পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন হলেই এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হবে। সেই সাথে শেষ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ একটি নির্বাচন। সংঘাত-সংঘর্ষ, জাল-জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল, আহত-নিহত হওয়ার এমন নির্বাচন এর আগে জনগণ দেখেনি। পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত যে নির্বাচন হয়েছে তাতে মোট ১১৭ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং প্রায় ৯ হাজার আহত হয়েছে। প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনার সাথে সাথে সাধারণ মানুষ হারিয়েছে বাড়ি-ঘর, বেঁচে থাকার অবলম্বন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অপরিমেয় সম্পদ। বিশ্লেষকরা বহু আগেই এ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। নির্বাচনী সংঘাতের ভয়াবহতা দেখে কেউ কেউ নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার পক্ষেও মত দেন। নির্বাচনের শুরু থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সংঘাত-সংঘর্ষ ও আহত-নিহতের ঘটনার ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন কমিশন সারাদেশে নির্বাচনের নামে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচনে মানুষ হত্যার বৈধতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ তো নির্বাচন নয়, হোলি উৎসব। এর দায় নির্বাচন কমিশনের।’ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ব্যর্থতার সব দায় কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সীমাহীন অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, অকার্যকারিতা, নির্লজ্জতা ও অনুভূতিহীনতা নিয়ে বিশিষ্টজনদের মুখ থেকে জনগণ ইতোমধ্যে অনেক নেতিবাচক কথা শুনেছেন। তাতে নির্বাচন কমিশনের কিছু যায় আসেনি। নির্বাচন কমিশন যেন পণ করে বসে আছে, ‘মারো আর ধরো পিঠে বেঁধেছি কুলো, বক আর ঝক কানে দিয়েছি তুলো।’
নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে এত নেতিবাচক সমালোচনা এর আগে আর কোনো কমিশনকে নিয়ে করতে দেখা যায়নি। এমনকি যে আজিজ কমিশন নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল, তা এ নির্বাচন কমিশনের কাছে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ নির্বাচন কমিশন দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। মানুষকে নির্বাচনের প্রতি বিমুখ করে তুলেছে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা জন্ম দিয়েছে, ‘নির্বাচন হলেই কি আর না হলেই কি! আমার ভোট তো আমি দিতে পারব না।’ এই যে নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের অনুৎসাহী করা হয়েছে, তা প্রকারন্তরে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করার শামিল। নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতেও পারছে না, আবার ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ মারামারি, হানাহানির মধ্যে প্রাণও দিতে হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন ভোটারদের কাছে এক প্রকার অভিশাপ হয়ে উপস্থিত হচ্ছে। এর মূলহোতা হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন। এই যে নির্বাচনকে একটি সংঘাতপূর্ণ ও অকার্যকর প্রক্রিয়ার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে, এর দায় কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। জনগণের কাছে এর জন্য আজ না হলেও কাল তাকে জবাবদিহি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও অসক্ষমতার বিষয়টি নতুন নয়। তার এই ব্যর্থতা এবং নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও নির্বাচনের নামে নির্বাচনহীতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার সূচনা হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই নির্বাচন এখনও দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এটি একটি বহুল বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। পরবর্তীতে পৌরসভাসহ সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে গভীর রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিপতিত করে, যার প্রতিক্রিয়া দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা দেয়। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার নির্বাচন বর্জনকারী প্রধান রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম, দমন-পীড়নের মাধ্যমে দমাতে পারলেও বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটের মধ্যে পড়ে। বিনিয়োগে চরম মন্দাভাব শুরু হয়, যা আজও চলমান। দেশি-বিদেশি স্বাভাবিক বিনিয়োগ কমতে কমতে তলানীতে এসে ঠেকেছে। এমনকি আপাত দৃষ্টিতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তাদের মধ্যে এ শঙ্কা এবং আস্থার সংকট রয়ে গেছে, যে কোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এমন অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে নতুন শিল্প-কারখানা যেমন গড়ে উঠছে না, উল্টো প্রতিষ্ঠিত অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মী ইতোমধ্যে বেকার হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিতে এক ধরনের ‘ডেডলক’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মূলে যে সুপ্ত হয়ে থাকা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, তা বোধকরি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। পর্যবেক্ষকরা এর দায় নির্বাচন কমিশনের উপরই চাপাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন যদি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে করতে পারত, তবে দেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল হতো না, অর্থনীতিও এমন বেকায়দায় পড়তো না।
নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও অকার্যকারিতা সংকটকে যে গভীর করে তুলেছে তাতে সন্দেহ নেই। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে প্রাণহানি, সম্পদ ধ্বংস, সর্বোপরি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, এর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এসব ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ও নির্বাচনী সংস্কৃতিকে নেতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দায়ে নির্বাচন কমিশনকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। নির্বাচন কমিশনের বোঝা উচিত, তাকে নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিশ্লেষকরা যে কঠোর সমালোচনা করছে, তার দৃশ্যমান ভিত্তি রয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি না করে অযথা গোয়ার্তুমি করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তার দায়িত্বহীনতার কারণে দেশে প্রকাশ্যে ও অন্তর্গতভাবে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, এ সত্য তাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন আক্ষরিক অর্থে বাস্তব পরিস্থিতি হৃদয়ঙ্গম করে যথাযথ কর্মপ্রক্রিয়া অবলম্বন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।