পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীসহ সারাদেশেই ধীরে ধীরে ডেঙ্গু জ্বর বিস্তার লাভ করছে। এখন থেকে সচেতন না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক মাসে শুধু রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৩০ জন ভর্তি হয়েছেন। এ হিসাব হাসপাতালে ভর্তির তালিকা থেকে করা হলেও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হননি। ফলে সংখ্যাটি আরও বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে এ জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ জ্বরের চিকিৎসা এখন জানা থাকায় এ থেকে পরিত্রাণের উপায় আছে। একটা সময় এ জ্বর আতঙ্ক হয়েছিল। ২০০০ সালে ঢাকায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ঐ বছর ৯৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। এ জ্বর মহাআতঙ্ক হয়ে উঠে। বিশেষ করে রাজধানীতে। এরপর থেকে তা প্রতিবছর দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। মারা যায় ২৬ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয় ২৭৬৯ জন। মারা যায় ৮ জন। অর্থাৎ বছরের পর বছর ধরে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটছে। ডেঙ্গু সাধারণত অভিজাত এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায় বেশি। কারণ ডেঙ্গু জ্বরের মূল উৎস এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ফুলের টব ও অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানি। এগুলো জমে থাকা পরিস্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো এডিশ মশা ধ্বংস করা এবং এর বিস্তার রোধ করা।
ডেঙ্গু জ্বরের পরপরই চিকুনগুনিয়া জ্বরের নাম শোনা যায়। এ জ্বর এতটাই ভয়াবহ যে সারা শরীর প্রচÐ ব্যথায় জর্জরিত হয়ে যায়। এই জ্বরেরও বাহক এডিস মশা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া এডিস মশার দুই প্রজাতি এডিস ইজিন্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। আবার মানুষের মধ্য থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। পুনরায় মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এভাবে সাইক্লিক অর্ডারে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার বিস্তার ঘটে। একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গু মশা বেশি দেখা যায় অভিজাত এলাকায়। তার অর্থ এই নয়, তা সাধারণ এলাকায়ও দেখা যাবে না। এখন সব এলাকায়ই ডেঙ্গু মশা বিস্তার লাভ করেছে। অন্যান্য মশা ময়লা পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এডিশ মসা সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গায় জমে থাকা পরিস্কার পানিতে পরিস্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সাধারণত মে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার বংশ বিস্তারের সময়। এ মৌসুমেই ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শীতের সময় তা কমে আসে। এ সময় জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক নয়। তবে ডেঙ্গু রোগীর বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঘটনা ঘটে যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হলে তা মারাত্মক হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে জ্বর কমতে সময় লাগে। সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে শরীরের দুর্বলতা সারতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর হওয়ায় এর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও প্রচুর পানি পান করতে হয়। জ্বর বেশি হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা তাপমাত্র অতিরিক্ত হলে সাপোজিটর ব্যবহার করতে হয়। বেশি দুর্বল বা পানিশূন্যতা দেখা দিলে বা নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়া উচিত। তবে ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া ঘরে রেখেই চিকিৎসা দেয়া যায়।
বর্ষা শুরু হতে বেশি দেরি নাই। এখন থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু যেভাবে বিস্তার লাভ শুরু করেছে, সচেতন না হলে তা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। তার আলমত দেখা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মশা নিধন বিশেষ করে এডিস মশার উৎস স্থল ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বছর রাজধানীর সড়ক এবং সার্বিক পরিবেশের যে শোচনীয় অবস্থা তাতে ব্যাপক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি যে হবে, তাতে সন্দেহ নেই। মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে মূল সড়কগুলো সরু গলিতে পরিণত হওয়া এবং অলিগলি থেকে শুরু করে এমন কোনো সড়ক নেই যেগুলো খোঁড়াখুড়ি করে বেহাল করা হয়নি। ফলে এবার রাজধানী বর্ষার বৃষ্টিতে নিমগ্ন হয়ে থাকতে পারে। এতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। কাজেই এখন থেকেই সকলকে সচেতন হতে হবে। যেসব স্থানে দিনের পর দিন পানি জমে থাকে সেসব স্থান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। যে এলাকায় ডেঙ্গুর মূল উৎপত্তিস্থল এবং বেশি বিস্তার ঘটে সেসব এলাকার মানুষকে সচেতন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারের পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাভাবিক চিকিৎসা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।