পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের নাগরিক জীবনে পকেটমার, ছিনতাই-ডাকাতির বিড়ম্বনা বহু আগে থেকেই ছিল এবং এখনো আছে। সাম্প্রতিক দশকে শুরু হওয়া মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্যে ভুক্তভোগীদের সর্বস্বান্ত হওয়ার খবর প্রায়শ শোনা যায়। তবে নাগরিক জীবনের এসব ভীতিকর নিরাপত্তাহীনতায় অতি সম্প্রতি যোগ হয়েছে গাড়ি পার্টি। ভাড়ায় যাত্রি নেয়ার কথা বলে রেলস্টেশন, সদরঘাট বা আন্তনগর বাসটার্মিনাল থেকে টার্গেট করা যাত্রিদের তুলে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয়ার ঘটনা ঢাকায় অহরহ ঘটছে। কমলাপুর রেলস্টেশন, মতিঝিল, গাবতলি- সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক এমন অন্তত ১০ চক্রের কথা জানা যায়, যাদের শত শত সদস্য গাড়ি নিয়ে ছিনতাই-অপহরণের সাথে জড়িত। সাধারণ সরলপ্রাণ মানুষের সবকিছু লুটে নিয়ে মারধর করে, আহত করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। গণপরিবহনের সংকটকে পুঁজি করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাড়ি থামিয়ে ১০-২০ টাকায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রি তুলে অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদি ছিনিয়ে নিয়ে এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলে নেয়। ক্রেডিট কার্ডের টাকা তুলতে পাসওয়ার্ড আদায় করতে ভীতিকর নির্যাতনের পথ বেছে নেয়া হয়। নগদ টাকা বা মূল্যবান কিছু না থাকলে ব্যক্তির পারিবারিক অবস্থা বুঝে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল গ্রহণ করছে ভয়ংকর এই গাড়ি পার্টি। ঈদ উপলক্ষে এদের তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়।
সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে অপহরণের আতঙ্কও সাম্প্রতিক ঘটনা। রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তৎপরতা নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। আদালতের পক্ষ থেকেও রাতে সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা এবং ওয়ারেন্ট বিহিন আটকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে দেখা গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো সমাজে অনেক বেশী ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পরিচয়ে নানা অপরাধে জড়িত অপরাধিচক্রের বেশকিছু সদস্যকে আটক করতে দেখা গেছে। কিন্তু অজ্ঞান পার্টি ও গাড়ি পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। থানায় জিডি করেও ভুক্তভোগিরা কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শহরের বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে ওঁত পেতে থেকে টার্গেট ব্যক্তিদের গাড়িতে তুলে সবর্স্ব লুটে নেয়া এই চক্রকে ধরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য খুব বেশী কঠিন কাজ নয়। চিহ্নিত স্থানগুলোতে থাকা এসব গাড়ি পার্টির সদস্যদের উপর গোয়েন্দা নরজদারি বাড়িয়ে বিশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চক্রকে নির্মূল করা অসম্ভব নয়।
পানি, গ্যাস, বিদ্যুত, যানজটসহ নানাবিধ উপযোগে ঢাকায় নাগরিক বিড়ম্বনা এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ছিনতাই-চাঁদাবাজি. ফুটপাত দখল, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতায় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে গাড়ি পার্টি নতুন এক ভয়ঙ্কর উপদ্রব হয়ে উঠেছে। এই উপদ্রব রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। পবিত্র রমজান মাসেও থেমে নেই তাদের অপতৎপরতা। ঈদের বাজারে এদের তৎপরতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময়ে দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে মানুষ ঢাকায় আসেন ঈদের কেনাকাটা করতে। এসব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল দায়িত্ব। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, অভিজ্ঞতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিজস্ব ট্র্যাক রেকর্ড ব্যবহার করে এদেরকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উঠতি বয়েসী বখাটে, মাদকাসক্ত এবং বেকার তরুণরা গাড়ি পার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বলে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি এসব অপরাধের সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণগুলো বিবেচনায় রেখে সমস্যার মূলে হাত দিতে হবে। বেকারত্ব ও সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার নিগড় থেকে যুব সমাজকে মুক্ত করতে না পারলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। গাড়ি পার্টি সহ নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর হুমকি সৃষ্টিকারী চক্রের উপর বিস্তৃত নজরদারি বা গোয়েন্দাজাল বিস্তার ও জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈদে নগরবাসী এবং ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত, ঈদ কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে গাড়ি পার্টি, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামতে হবে। লোক দেখানো বা দায়সারা অভিযান কাম্য নয়। পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পর আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে বেরিয়ে আবারো একই অপরাধে লিপ্ত হওয়ার পুনরাবৃত্তি রুখতে হবে। এদের শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন সহ অন্য সব কিছুর চেয়ে মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচল ও নিরাপত্তা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।