমাদের ঃ সময় এখন বাংলাদেশের’। আবার বছর খানেক আগে টিভির পর্দায় একটি পণ্যের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট হিসেবেও শোনা গেছে ‘সময় এখন আমাদের’। আসলে সময় এখন তাহাদের এবং একমাত্র তাহাদেরই। সেটা বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বাজেটের শিরোনাম থেকেই উন্নয়নের ‹গীত› প্রকৃষ্ট হয়ে উঠেছে। এই তথাকথিত উন্নয়নের ‹গীত› আর মানুষ শুনতে চায় না। কর আর দ্রব্যমূল্যের চাপে ভোক্তা সাধারণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। আয়-বৈষম্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি জনগণ এখন আর উন্নয়নের মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বিপুল অংকের ব্যয়ের আকাংঙ্খা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা ও নাজুক আর্থিক খাত। চলতি অর্থ বছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য কিভাবে পূরণ হয় কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে যা নেতিবাচক বলেই মনে হয়। তা ছাড়া মোট রাজস্বের মধ্যে বড় অংশ হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক আইন ২০১২ কার্যকর করা হবে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর থাকবে ৫টি। এই স্তর ভিত্তিক ভ্যাট হার অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, এই বাজেটে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। আয় ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে এবার বাজেট ঘাটতিও অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৯ -২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ঘোষিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়লো ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থ বছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেয়ার পরিকল্পনা কর হচ্ছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ রয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভুত খাত থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এটি একটি ঋণ নির্ভর বাজেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।