পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘টাকা কোন ব্যাপার না। তার কারণে ভাই জেলে। ভাই বলছে তাকে সরিয়ে দাও। আমরা তাকে মেরে ফেলেছি। ভাইয়ের বিপদে তার পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।’ এভাবে খুনের পক্ষে যুক্তি দেয় কিশোর শিমুল দাশ। পাশে তার আরও ছয় বন্ধু। এই সাত কিশোরকে টানা দুই দিনের অভিযানে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বর্ণনা দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম। তিনি বলেন, এরা ভয়ঙ্কর কিশোর গ্রæপের সদস্য। কারাবন্দি ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে গত মঙ্গলবার ভোরে নগরীর আগ্রাবাদ হাজি পাড়ায় রাজু আহমেদ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।
তাদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে আমেনা বেগম বলেন, কিশোর গ্রæপের গডফাদার এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছাগির হোসেন ওরফে ছোট ছাগিরকে গত ২৭ এপ্রিল অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পেছনে আরেক মাদক বিক্রেতা মফিজুর রহমানের হাত আছে বলে সন্দেহ করে সে। তার ধারণা মফিজুর রহমানই গোপনে তথ্য দিয়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতে জেলে বসে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে ছাগির। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সে কিশোর গ্যাংয়ের সহযোগিতা নেয়। খুনের একদিন আগেসহ বেশ কয়েক দফা এই কিশোর গ্রæপের কয়েকজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে ছাগিরের সাথে দেখা করে। তার নির্দেশে এবং তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি ও ছেলে ওসমান হায়দার কিরণের সহযোগিতায় তারা হত্যাকাÐ ঘটায়। তবে মফিজুর রহমানকে খুন করতে গিয়ে তারা ভুলে পাশের বাসায় থাকা নিরপরাধ রাজুকে কুপিয়ে হত্যা করে। মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে তারা এ খুন করে। গ্রেফতার কিশোরেরা ইয়াবা আসক্ত বলেও জানান আমেনা বেগম।
তিনি বলেন, ছাগির এলাকায় তার মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তারে এই কিশোরদের সহযোগিতা নিতেন। গ্রেফতার শিমুল, সিফাত ও মধুর জবাব- ‘আমরা টাকার জন্য খুন করিনি। ভাই আমাদের বিনা পয়সায় ইয়াবা দিতেন। কারাগারে দেখা করার সময় ভাই আফসোস করে বলছিলেন অনেক শখ ছিলো এবার ঈদে তোদের সবাইকে নতুন কাপড় দেব, তা আর হলো না। ভাইয়ের এমন মন খারাপ দেখে আমরা ভাইয়ের কথা মতো কাজ করেছি। তবে আসল টার্গেট মিস করেছি। তখন জানতে পারলে তাকেও খুন করতাম’।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. ফারুক উল হক বলেন, রাজু হত্যার ঘটনার ছিলো পুরোপুরিই ক্ল-লেস। তবে রাজুর দেয়া মৃত্যুকালীন জবানবন্দির (ডাইং ডিকলারেশন) সূত্র ধরে পুলিশ কিশোর গ্রæপের সদস্যদের পাকড়াও করে। গ্রেফতারের পরপরই খুনি চক্রের সদস্যরা খুনের দায় স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছোরা, চাইনিজ কুড়ালসহ আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে কিশোরদের এমন ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেন বেগম বলেন, খুনের পরিনতি কী হতে পারে না বুঝেই তারা খুনের মতো ভয়ানক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মহানগরীর অনেক এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের লাগাম টেনে ধরতে পুলিশী তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। রাত ৮টার পর কোথাও কোন কিশোর গ্রæপের আড্ডা দেখলে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব গ্যাংয়ের পেছনে বড় ভাই ও গডফাদার যারা তাদেরও ছাড়া হবে না বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) আশিকুর রহমান বলেন, গ্রেফতার সাতজনসহ এই গ্রæপের সদস্যদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তারা পেশায় কেউ হোটেল বয়, কেউ এসি ও ফ্রিজের দোকানের কর্মচারী। তবে চুলের স্টাইল আর সারা গায়ে আঁকা উল্কির কারণে তাদের আলাদা করে চেনা যায়। আগ্রাবাদ এলাকায় তারা একটি গ্রæপ গড়ে তোলে। তাদের কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে মাদক মামলায় গ্রেফতারও হয়েছে। রাজু খুনের ঘটনায় কারাগারে থাকা ছাগিরসহ অন্তত ১২ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
তাদের মধ্যে কয়েকজন বাসায় ডুকে রাজুকে চাইনিজ কুড়াল, ছোরা আর টিপ ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে। অন্যরা বাইরে পাহারা দিয়েছে। তার শোর চিৎকারে আশপাশের বাসার কেউ যাতে বের হতে না পারে সেজন্য তারা আগেই সবার বাসার দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- শিমুল দাশ (২০), তানভির হোসেন সিফাত (১৮), মোঃ সুজন ওরফে মধু (১৮), রাকিব হোসেন ওরফে শাহ রাকিব (১৮), নুর নবী (১৮), মেহেদী হাসান রুবেল (১৮), ছাগিরের পুত্র ওসমান দায়দার কিরণ (১৮) ও স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি (৩০)। ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক তদন্ত জহির হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজন খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিতে রাজি হয়েছে। নির্মম খুনের শিকার রাজু আহমেদ হাজি পাড়ার আল আমীন কলোনীর বাসিন্দা। পেশায় রিকশা চালক রাজু এলাকায় নৈশ প্রহরীর কাজও করতেন।
৪ কিশোরের জবানবন্দি
রাজু আহমেদ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে চার কিশোর। গতকাল সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বলে জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন। তারা হলো শিমুল দাশ, তানভির হোসেন ওরফে সিফাত, মো. সুজন ওরফে মধু ও মো. রাকিব হোসেন ওরফে শাহ রাকিব। চারজন মহানগর হাকিম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এতে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন চারজনই। খুনের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কিলিং মিশনের বিস্তারিত জানিয়েছেন আদালতের কাছে। অন্য আসামি মো. নুর নবী, মেহেদী হাসান রুবেল, ওসমান হায়দার কিরন ও সেলিনা আক্তার সেলি প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অর্নব বড়ুয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।