Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে দেশে এমপিদের বাড়তি সুযোগ সুবিধা না পাওয়াটাই রীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:২২ পিএম

রাজনীতিবিদ হিসাবে পেশাটি হয়তো অনেক দেশেই অর্থনৈতিকভাবে বেশ সুবিধাজনক একটি ব্যাপার। কিন্তু সুইডেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারে আলাদা। এ দেশে রাজনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়, যা তাদের কাছে জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে একটি চাকরির মতো।

ফলে খুব ভালো অংকের হাতখরচ আর নানারকম বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাওয়া তো দ‚রের কথা, বরং জনগণের করের টাকা খরচের ব্যাপারে সুইডেনে অত্যন্ত কড়াকড়ি রয়েছে সংসদ সদস্যের ওপরে।
'সাধারণ নাগরিক'

‘আমরা হচ্ছি দেশের সাধারণ নাগরিক’ বলছেন প্রি-অর্নে হাকানসন, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা পাবার বিষয়টি কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা, তারা যে অবস্থায় বা যেভাবে বসবাস করছেন, সেটাকেই তুলে ধরা।’
‘আমরা শুধু এটা বলতে পারি, আমাদের সুবিধা এটাই যে, আমরা এই কাজটি করতে পারছি আর দেশ পরিচালনায় প্রভাব রাখতে পারছি,’ জানালেন হাকানসন।
সুইডেনের সংসদ সদস্যরা পাবলিক পরিবহনে বিনাম‚ল্যে যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু অনেক দেশের মতো তারা নিজের জন্য কোন গাড়ি বা চালক পান না। এমনকি সুইডেনের পার্লামেন্টের মাত্র তিনটি ভলভো এস-এইটটি আছে, যা শুধুমাত্র সরকারি অনুষ্ঠানের কাজে পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট এবং তিনজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

‘আমাদের কোন ট্যাক্সি সার্ভিস নেই,’ ব্যাখ্যা করে বলেন পার্লামেন্টের একজন কর্মকর্তা রেনে পোডকে। তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের বাড়িতে বা কাজের স্থানে আনা নেয়া করার জন্য এসব গাড়ি নয়। আসলে দেশটিতে শুধুমাত্র যে একজন রাজনীতিবিদকে সরকারিভাবে গাড়ি দেয়া হয়েছে, তিনি হলেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী।
সুইডেনের সংসদ সদস্যরা মাসে আয় করেন গড়ে ৬৯০০ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেসম্যানের মাসিক বেতনের অর্ধেক। সুইডেনের কর্মীদের গড় মাসিক আয় প্রায় ২৮০০ ডলারের মতো।
অর্থনৈতিকভাবে আকর্ষণীয়
যেসব সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকা স্টকহোমের বাইরে, তারা 'ট্রাটামেন্ট' নামের একটি বিশেষ ভাতা দাবি করতে পারেন। সেটি হচ্ছে যেকদিন তারা রাজধানীতে থাকবেন, ততদিনের জন্য একটি দৈনিক ভাতা।
কিন্তু সেটা কতো? প্রতিদিনকার জন্য প্রায় ১২ ডলার, যা দিয়ে স্টকহোমে একবেলার জন্যও খুব বিলাসী কোন খাবার কেনা যাবে না। কফি কেনার জন্যও তাদের নিজেদের খরচ দিতে হয়।
তবে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সুইডেনের সংসদ সদস্যরা কোন মজুরিও পেতেন না। তার বদলে দলের কর্মীরা এই সংসদ সদস্যদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন।
পার্লামেন্টের নথিপত্রে দেখা যায়, বেতন দেয়ার বিষয়টি এজন্য চালু করা হয়েছে যাতে কোন নাগরিকের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে না পড়ে। কিন্তু সুইডিশরা এটাও চান না যেন এই বেতন আবার তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো সুইডেনের সংসদ সদস্যরা ভর্তুকি ম‚ল্যের আবাসন পেতে পারেন। তবে শুধুমাত্র তারাই পাবেন, যারা স্টকহোমে থাকেন না।
সিঙ্গেল বেড

আর তাদের সেই থাকার জায়গাটি আহামরি কোন বিলাসবহুল স্থান নয়। প্রি-অর্নে হাকানসন বলছেন, তিনি থাকেন মাত্র ৪৬ বর্গমিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। সরকারি পরিচালনার অনেক স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের আকার মাত্র ১৬ বর্গমিটার। আর এসব ফ্ল্যাটে ওয়াশিং মেশিন বা ডিসওয়াশারের মতো আসবাবপত্রও থাকে না। আসবাব বলতে সেখানে শুধুমাত্র একজনের থাকার মতো একটি সিঙ্গেল বেড রয়েছে। কারণ জনগণের অর্থ শুধুমাত্র একজন সংসদ সদস্যের খরচের জন্য, এসব অ্যাপার্টমেন্ট একরাত থাকতে হলে তার সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের অর্থ দিতে হবে। যদি কোন সংসদ সদস্য যদি তার সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে চান, তাহলে ভাড়ার অর্ধেক তাকে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।
ভাড়ার সীমা

‘শুধুমাত্র সংসদ সদস্য ছাড়া আর কাউকে এসব অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ আমরা দেবো না, বলছেন পার্লামেন্টের কর্মকর্তা আনা অ্যাস্পেগ্রেন। সংসদ সদস্যরা চাইলে অন্য কোথাও থাকতে পারেন এবং সেটি ভাড়া নেয়ার জন্য পার্লামেন্টের একটি আবাসন তহবিল থেকে কিছুটা অনুদান নিতে পারেন। কিন্তু তার সীমা রয়েছে, প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৮২০ ডলার, যা স্টকহোমের কেন্দ্রস্থলের ভাড়ার হারের তুলনায় অত্যন্ত কম।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত আবাসনের চিত্রটি ছিল আরো করুণ। তখন সংসদ সদস্যদের জন্য ভর্তুকি ম‚ল্যের কোন আবাসন ব্যবস্থা ছিল না। তাদের তখন নিজেদের অফিসে ঘুমাতে হতো, যা ছিল মাত্র ১৫ বর্গমিটারের। ব্যক্তিগত সহকারী বা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুইডিশ সংসদ সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
বরং যে রাজনৈতিক দল থেকে এমপিরা আসেন, সেই দল একটি বিশেষ ভাতা পায়, যা দিয়ে তারা একটি কর্মী বাহিনী নিয়োগ করতে পারে, যারা সব দলের এমপিদের জন্যই কাজ করবে। সুইডেনের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে এই খরচের কড়াকড়ির ব্যাপারটি আরো কঠিন।
অনেক দলের কাছে রাজনৈতিক কর্মকাÐ তাদের ম‚ল পেশার পাশাপাশি বলে বিবেচনা করা হয়। দেশটির প্রায় ৯৪ শতাংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কোন বেতন পান না শুধুমাত্র যারা নির্বাহী কমিটিতে কাজ করেন, তারা পার্টটাইম বা ফুল-টাইম হিসাবে ভাতা নিতে পারেন।
এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে ক্রিশ্চিয়ানা এলফোর্স-জোডিন বলছেন, ‘এটা একটি স্বেচ্ছাম‚লক কাজ, যা আমরা আমাদের অতিরিক্ত সময়ে ভালো মতোই করতে পারি।’ সূত্র ঃ বিবিসি।

 



 

Show all comments
  • ash ৮ জুন, ২০১৯, ৩:৪৫ পিএম says : 0
    HAHAHHAAHAH AMADER PM, AMADER PRESIDENT , AMADER JOTO MONTRI SILO BA ASE, TADER ESHOB JENE JA KHEACHE TA BOMI KORE FELE DEWA WCHITH !! KOTHAY BANGLADESH R SWIDEN ?? LOJJA THAKA WICHITH AMADER PRESIDENT, PM, MONTRIDER ! KEMON KORE LUTE PUTE KAHCHE DESH TAKE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুইডেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ