Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামিক ফাইন্যান্স অমুসলিমদের কাছেও এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয়

২০২১ সালে এ শিল্পের আকার হবে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

সিএনবিসি | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঐতিহ্যগত ভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই শুধু ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রাধান্য রয়েছে। কিন্তু এখন বাকি বিশ্বের বেশির ভাগই ইসলামিক ফাইন্যান্সে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ডিলজিক উপাত্ত মতে, অধিকতর সুস্থির বাজার পরিস্থিতি ও উন্নত নিয়ন্ত্রণমূলক পশ্চাৎপটের ধারণা থেকে অমুসলিম দেশগুলো কর্তৃক ইসলামি ঋণ প্রদান ২০১৭ সালে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়।

ইসলামি আর্থিক পণ্য শারিয়া বা ইসলামি আইন মেনে চলে। আর তা ঝুঁকি ও মুনাফা ভাগাভাগির নীতি ভিত্তিক। শারিয়া গ্রাহককে দেয়া ঋণের উপর সুদ গ্রহণ বন্ধ এবং অ্যালকোহল, শূকরের মাংস, পর্নোগ্রাফি ও জুয়া সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অর্থায়ন নিষিদ্ধ করেছে। ডিলজিক- এর উপাত্ত অনুযায়ী অমুসলিম দেশগুলো কর্তৃক মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বাইরে ইস্যুকৃত সার্বভৌম সুকুক বা ইসলামিক বন্ডের মূল্য ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ২.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। এটা ২০১৬ সালে দুই বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি এবং ২০১৫ সালে এক বিলিয়ন ডলারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

ইসলামি ব্যাংকিং বিশ্ব ব্যাংকিং- এর উপেক্ষিত প্রান্ত থেকে উত্থিত হয়ে বিশ্বের বিরাট অংশের ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের উৎস হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুকুক বিক্রয়কারী ঋণগ্রহীতাদের তালিকা দীর্ঘতর হয়েছে। এ খাতে প্রবেশ করা প্রথম অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর। তারপর আসে যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবার্গ ও হংকং। তারা ২০১৪ সালে তাদের প্রথম সুকুক ইস্যু করে। আফ্রিকার দেশগুলো যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও আইভরি কোস্ট আইন ও কর নীতি পরিবর্তন করে ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সুকুক ইস্যু সহজ করেছে।
বিশে^র নাম করা আর্থিক কোম্পানিগুলোও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। যেমন গোল্ডম্যান স্যাকস ও জেনারেল ইলেকট্র্ক্সি- এর জিই ক্যাপিটাল গত কয়েক বছর ধরে ইসলামিক বন্ড বিক্রি করে আসছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন কান্ট্রি গার্ডেন ও বেইজিং এন্টারপ্রাইজেস ওয়াটার গ্রুপ তাদের মালয়েশিয়ান অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যথাক্রমে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে ইসলামিক বন্ড ইস্যু করে। কোম্পানিগুলো এসব আয় দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশি^ক আর্থিক সঙ্কট সরকার ও কোম্পানিগুলোকে তাদের অর্থায়ন সুযোগকে বহুমুখী করতে উৎসাহিত করেছে। প্রচালিত ব্যাংক ব্যবস্থায় ইসলামি ফাইন্যান্সকে অধিকতর স্থিতিশীল বিকল্প হিসেবে দেখা হয়। আরো কথা, সম্পদ শ্রেণি (অ্যাসেট ক্লাস) বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

মালয়েশিয়ার ঋণ হার নির্ধারণ সংস্থা আর এ এম’র পরিচালক ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রধান রুসলেনা রামলি বলেন, টেকসই ও দায়িত্বশীল বিনিয়োগের জোরালো আবেদন ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হতে পারে।
বিশ^ব্যাংকের মতে, ইসলামিক আর্থিক পণ্যের কয়েকটি ক্যাটেগরি রয়েছে-
মুদারাবা : একজন অর্থ বিশেষজ্ঞ একজন গ্রাহককে বিশেষজ্ঞ বিনিয়োগ পরামর্শ দেন ও তারা সম্মত হারে যে কোনো মুনাফা ভাগাভাগি করে নেন।
মুশারাকা : এক বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব যাতে দুই বা আরো বেশি পক্ষ, যেমন ব্যাংক ও তার গ্রাহকরা, পুল বিনিয়োগের মুনাফা ও ক্ষতি সম্মত হারে ভাগাভাগি করে নেন।
মুরাবাহা : আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পদ ক্রয় করে, যেমন বাড়ি বা গাড়ি, এবং লাভের ভিত্তিতে কোনো গ্রাহকের কাছে তা বিক্রি করে। থোক বা কিস্তি ভিত্তিতে মূল্য পরিশোধ করা হতে পারে।
ইজারা : আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পদ ক্রয় করে এবং কোনো গ্রাহকের কাছে নির্ধারিত ভাড়ার ভিত্তিতে লিজ প্রদান করে। ব্যাংক মালিকানা বজায় রাখে তবে শেষ পর্যন্ত মালিকানা গ্রাহককে হস্তান্তর করে।
সুকুক : একটি বন্ডের মত, কিন্তু একজন সুকুক ক্রেতা লাভের জন্য বিনিয়োগকৃত অন্তর্নিহিত সম্পদের আংশিক মালিকানার অধিকারী হন।

বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরাম ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আহমদ ফুজি আবদুল রাজাক বলেন, ব্যবসায়ে অনুমানের ধরনকে নিষিদ্ধকারী শারিয়া নীতি ঋণ সঙ্কটের কারণে যখন বিশ্ব আর্থিক বাজার কম্পিত হয় তখন ইসলামিক অর্থায়ন পণ্যের কম দুর্বলতা নিশ্চিত করে। তিনি সিএনবিসিকে বলেন, যে সঙ্কটের সৃষ্টি হয় তা অত্যধিক জল্পনা-কল্পনার কারণে যা ক্ষতিকর। ইসলামিক ফাইন্যান্স এ ধরনের ফাঁদ পরিহার করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনো মুসলিম বিশ্বের বাইরের তাদের সম্পৃক্ততা বিক্ষিপ্ত। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ইসলামিক আর্থিক সম্পদের প্রধান অংশের যোগানদাতা। ডিলজিক উপাত্ত থেকে দেখা যায়, সার্বভৌম সুকুক ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১১.৮৫ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সংগ্রহ করেছে ৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার।

গত দশকে ইসলামিক আর্থিক সম্পদ বার্ষিক ১০ থেকে ১২ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। কিন্তু আইএমএফ’র মতে, তা বিশ^ আর্থিক সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ, ১ শতাংশেরও কম।

ফিচ রেটিংস বলছে, এ পথে যে প্রতিবন্ধকতা দন্ডায়মান তা হচ্ছে মানদন্ডের অভাব। বর্তমানে বিভিন্ন বিচার ব্যবস্থায় শারিয়ার বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ইসলামিক ফাইন্যান্স পণ্য কিভাবে কাঠামোবদ্ধ হয়েছে সে বিষয়েও বিভিন্নতা রয়েছে। বিতর্ক সমূহ কিভাবে নিরসন হচ্ছে এবং রিপোর্টিং মান মনিটর করার পার্থক্য জটিলতার সাথে যুক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও ইসলামী অর্থনীতি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানিগুলো বিকল্প তহবিল সূত্র ও বৃহত্তর সংখ্যক বিনিয়োগকারী অন্বেষণ করার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের মধ্যে আরো সম্প্রসারিত হয়ে এ শিল্পের আকার ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ, মেব্যাংকের গ্লোবাল ব্যাংকিং বিজনেসের প্রধান আরশাদ ইসমাইল বলেন, সুকুক মার্কেট ইস্যুয়ারদের মুসলিম ও অমুসলিম উভয় বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ও তাদের তহবিলের উৎস প্রশস্ত করার অনুমোদন দিয়েছে। সুকুক- এর অর্থায়ন ব্যয়ও প্রচলিত বন্ডের মত একই রকম। এ ধরনের লেনদেন বাস্তবায়নের জন্য এখন অধিক সংখ্যক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এ লেনদেন পণ্যের আবেদনের সাথে যুক্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ