Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোদাগাড়ী খাদ্য গুদামে সিন্ডিকেট করে কৃষক নয় ধান দিচ্ছেন শিক্ষক ও প্রভাবশালীরা

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ৮:৫২ পিএম

সারাদেশে যখন ধানের দাম আর সরাসরি কৃষকদের কাছ হতে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ের আলোচনায় দেশ সগরম ঠিক সেই সময়ে গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য গুদামে চলছে ঠিক উল্টো চিত্র। অভিযোগ উঠেছে গোদাগাড়ী পৌর সদরের আফজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার সহকারি শিক্ষক ও কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী শামসুজ্জোহা বাবু নিজেই প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করে খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করছে।

রবিবার (২ জুন ) অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে সত্যতাও মিলে যায়। গোদাগাড়ী সদর খাদ্য গুদামে গেটে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘‘ গোদাগাড়ী খাদ্য গুদাম বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে জরিমানা অথবা উভয় প্রকার শাস্তি দ্বারা দন্ডনীয়’’। আগে থেকেই সাংবাদিকের কাছেই তথ্য ছিলো দামধারী শিক্ষক ও সাংবাদিক আগেই খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৪০ টন ধান বিক্রয় করেছে। আবারও প্রায় ৩০ টন ধান দেবার জন্য গুদামের ভেতরে স্তুপ করে ঢেকে রাখা হয়েছে আছে কয়েকটি ধান বোঝায় টলিও। গুদামে ঢুকা মাত্রই সেটাও চোখে পড়লো। এয়াড়া রেলবাজার এলাকার এক প্রভাবশালী মেল মালিক ধান সিন্ডিকেটের হোতা দিয়েছেন শতাধিক মেট্রিক টন ধান বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। জমি নেই, ধান চাষ করেন না এমন কিছু প্রভাবশালী লোক অবাধে খাদ্য গুদামে ধান দিলেও প্রকৃত সাধারণ কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন।
কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, ধান ক্রয় করা হবে প্রকৃত কৃষকদের কাছে হতে এই মাইকিং শুনে গুদামের কর্মকর্তার সাথে ধান দেবার কথা বলতে আসলে সাফ জানিয়ে দেয় গোদাগাড়ী পৌরসভার বরাদ্দকৃত ধান ক্রয় করা হয়ে গেছে আর কোন সুযোগ নেই । পরবর্তিতে আসলে সেই সুযোগ করে দেব।

এসব অভিযোগে বিষয়ে খাদ্য গুদামের পরিদর্শক (ওসি এলএসডি) মির্জা জাকারিয়া বলেন, খাদ্য গুদামে উপজেলায় ৪১০ মেট্টিক টন কৃষকদের কাছ হতে ধান ক্রয়ের সুযোগ আছে এবং তা কৃষকদের কাছ হতেই কেনা হয়েছে বলে জানান। কৃষকদের অভিযোগ বিষয়ে বললে আসলে ধান ক্রয়ের পরিমাণ চেয়ে কৃষকের সংখ্যা অনেক বেশী তাই সব কৃষকের কাছে হতে ধান ক্রয় করা সম্ভব না। সরকার ক্রয়ের পরিমান বাড়ালে বেশী করে কৃষকদের নিকট হতে ধান কেনতে পারবে বলে জানান।

ধান ক্রয় যদি বন্ধই থাকে তাহলে খাদ্য গুদামের ভেতরে বিশাল ধানের বস্তার স্তুপ কেন রাখা হয়েছে কে রেখেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন কে বা কারা রেখেছে তা কিছুই জানেন বলে সাফ জানান। ধান সিন্ডিকেটের হোতা কথিত শিক্ষক ও সাংবাদিক শামসুজ্জোহা বাবুকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন বললে অভিযোগ থাকলেও তিনি এসব কিছুই জানেন না বলে জানান। জানতে চাওয়া হয় সংরক্ষিত এলাকা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ আর কে ধানের এত বড় স্তুপ রাখলো একরাত পার হলো জানেন না কেউ তাতে কোন সদুত্তর মিলে নি।

অথচ সহকারি খাদ্য পরিদর্শক মোঃ সোহেলের কাছে হতে কৃষকদের বস্তা দেবার খাতা দেখতে চাইলে ২৬-৫-২০১৯ তারিখে তার নামে ২২৫ টি বস্তা, ২৭-৫-২০১৯ তারিখে তিন দফায় ৭৫ টি করে ২২৫ টি বস্তা, পুনারয় ২৮-৫-২০১৯ তারিখে ২২৫টি, ৩০-৫-২০১৯ তারিখে দুই দাফায় ২২৫টি ও ৭টি বস্তা দেবার রেকর্ড করা আছে।

এসব বিষয়ে খাদ্য পরিদর্শক (ওসি এলএসডি) মির্জা জাকারিয়া বলেন, কৃষকদের সাথে এসে কেউ এমনটি চালাকি করে নিতে পারে সেটা আমি বলতে পারবো না। কৃষক নয় বা কোন সাংবাদিককে এমন সুযোগ দেবার প্রশ্ন আসে না। এছাড়াও আমি এখানে নতুন এসেছি পরবর্তিতে আরো সতর্কতার সহিত কৃষকদের কাছে হতেই ধান ক্রয় করবো বলে জানান।

এই শিক্ষক ও কথিত সাংবাদিক নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্মের ব্যাপক প্রমান রয়েছে। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে এ্যানড্রয়েড ফোন নিয়ে প্রবেশ হয়ে আসছি বলে উধাও হওয়া। পুকুর সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক না হয়েও তার নিজের ছবি ব্যবহার করে নিজেই সাধারণ সম্পাদক হওয়া এছাড়াও নিয়মিত স্কুলে ক্লাস না করে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে স্কুল সভাপতির নিকট হতে শোকজ খাওয়ার ঘটনা আছে। শুধু এখানেই তার অপকর্ম শেষ নয় পুলিশ,ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভগ্নিয়ে প্রভাব া বিস্তার, চেয়ারম্যান, বড় রাজনীতিবিদসহ নানান জনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেকে জাহির করে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।

এই বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিকাশ চন্দ্র বলেন, প্রকৃত কৃষক ছাড়া একক কোন ব্যক্তির ধান দেবার সুযোগ নাই। সাংবাদিক বাবুর নামে বস্তা বরাদ্দের বিষয়ে বলেন কারো নামে বস্তা দেবার সুযোগ নেই তবে খাতায় তার নাম কিভাবে আসলো সে বিষয়ে তার জানা নেই বলে মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে শামসুজ্জোহা বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অকপটেই তা স্বীকার করে বলেন, আমার একটু ভূল হয়ে গেছে একবার সংশোধনের সুযোগ দেন। খাদ্য গুদামে ধান দিয়ে কিছু টাকা লাভ হয়েছেও বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ