Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের পাঠ্যসূচি কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না-ইসলামী নেতৃবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামবিরোধী পাঠ্যসূচি শিক্ষাআইন ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ইসলাম ঐক্যআন্দোলন গতকাল বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গোলটেবিল বৈঠক করেছে। অপরদিকে সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্রঐক্য দাবি আদায়ের এ আন্দোলন জনগণকে সম্পৃক্ত করতে গতকাল গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে। এছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ গতকাল এক আলোচনা সভা করেছে। পৃথক পৃথক কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার শিক্ষানীতি শিক্ষা আইন ও পাঠ্যসূচি এদেশের ইসলামী জনতা মেনে নেবে না।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন
ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি ২০১০, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন ২০১৬ ও দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী সিলেবাসের ধ্বংসাত্মক পরিণতি পর্যালোচনা ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন ২০১৬ বাস্তবায়িত হলে দেশে ইসলামী শিক্ষা ও মুসলিম জাতিসত্তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ফোরকানিয়া মক্তব, হেফজখানা, ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন জাতীয় দ্বীনি শিক্ষার যাবতীয় চর্চা আইনত বন্ধ করা হবে। কারণ শিক্ষাআইন অনুযায়ী সরকারি অনুমোদনের বাইরে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা নির্ধারিত সিলেবাসের বাইরে কোনো বই পড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেল-জরিমানা ভোগ করতে হবে। তারা বলেন, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাইমারি শিক্ষা সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক চালু করার অর্থ দাঁড়াবে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া। অথচ বিদেশী ইংরেজি ভার্সনের স্কুলগুলোতে শুধু বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ সিলেবাসভুক্ত করার শর্তারোপ করা হয়েছে এবং ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষার বেলায়ও ছাড় দেয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের উদ্যোগে পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আমির ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব আলহাজ কাজী আবুল খায়ের, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল শওকাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরী সভাপতি হাফেজ অধ্যাপক মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হুসাইন, মহানগরী আমির মোস্তফা বশীরুল হাসান, কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আবদুল কাদির।
বক্তারা আরো বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইনে ১০ শ্রেণীর ইসলামিয়াত বা ধর্মীয় শিক্ষা বিলুপ্ত করা হয়েছে। তার ফলশ্রুতি হচ্ছে, শতকরা ৯২ জন মুসলমানের দেশের শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হবে এবং অনেকে চরম ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিক ও মুরতাদ হয়ে বের হবে। বর্তমানে সিলেবাসে হিন্দু ও নাস্তিকদের দিয়ে লেখানো হিন্দুত্ববাদী ধ্যান-ধারণার লেখা দেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ববিরোধী প্রবন্ধ ও কবিতা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
ছাত্র ঐক্যের গণস্বাক্ষর শুরু
ইসলাম ধর্মবিরোধী শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন ও পাঠ্যসূচি বাতিলের দাবিতে সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্র ঐক্য তাদের আন্দোলনে গণমানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য সামনে রেখে গতকাল থেকে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে। এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয় গতকাল বাদ আসর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে স্বাক্ষর সংগ্রহের মাধ্যমে। উদ্বোধনী সময় ছাত্র ঐক্যে নেতৃবৃন্দ উত্তর উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করে। কর্মসূচি উদ্বোধনের পর থেকে উপস্থিত মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়। অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্র ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ও ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম আল-আমীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসউদ খান, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল কাদীর এবং বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আল-আমীন।
সেক্রেটারিয়েট সদস্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের শেখ ফজলুল করীম মারুফ, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর মুহাম্মদ ওমর ফারুক, ইসলামী ছাত্র খেলাফত বাংলাদেশ-এর মুহাম্মদ আবুল হাশিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার অর্থ সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধনের সময় ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন, স্কুল-কলেজে বিদ্যমান পাঠ্যবই পাঠ্যপুস্তক বহাল থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু ঈমানহারা হয়েই গড়ে উঠবে না বরং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ৯৫ ভাগ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে এটা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। উলামা-মাশায়েখ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও বৃহত্তর তৌহিদী জনতা আপনার সরকার কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব ইসলামবিরোধী কর্মকা-ে দারুণ ক্ষুব্ধ। তাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুসলিম জাতিসত্তার পরিচিতি, ঈমান রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে অভিভাবক মহল এবং দেশবাসীকে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ঐক্য আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ
বিতর্কিত শিক্ষানীতি ২০১০ এবং শিক্ষাআইন ২০১৬ বাতিলের দাবিতে ফেনী সমিতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জয়নুল আবেদিন জুবাইর বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো পাঠ্যক্রম ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না! তিনি গতকাল শনিবার পল্টনস্থ ফেনী সমিতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেন, ৯০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমপ্রধান এই বাংলাদেশের শিক্ষানীতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলামবিদ্বেষী চক্ররা উঠেপড়ে লেগে গেছে কিভাবে এই পবিত্র ধর্ম ইসলামকে বাংলার জমিন থেকে মুছে ফেলা যায়। এতদিন তারা অনলাইনে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে, ফেসবুক টুইটারের মাধ্যমে অযাচিত নোংরামির মাধ্যমে আমদের ইসলাম ধর্মকে কুলষিত করতে চেয়েছিল, যা ইতোমধ্যে আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তাদের তথাকথিত ‘মুক্তমনা’র অভিপ্রায়! তারই ধারাবাহিকতায়, তাদের দোসররা জাতীয় শিক্ষানীতিতে নগ্ন হামলা চালিয়েছে। সিলেবাসে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কেন এভাবে হেয় করা হলো! ইসলাম আমাদের মূল্যবোধ শেখায়, আদব-কায়দা শেখায়, ইসলাম থেকে দূরে থাকার জন্য আজ সমাজে এত অন্যায় অবিচার চলছে। কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যবহারের অভাবে সোহাগী জাহান তনুর মতো আমাদের অসংখ্য বোন ইজ্জতহারা হচ্ছে, সমাজে মদ-মাদকের আখড়া বেড়েই চলেছে। ইসলামবিদ্বেষীরা কি এগুলা দেখে না?
এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের অর্থ স¤পাদক অ্যাডভোকেট শাহীদুল আলম রেজভী, ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা এম মনির হোসাইন। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ