পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। মীরসরাই ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় এই শিল্পনগরের ব্যাপ্তি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উদ্যোগে সৃজন করা হচ্ছে শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী অবকাঠামো সুবিধাসমূহ।
৩০ হাজার একর জায়গায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে শিল্পায়নের সূচনা হয়েছে। নির্মিত হবে সমুদ্র উপক‚লভাগে কন্টেইনার বন্দর। গড়ে উঠবে উপশহর। দুয়ার খুলবে বিশ্বমানের পর্যটন শিল্পের। একত্রে এসব অবকাঠামো তৈরির জন্য এলাকাটির রয়েছে এক অনন্য ভ‚-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। যা একসময় ছিল অবহেলিত।
মীরসরাই থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বঙ্গবন্ধু টানেল (কর্ণফুলী) হয়ে কক্সবাজারে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এ শিল্পনগর। এর পাশেই দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং বর্তমান রেললাইনসহ নির্মাণাধীন হাইস্পিড রেললাইন। নোয়াখালী-চট্টগ্রাম বাইপাস মহাসড়কেও মিশবে। শিল্পনগরে ধাপে ধাপে কর্মসংস্থান হবে কমপক্ষে সাত লাখ মানুষের। শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রফতানি হবে বিশে^র অনেক দেশেই।
সবকিছু মিলে মীরসরাই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ বাংলাদেশের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে অন্য এক বাংলাদেশ রূপে। শিল্পনগরকে ঘিরে মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও সোনাগাজীতে নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, সংযোগ সড়কসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং শিল্প-কারখানা, কন্টেইনার বন্দর স্থাপনের কাজ জোরদার গতিতে এগিয়ে চলেছে।
বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গত শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফসল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এখানে ৩০ হাজার একর জায়গায় শিল্পনগর কয়েক ভাগে বিভক্ত। পরিকল্পিত বাস্তবায়নের জন্য সময় প্রয়োজন। অবকাঠামো সুবিধাগুলো নিশ্চিত হলে শিল্পায়ন হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষের দিকে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে মডেল।
বেজা সূত্র জানায়, শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। শিল্পোদ্যোক্তারা একক কিংবা যৌথ উদ্যোগে গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ওষুধ, টেক্সটাইল, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত খাতসমূহে বিনিয়োগ এবং শিল্প-কারখানা স্থাপন করবে। আগামী ৫ বছরে তা পূর্ণতা পাবে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। শতভাগ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে বেজা সবধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পায়নে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শুধুই নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নের চেহারা পাল্টে যাবে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলার ১৮ হাজার একর এবং ফেনীর সোনাগাজীর ১২ হাজার একরসহ মোট ৩০ হাজার একর বিস্তীর্ণ জায়গায় শিল্পনগর হচ্ছে। মিনি সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগর ও উপশহর গড়ে উঠবে। পর্যায়ক্রমে ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। পাঁচ বছরের মধ্যেই শিল্পায়ন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মীরসরাই থেকে মেরিন ড্রাইভে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি পর্যন্ত হবে শিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চল।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর হিসেবে এটি গড়ে উঠছে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করছে। তাদের সানসেট শিল্প-কারখানা স্থাপন করবে। এখান থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। তাছাড়া এ শিল্পনগরকে ঘিরে একটি বন্দর নির্মিত হচ্ছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই এখানে ব্যাপক বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হবে।
দেশের প্রধান বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ‘বিনিয়োগে খরা’ এবং বিনিয়োগের জন্য ‘শিল্প প্লটের অভাব’- এই দুটি হতাশার কথা উচ্চারিত হয় দীর্ঘদিন। শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা কোথাও খালি না থাকায় চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি এবং চট্টগ্রামের বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ শিল্প প্লট সঙ্কট নিরসনে দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মীরসরাইতে খালি ও সুবিধাজনক জায়গায় শিল্প জোন স্থাপনের দাবি জানান।
এ প্রেক্ষাপটে শিল্প-কারখানা ব্যবসায়-বাণিজ্যের সর্ববৃহৎ ঠিকানা হিসেবেই গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। পাঁচ বছর আগে প্রকল্প এলাকা মীরসরাই উপক‚লে প্রায় ২০ হাজার একর চরের জমি চিহ্নিত করেই শুরু হয় অবাকাঠামো উন্নয়ন। গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মীরসরাই-সীতাকুন্ড-সোনাগাজী এ তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে’র ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজ এবং শেখ হাসিনা সরণীর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়।
গত ২২ এপ্রিল বেজা’র আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের চলমান কাজের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন। এদিকে শিল্পনগরে চীনা বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তায় জুঝাউ জিনইয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের কারখানার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পথে।
চীনা কারখানাটি আগামী জুলাই মাসে উৎপাদনে যাচ্ছে। শিল্পনগরে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় এটিই হবে প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১০ একর জমির উপর নির্মিত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হবে ৮০ কোটি ডলারেরও বেশি। কানাডায় গোল্ড মাইনিং কেমিক্যাল রফতানির জন্য এখানে উৎপাদিত হবে লেড নাইট্রেট। আগামী তিন বছর রাসায়নিক পণ্য রফতানিতে কানাডার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী করে ভ‚মির অবকাঠামো ঢেলে সাজানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৫০ একর জমির ওপর শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বেপজাকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ’র পরিকল্পিত গার্মেন্টস ভিলেজ বা পার্ক নির্মাণের জন্য ৫০০ একর জমি বরাদ্দের বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জাপানের নিপ্পন স্টিল, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, চীনের জিনদুন গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমোদিত ১০টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এখানে ১১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করবে। বিনিয়োগকারীরা এককালীন মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে জমির ইজারা নেবে। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৯৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ডলার।
বিনিয়োগকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, সামিট অ্যালায়েন্স লজিস্টিকস, মাহিন ডিজাইন এটিকেট (বিডি) লি., আরেফিন এন্টারপ্রাইজ, সানজি টেক্সটাইল মিলস, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইওনমেটাল ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বার্জার পেইন্টস (বিডি) লি.।
শিল্পনগরের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য সুরক্ষায় ১০০ একর করে ২০০ একর জায়গায় ‘শেখ হাসিনা সরোবর’ নামে দুটি জলাধার বা হ্রদ সৃজন করা হচ্ছে। বড়তাকিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পর্যন্ত চার লেনবিশিষ্ট ২৯ কিলোমিটার নির্মাণাধীন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা সরণি’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।