Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জান্নাতের লোভ দেখিয়ে শিশুদের যুদ্ধে নামাচ্ছে হুথিরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ৪:৩০ পিএম

ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিরা ‘জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এমন প্রলোভন দেখিয়ে শিশুদের সৈন্যদলে নিয়োগ করছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে যুদ্ধে মারা গেলে তারা ‘জান্নাতি’ হবে। যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম দ্য মিররের বরাতে করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আরব নিউজ।

সম্প্রতি দেশটির সরকারি বাহিনীর হাতে আটক এক হুথি শিশু যোদ্ধা জানায়, ‘তারা (হুথিরা) আমাদেরকে বলেছিল যে, যুদ্ধে নিহত হওয়ার মাধ্যমে আমারা জান্নাতে প্রবেশের চাবি লাভ করবো।’

উল্লেখ্য, আব্দুল মালিক আল-হুথির নেতৃত্বে চার বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে গৃহ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। তাদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই শিশুদেরকে সৈন্য হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতীয়তার মধ্যে ঘৃণা ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে করা আরব নিউজের বিশেষ প্রতিবেদনে আল-হুথিকে ‘ঘৃণার পূজারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, একজন ঊর্ধ্বতন হুথি সামরিক কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে স্বীকার করেন যে, ২০১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের মিলিশিয়া বাহিনীতে ১৮,০০০ শিশুকে সৈন্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে গঠিত ইয়েমেনী জোটকে প্রাক্তন এক হুথি শিশু সৈনিক জানায়, সেনাবাহিনীতে ১০ বছর বয়স থেকেই শিশুদের নেয়া হয় এবং তাদেরকে সামনের সারিতে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়। যারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের আবার আটক করা হয় এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈরুতের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক সামাহ হাদিদ বলেন, ‘হুথি বাহিনী শিশুদের পিতামাতার কাছ থেকে এবং বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের শৈশবের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এতে তাদের অনেকেই প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে।’

আহমেদ জেসার নামে এক হুতি শিশু যোদ্ধা দ্য মিররকে জানান, মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল যুদ্ধ করার জন্য। তিনি বলেন, ‘স্কুলে ক্লাস করার সময় তারা আমাদের শ্রেণী কক্ষে আসে। তারা আমাকে উঠতে দাঁড়াতে বলে এবং আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। তারা আমাকে এক সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়। কিন্তু তারপর আমরা এক বন্দুকযুদ্ধে ধরা পড়ে যাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধে আমার সমবয়সী এক বন্ধু মারা যায়। আমি তার লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার বয়স তখন ১৩ বছর। এই বয়সে সবাই বন্ধুদের সাথে খেলাধূলা ও স্কুলে পড়াশুনা করে কিন্তু আমাকে মানুষের নির্মম মৃত্যু দেখতে হয়েছে। যুদ্ধে আহত হওয়ায় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে আমি পালিয়ে আসি।’

আরেক হুথি যোদ্ধা ১২ বছর বয়সী আব্দুল হাজিজ বলেন, ‘আমার চাচা আমাকে তার সাথে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। সেখানে আমাকে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষন দেয়া হয়। এর কিছুদিন পরেই আমার চাচা মিসাইল হামলায় নিহত হন। তারা ক্যাম্পে আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে ক্যাট নামের একধরণের উদ্দীপকসহ নাম না জানা আরেকটি ড্রাগ দেয়। তারপর আমাকে বলা হয়, চাচাকে মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে। অবশেষে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’

ইয়েমেনের মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল, এই তিন বছরের মধ্যে ইরান সমর্থিত হুথি জঙ্গিরা ১০ হাজারের বেশি শিশু যুদ্ধে নিয়োগ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মধ্যপ্রাচ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ