নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সালটি ১৯৯৮। মাস মে, তারিখ ১৭। ভারতের হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। কোকা-কোলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথম ওয়ানডে জয়। মাঝে পেরিয়ে গেছে ২১টি বছর। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এশিয়া কাপ ও ত্রিদেশীয় সিরিজ মিলিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ছয়বার ফাইনাল খেলেও কোনো শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের।
সব মিলিয়ে সপ্তম ফাইনালে এসে সেই ‘লাকি’র দেখা পেতে বাংলাদেশ যখন উন্মুখ ঠিক তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ালো বৃষ্টি। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) তিন পরস্ত ভারী বর্ষণে ম্যাচ বন্ধ। রিপোর্ট বলছে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) মধ্যেও যদি খেলা মাঠে গড়ায় তাহলে ২০ ওভারের ম্যাচ দিয়েও হতে পারে শিরোপা নিষ্পত্তি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লক্ষ্য হতে পারে ২০৩! তবে প্রশ্ন থাকবে, বিশ্বকাপের আগে ভেজা আউটফিল্ডে খেলোয়াড়দের ইনজুরির ঝুঁকি নেবে কি না দুই দল!
তবে তার আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুটা আঁটসাঁটও হলেও শেই হোপ আর সুনিল আমব্রিস সতর্ক থাকার পর শুরু করেন তাÐব। তাতে তরতরিয়ে বাড়ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান। প্রথম ৫ ওভারে যেখানে উঠল ১৫, সেখানে ২০.১ ওভারে ১৩১ রান! দুই থিতু হওয়া ওপেনার হোপ ৫৬ বলে ৬৮ এবং আমব্রিস ৬৫ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। যেভাবে এগুচ্ছিলেন তাতে রানপাহাড়ের সম্ভাবনাই জাগছিল ম্যালাহাইডে।
ওয়ানডেতে এটি ছিল বাংলাদেশের পঞ্চম ফাইনাল, দুটি আছে টি-টোয়েন্টিতে। এর আগে বাংলাদেশ হেরেছে সবকটি ফাইনাল। হারের ধরনও ছিল বেদনায় মাখা। তিনটি ফাইনালে শেষ বলে হেরেছে বাংলদেশ, দুটিতে হেরেছে শেষের আগের ওভারে। বারবার তাই হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে গেছে শিরোপা।
ছয় ফাইনাল হারের পাঁচটিতেই ছিলেন মাশরাফি, নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনটিতে। নাগালে পেয়েও হারিয়ে ফেলার হতাশায় মুষরে পড়ার যাতনা তার চাইতে আর কে ভালো বোঝে! তবে এবার সেই আক্ষেপ ঘুঁচেছে। সেই মে মাসের ১৭ তারিখেই প্রথম কোন সিরিজের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলো বাংলাদেশ।
ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই এই ম্যাচটি জয়ের লক্ষণ পক্ষে ছিল বাংলাদেশের! প্রথমত, এই প্রথম উপমহাদেশের বাইরের কোনো দলের বিপক্ষে ফাইনাল। আগের ছয় ফাইনালের তিনটিতে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, দুটিতে শ্রীলঙ্কা ও একটিতে পাকিস্তান। দ্বিতীয়ত, সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচেই টসভাগ্য বিপক্ষে গিয়েছে মাশরাফির। এদিন ঠিকই জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মেঘলা আকাশ দেখে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল বাংলাদেশ।
ফাইনাল জুজু কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ, ভাগ্য ফিরবে লাকি সেভেনে। এমনটাই বিশ্বাস ছিল সবার। এ বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন ক্রিকেটাররাই। বিশ্বকাপের ‘প্রস্তুতির মঞ্চ’ হিসেবে আয়ারল্যান্ডের এই ত্রিদেশীয় সিরিজে এই ম্যাচের আগপর্যন্ত অপরাজিত মাশরাফির দল। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সময়টা দারুণ কাটছে বাংলাদেশের। সবশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জিতেছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দেশের মাটিতে জিতেছে সবশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজ। সেই দাপট ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল মাশরাফির দল।
ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রাথমিক পর্বের দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ ও ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। পরেরটিতে সফরকারীরা জেতে ৬ উইকেটে।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইরিশদের ১৯৬ রানে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে পরের দেখায় নিজেদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতে ৫ উইকেটে। মোদ্দাকথা, তিন ম্যাচেই অলআউট ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা।
ব্যাটসম্যানরা তো বটেই ম্যাচের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ে এসেছে নতুন পেসার আবু জায়েদ রাহী। অভিষেকে ¤øান থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই ছড়িয়েছেন আলো, তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট। বিশ্ব মঞ্চে যাবার আগে ফিরে পাওয়া গেছে ‘হারিয়ে যাওয়া’ সেই আগের মুস্তাফিজুর রহমানকেও।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বকাপের যাবার আগে আত্মবিশ্বাসী এক দলকেই দেখল বিশ্ব। যদি এ অবস্থায় ম্যাচটি বাতিল হয়, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় না পেয়েও চ্যাম্পিয়ন হওয়া মুছে দিয়েছে সকল ব্যর্থতার কালিমা। যদি সাত নম্বর ফাইনালে এসে কাটে ফাইনাল জুজু। যদি ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বোর্ডের সামনে গগনবিদারী চিৎকারের অভিজ্ঞতা পায় দল। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহরা ছুঁয়ে দেখেন রূপালি ট্রফি। তবে ডাবলিনেই নতুন করে লেখা হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।
স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ফাইনাল
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টস : বাংলাদেশ, ডাবলিন
উইন্ডিজ ইনিংস রান বল ৪ ৬
হোপ অপরাজিত ৬৮ ৫৬ ৬ ৩
আমব্রিস অপরাজিত ৫৯ ৬৫ ৬ ০
অতিরিক্ত (লেবা ১, ও ৩) ৪
মোট (০ উইকেট, ২০.১ ওভার) ১৩১
উইকেট পতন : নেই
বোলিং : মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফউদ্দিন ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৩-০-৩৬-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ২.১-০-১৬-০, সাব্বির ২-০-১২-০।
*বৃষ্টিতে ম্যাচ তখনও বন্ধ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।