Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডেমার্কি নয় ডেমোক্র্যাসির লালন-পালন করা জরুরি

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশে ভোটের রাজনীতি বলে কিছু নেই। অন্যভাবে বলা যায়, একজন ভোটার যে তার পছন্দমতো স্বেচ্ছায় ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে, এই অধিকার এখন নেই বললেই চলে। এখন ভোট দেয়ার চিরায়ত গণতান্ত্রিক যে চরিত্র তা হারিয়ে গেছে। ভোটের সময় ভোট হচ্ছে, ভোটারের লাইনও ও ভোট দেয়ার চিত্র দেখানো হচ্ছে, অর্থাৎ একটি নির্বাচনে ভোটের যে চিত্র দেখা যায় তার সবই দেখানো হলেও অধিকাংশ মানুষই ভোট দিতে পারছে না। এমন আক্ষেপ একেবারে শ্রমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। প্রত্যেকের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে উঠেছে, এখন ভোট দেয়া অর্থহীন। তার ভোটের কোনো মূল্য থাকে না। কারণ ভোট আগেই হয়ে যায়। রাতের আঁধারে ব্যালট বাক্স ভরে যায়। ফলে যে কোনো ভোটের সময় সচেতন ভোটারদের মধ্যে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায়। অনেকে ভোট দিতে যান না। বাংলাদেশে এখন ভোট দেয়া বা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে গেছে। অমরা যদি নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ মনে করি, তবে তা কোনোভাবেই ক্যাম নয়। তবে যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা গণতন্ত্রের এই রকমটাকেই পছন্দ করেন। এর বেশি কিছু চান না। অনেকে মনে করছেন, ভোটের বা গণতন্ত্রের নতুন এ প্রক্রিয়াটা বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার চেয়েও খারাপ। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে একটা যুক্তি দেয়া যায় প্রতিপক্ষ না থাকায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে সবকিছু ঠিক আছে দেখিয়ে রাতের বেলা ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলা গণতন্ত্রের জন্য অর্ন্তঘাত বা পেছন দিক দিয়ে ছুরি বসিয়ে দেয়া বা ভেতরে রক্তক্ষরণ করিয়ে দেয়ার মতো। এটা গণতন্ত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।
দুই.
এখন যেভাবে ভোট হয় তা অভিনব এবং নতুন একটা সংস্করণের মাধ্যমে হচ্ছে। সবকিছুই আগে থেকে কমপ্লিট, কেবল ভোটাররা লাইন ধরে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির মরদেহ দেখার মতো ব্যালট বাক্সটি দেখে ভোট কেন্দ্র থেকে চলে আসবেÑএমন একটা সংস্করণে নির্বাচন হয়। নির্বাচনটি যে সুষ্ঠু হয়নি তা সবাই বুঝবে, কিন্তু প্রমাণ করতে পারবে না। তাদের বুঝতে হবে এবং শাসক দলও বোঝে দেশে ‘গণতন্ত্র আছে’ এ মেসেজটি দেশে-বিদেশে দেয়ার জন্য একটা ভোট দেখানোর নির্বাচন করা দরকার এবং দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্বাচিত দেখিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রের এ রূপটি যাদের পছন্দ নয় বা মেনে নিতে পারেন না তারা ডেমোক্রেসির বদলে ‘ডেমার্কি’ (উবসধৎপযু-অস্ট্রেলিয়ান দার্শনিক জন বার্নহেইম এই নামকরণ করেন) প্রক্রিয়াটি মেনে নিতে পারেন। এতে সান্ত¦না পেতে পারেন। ‘ডেমার্কি’ এমন একটি পদ্ধতি যাতে নির্বাচনে ‘ইলেক্ট’ হয় না, ‘সিলেক্ট’ হয়। যাকে বলা হয়, ডেমোক্রেসি উদাউট ইলেকশন অন্যভাবে ‘ইলেকশন উইদাউট ডেমোক্রেসি’। এ ধরনের নির্বাচন করা হয়, উদ্ভুত রাজনৈতিক সংকটের জরুরী সমাধান এবং প্রচলিত গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য, যেখানে ভোটারদের কোন সংশ্লিষ্টতা থাকে না। আমাদের দেশে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনটি অনেকটা এরকম ছিল। অন্যদিকে দশম জাতীয় নির্বাচনটিও এভাবেই হয়। শুধুমাত্র সাংবিধানিক বা অন্য অর্থে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার অজুহাতে এ ধরনের নির্বাচন করা হয়। গ্রিসেও এক সময় ‘ডেমার্কি’ প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধি সিলেক্ট করা হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ সালে এথেন্সে নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এ প্রক্রিয়ায় তাদেরকেই সিলেক্ট করা হতো, যারা সত্যিকার অর্থে বিশাল জনগোষ্ঠীর মত ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যারা নির্বাচিতদের চেয়ে অধিক নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ। ‘ডেমার্কি’ সিস্টেম স্বল্পমেয়াদী এবং স্থায়ী না হওয়ায়, ডেমোক্রেসির প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কালক্রমে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আধুনিক বিশ্বে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার বেশি দিন টিকে না।
ক্ষমতায় যারা যান, তারা মনে করেন, দেশটি কেবল তাদের। যেভাবে খুশি সেভাবে দেশ চালাবে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোতে ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্র উদ্ভবের আগে এলিট শ্রেণী যেভাবে নিজেদের ইচ্ছামতো দেশ চালাতো, শাসন কাজ চালানোর ক্ষেত্রে তারা সে ধারাই অবলম্বন করেন। জনগণের শাসনের খুব একটা তোয়াক্কা করেন না। এর কারণ তাদের মনোবাসনাই থাকে রাজা-বাদশাদের মতো বংশ পরম্পরায় চিরকাল তারাই ক্ষমতায় থাকবেন। ক্ষমতা থেকে যাতে নেমে যেতে না হয়, এজন্য ভিন্নমত যতই থাকুক, তা আমলে নিতে চান না। প্রয়োজনে রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে দমননীতি অবলম্বন করেন। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও, কাজ করেন উল্টো। পিপলস রুলের ধারে কাছেও ঘেঁষেন না। অথচ সবকিছুতেই জনগণ শব্দটি লাগিয়ে দেন। বলে বেড়ান জনগণ তাদের রায় দিয়েছে, জনগণ এ চায় ও চায়। এই করলে জনগণ মানবে না, ওই করলে প্রতিহত করবে। আমরা কাজ করিছ জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন ও তাদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। এরকম গালভরা বুলি প্রচার করতে থাকেন। আমাদের দেশেই শাসক দলের কাছ থেকে এ ধরনের কথা মানুষ সুদীর্ঘকাল ধরেই শুনছে। এমনকি যে স্বৈরশাসক, তার মুখ থেকেও এ ধরনের কথা বের হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলে যারা থাকেন, ক্ষমতায় যেতে না পেরে তাদের দুঃখের অন্ত থাকে না। ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের রাজনীতির এ ধারা দেখে একজন সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না, তাদের উভয়ের লক্ষ্যই ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া। ক্ষমতা থেকে ক্ষমতাসীনরা কোনভাবেই যেতে চায় না, আর বিরোধী দলগুলো ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠে। তাদের ক্ষমতার দ্বন্ধের মাঝে পড়ে থাকে জনগণ। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্র এখন এমনই। ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য থাকা স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হচ্ছে, যে জনগণের নাম ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় যেতে চায় বা যায়, ক্ষমতায় গিয়ে সেই জনগণের কোনো খবর থাকে না। উল্টো জনগণের সাথে টাইরেনিক আচরণ করা শুরু করে। তাদের শাসন এলিটদের শাসন ব্যবস্থায় রূপ লাভ করে। জনগণের কাছ থেকে ভোট নেয়ার সময় তাদের আচরণ থাকে একরকম, ক্ষমতায় গিয়ে হয়ে যায় তার বিপরীত। জনগণকে তখন জনগণ মনে করে না, প্রজা মনে করে রাজা সেজে বসে। আমাদের দেশের মানুষ প্রায় সব ধরনের শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে। সামন্ত্যযুগীয় শাসন থেকে শুরু করে স্বৈরশাসন এবং মাঝে মাঝে অপূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। তবে জনগণের বহু কাক্সিক্ষত যে গণতন্ত্র তার স্বাদ খুব কমই পেয়েছে। এ নিয়ে তারা কম আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি। দেখা যায়, যাদের নেতৃত্বে গণতন্ত্রায়ন ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করেছে, তারাই ক্ষমতায় গিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে কুণ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যতম একটি উপাদান হলো নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের শাসন কাজ পরিচালনার জন্য পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। দুঃখের বিষয়, এখন এ অবস্থাটা নেই। এখানে কথা বলার সুযোগ কম, বিরোধী রাজনীতি অনুপস্থিত, পুলিশের উপর নির্ভরশীল শাসন ব্যবস্থাÑএমন অনেক অভিযোগই রয়েছে। যে গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ যুগের পর যুগ ধরে সংগ্রাম করেছে, ক্ষয়ীষ্ণু হতে হতে এখন তা মুখের কথায় পরিণত হয়েছে।
তিন.
সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের একটা আকাল চলছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মত প্রকাশ ও অধিকার বা জনগণের শাসন বলে পরিচিত গণতন্ত্র নামক পদ্ধতিটি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রায় সব দেশেই এর দৈন্যদশা চলছে। গণতন্ত্রের অন্যতম দাবীদার যে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানেও এর অবনমন ঘটছে। দেশটি এখন আর পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের দেশ নয়। এমন অনেক দেশেই গণতন্ত্রের সূচকের অবনতি হয়েছে। শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি বা এলিট শ্রেণীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে অতি সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে খ্রীস্টপূর্ব পাঁচ শতাব্দীতে দার্শনিক ক্লিসথেনিসের উদ্ভাবিত পদ্ধতির মাধ্যমে যে গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল, তা এখন ‘হাইব্রিড’ অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। আংশিক বা খÐিত অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে ‘রুল অব দ্য পিপল’ বা জনগণের শাসন। যেখানে সমঅধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং আইনের চোখে সবাই সমান থাকবে। গণতন্ত্রের মূল চেতনা এটি। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখা যাবে, অধিকাংশ দেশেই বিভিন্ন শাসনামলে শাসন করতো একনায়কবাদীরা এবং তারা নিজেদের এলিট ও উচ্চ শ্রেণীর নাগরিক মনে করতো। এক বৃটেনই অনেক দেশ দখল করে শাসন করেছে। যারা শাসিত হতো, তাদের নিচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো। ক্ষমতাসীন স্বৈর শাসকদের দাপট এতটাই ছিল যে প্রতিবাদ দূরে থাক, সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের কোনো অধিকার ছিল না। কেউ শাসকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালে, তাকে একেবারে শূলে চড়িয়ে দেয়া হতো। প্রকৃতিগতভাবে মানুষ স্বাধীনচেতা। সে তার বিবেক-বিবেচনা এবং চেতনা দিয়ে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করতে চায়। স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং মত প্রকাশ করতে চায়। গণতন্ত্রের সূচনার আগে মানুষের এসব সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর প্রকাশ শাসকরা কোনোভাবেই অনুমোদন দিত না। ফলে মানুষকে সবসময় টাইরেনি বা নিপীড়ক শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে হতো। তবে শাসকবর্গ বা সে সময়ের সমাজের মধ্যে যে শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিল না, তা নয়। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উপলব্ধি করে, সাধারণ মানুষকে এভাবে দাবিয়ে রাখার শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে অগ্রগামী এবং সুসভ্য করে তোলা সম্ভব নয়। তারা ভিন্ন চিন্তা করলেন। চিন্তা করলেন, সাধারণ মানুষের মতের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করলে মানব সভ্যতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে। সে সময়কার সুশীল সমাজের কারো কারো চিন্তাভাবনা থেকেই উদ্ভব ঘটে ‘রুল অব দ্য পিপল’ নীতির। যাকে বলে, জনগণের শাসন ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থায় প্রত্যেক জনগণ তার মতামত মুক্তভাবে ব্যক্ত করতে পারবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা চলবে। শাসন করবে এলিট শ্রেণী, তবে তা সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে। আজকের যে গণতন্ত্র এবং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় শাসন পদ্ধতি, তার প্রথম উদ্ভব ঘটেছিল গ্রীকের এথেন্সে। এজন্য একে এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি বলে। পরবর্তীতে তা সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়। এজন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে গণতন্ত্রের প্রয়োগ একেক দেশে একেক রকম দেখা যায়। ইংল্যান্ডে একরকম। আমেরিকায় আরেক রকম। তবে গণতন্ত্রের মূল অনুরণন একইÑজনগণের কল্যাণ। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমাদের দেশের মানুষের সন্তুষ্টি ও সুখের সবচেয়ে বড় যে উপাদান গণতন্ত্র, তা মৃয়মান হয়ে পড়েছে। এই গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ খুবই কম। সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনী গণতন্ত্র উধাও হয়েছে এবং সঠিকভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনগণের অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। সংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন সব সরকারের অনুকম্পার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও আমলাতন্ত্র ব্যাপকহারে দলীয়করণ হয়েছে। সুশাসন এবং সত্যিকারের গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান মানুষের মৌলিক অধিকার দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। স্বাধীনমত প্রকাশে গণমাধ্যম অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণে মধ্যে রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্যে কাজ করছে। এছাড়া অপহরণ, গুম, খুন, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাÐ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন উন্নয়ন হচ্ছে, তবে এ উন্নয়ন মানুষের অসহায়ত্ব, নিরাপত্তাহীনতা, টানাপড়েন এবং সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে চলছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
চার.
গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনাই হচ্ছে, সমতা এবং শ্রেণী নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন যখন আমেরিকার সংবিধান রচনা করছিলেন, তখন এক মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা, ডক্টর, আমরা কি পাচ্ছি, গণতন্ত্র নাকি রাজতন্ত্র?’ ফ্র্যাঙ্কলিন জবাব দিয়েছিলেন, ‘গণতন্ত্র, যদি তোমরা তা ধরে রাখতে পারো।’ অর্থাৎ গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কেবল সংবিধানে লিপিবদ্ধ করলেই হয় না, তা মনেপ্রাণে ধারণ করে বাস্তবে প্রয়োগ এবং ক্রমাগত চর্চার মাধ্যমে ধরে রাখতে হয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র কতটা ধারণ ও পালন হচ্ছে, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিচার্য। গণতন্ত্র এক গামলা দুধের মতোই। এতে চনা ফেলে নষ্ট করার সুযোগ নেই। হয় একে পুরোপুরি নির্বাসিত করতে হবে, নয় স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। কখনোই সীমিত বা খÐিত অবস্থায় রাখা যাবে না। আমাদের জনগণ গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন দুটোই চায়। ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের তা উপলব্ধি করতে হবে। ‘সবই আমার’, ‘আমার কথামতো চলতে হবে’ এ নীতি থেকে বের হয়ে ‘সবই জনগণের’ এবং ‘জনগণের মতামতের মূল্য দিতে হবে’ এ নীতি অবলম্বন করা জরুরি। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বিরোধী দলের রাজনীতি নির্মূল ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ এবং লোক দেখানো নির্বাচনের মতো প্রবঞ্চনামূলক গণতন্ত্র থেকে বের হয়ে আসা জরুরি।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন