পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের প্রায় দেড় বছর চলছে। নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত ৭২-ঊর্ধ্ব সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের। নেই রাজপথের কোনো কর্মসূচি। এর আগে কিছু মানববন্ধন ও ঘরোয়া কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি। তাও এখন নেই। এত দিনেও রাজপথের ‘শক্ত’ কোনো কর্মসূচিতে যাননি বিএনপির হাইকমান্ড। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গিয়েছিল বিএনপি। খালেদার মুক্তি আন্দোলনের কিছুই হয়নি। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিতে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা রাজপথের ‘কঠোর’ কর্মসূচি চান। তবুও কোনো ভ্রæক্ষেপ নেই দলটির নীতি-নির্ধারকদের।
গত বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাবন্দী হন তিনি। দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য আইনি পথে হাঁটছে বিএনপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। তবে আইনি ও আন্দোলন দুটো পথ বেছে নেওয়া হলেও কোনোটি থেকে এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ফল পায়নি বিএনপি।
এর মধ্যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির ভরাডুবির পর দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন বিএনপি তাহলে কী করবে। কারাগারে থেকেই খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দেবেন না কি তাঁর মুক্তির জন্য বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে। দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে, সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপি কি খালেদা জিয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করবে। আর সেটা চাইলে, কী দিয়ে হবে সেই সমঝোতা?
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের জেল দিয়েছেন আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেন। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদন্ড দেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা রিভিশন আবেদনের রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে দেন।
দলের চেয়ারপারসন দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে, সেখানে বিএনপি বড় ধরনের কোনো জনমত তৈরি করতে পারেনি। তাদের দাবির প্রতি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বিএনপি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। মহানগর, ওয়ার্ড, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় মিলিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীর অভাব নেই। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার দিন মগবাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল ছাড়া সারা দেশের কোথাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি দলটি।
নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের আন্দোলনের সময় সহিংসতার দায় নিতে হয়েছে। এরপর দলটি আন্দোলনের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে। যে কারণে অবরোধ ও হরতালে দেখা যায়নি দলটিকে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহবান জানান। এই বিষয়টিকে সামনে এনে বিএনপি বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তারা কোনো সহিংসতা করতে চায় না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতারা প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, সেমিনার, বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করতে বৈঠক করা ছাড়া রাজপথে কোনো আন্দোলন করতে পারেননি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যেসব আইনজীবী কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রবীণ ও বিখ্যাত আইনজীবীও আছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তাঁরাও সরকারের ‘অনিচ্ছা’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘কূটকৌশল’ এসবের অভিযোগ এনেছেন এবং চেষ্টার জায়গায় ত্রুটি রেখেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ১৯ মার্চ ২০১৪ সালে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে অভিযোগ গঠনের সময় আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার একটি বিধান আছে। এ জন্য আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আবেদন করতে হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবেদন করেননি।
এদিকে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অস্ট্রিও-আর্থ্রাইটিস, টানেল সিনড্রোম, ফ্রোজেন শোল্ডার, লাম্বার স্টোনাইসিস, থাইটিকা, ক্রনিক হাইপো নিথেমিয়া ও কিডনি রোগে ভুগছেন। কয়েকটি রোগ আগে থেকেই ছিল। এগুলোর উন্নতি হয়নি। তাঁর নিয়মিত চিকিৎসা দরকার। তাঁর বয়স ৭৩-এর পথে। এ বয়সে এ রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তাঁর জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, তিনি হাঁটতে পারছেন না, কিছু ধরে রাখতেও পারছেন না। বিএনপির আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই। দলটির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিকল্পনাতেও নেই বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কথা। মাঝে মাঝে বিএনপির কিছু নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বললেও সময়ের সাথে আজ খালেদা জিয়ার কোনো খবর রাখছে না কেউ। আসলেই কী সবাই ভুলে গেল খালেদা জিয়াকে?
লেখক: প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।