পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে চেয়ারপার্সন কারাবন্দি, মৃত ৬ জন, দেশের বাইরে ২ জন ও অসুস্থ ৩ জন সদস্য। বাকি ৭ জন সদস্য দিয়ে বর্তমানে নীতি-নির্ধারণী কর্যক্রম চলে। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের অন্যান্য পদ-পদবিতেও প্রায় একই চিত্র। কেউ মারা গেছেন, অনেকে অসুস্থ, আর অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় দলকে গতিশীল করতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন জরুরি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। তৃণমূল পর্যায়ে অর্থাৎ অনেক জেলা-উপজেলায় নতুন কমিটি গঠন শুরু হলেও তা হঠাৎ করে থমকে যায়। বলা যায়, বর্তমানে বিএনপির সাংগঠিক পুনর্গঠন থেমে আছে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিহীন বা বলা যায় স্থবির হয়ে পড়েছে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দলের নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি রাজনৈতিক ময়দানে হাঁটছে উদ্দেশ্যহীন, এলোমেলো। দেশব্যাপি প্রচুর জনসমর্থন থাকার পরও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কোনো ইস্যুতেই কার্যকর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন তথা স্বৈরাচারী আচরণ, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও কারাভোগসহ নানা বৈরী পরিবেশ এবং নেতৃত্বে সাহসী পদক্ষেপ ও সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতায় সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠছে না এমন দাবি বিএনপির অনেক নবীন-প্রবীণ নেতার। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাদের এ দাবি কিছুটা সত্যি, তার চেয়ে সত্যি হলো- সাংগঠনিক দুর্বলতা। বিএনপির প্রচুর জনসমর্থন থাকার পরও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সরকারবিরোধী জোরালো কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ফলে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য অবশ্যই যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে সর্বস্তরে দলকে দ্রæততার সাথে ঢেলে সাজানো জরুরি। যোগ্য এবং ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যালয়নের মাধ্যমে সর্বস্তরে কমিটি গঠন করলে দল শক্তিশালী এবং গতিশীল হবে। আর এভাবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে পারলেই ভবিষ্যতে ফলপ্রসূ আন্দোলন সম্ভব।
বিএনপি সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল করে দলের কমিটি গঠন করেছিল। কাউন্সিলের পর পাঁচ শতাধিক সদস্যের এক বিশাল কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই কমিটি শুধু বাংলাদেশের নয় এটি এই উপমহাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ে বৃহৎ। এত বড় দলের এই বিশাল কেন্দ্রীয় কমিটি হতেই পারে। তবে এই পাঁচ শতাধিক সদস্যের বিশাল এই কমিটির ৫০ জন সদস্যও যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন না করে তাহলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা এরকম দুর্বল হবেই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯ সদস্য বিশিষ্ট বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম তথা স্থায়ী কমিটি রয়েছে। গত কাউন্সিলের পর এই ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। ১৯জন স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে ইতোমধ্যে মারা গেছেন, ড. আর এ গণি, মো: তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরী। এ ছাড়া ভারতে বিচারধীন এক মামলার আসামি হিসাবে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় দেড় বছর যাবৎ কারাবন্দি। পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আছেন। স্থায়ী কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এর মধ্যে জমির উদ্দিন সরকার ও রফিকুল ইসলাম মিঞা অসুস্থ। অবশিষ্ট ৭ জন সদস্য দিয়ে বর্তমানে স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম চলছে।
একই অবস্থা চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদেও। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনাম আহমেদ চৌধুরী এবং ভাইস চেয়াম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী দল ছেড়ে অন্যদলে যোগদান করেছেন। বিএনপির অনেক নেতার দাবি সরকারের চাপে তারা দল ত্যাগ করেছেন। তবে অনেকে মনে করেন ক্ষমতার লোভে তারা দলত্যাগ করেছেন। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের কেউ কেউ অসুস্থ, অনেকে মারা গেছেন, অনেকে নিষ্ক্রিয়। ভাইস চেয়ারম্যানদেরও একই অবস্থা। যুগ্ম-মহাসচিবদের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সার্বক্ষণিক দলের কেন্দ্রীয় অফিসে দলের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অন্যদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মজিবুর রহমান সারোয়ার এবং খায়রুল কবীর খোকনকে দলের কর্মসূচিতে দেখা যায়। যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি। এ ছাড়া যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী দীর্ঘদিন যাবত কারাবন্দি আছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে দু’একজনকে টিভি টকশোতে দেখা গেলেও নেতাকর্মীদের কাছে তাদের দলীয় কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। দলের অন্যান্য পদ-পদবিতে যে সব নেতারা রয়েছে তাদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই দুরাবস্থার কারণে তারা সব সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে দলকে অনেক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমনটা বর্তমানে বিএনপির ক্ষেত্রে হচ্ছে।
বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের সংসদে যোগদানের যে সিদ্ধান্ত অবশেষে তারেক রহমান দিয়েছেন তা সঠিক বলে অনেকে মনে করেন। তারা বলেন, এ সিদ্ধান্ত না নিলে দলকে অনেক বড় খেসারত দিতে হতো। অনেকে বলেন দলের আম-ছালা সবই হারানোর আশঙ্কা ছিল। এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেয়া উচিত ছিল। যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের সাথে অনেক বিষয়ে আলোচনা করে সমঝোতায়ও আসা সম্ভব হতো।
যথাসময়ে দলের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রথমেই দলের স্থায়ী কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। অর্ধেকেরও কম সদস্য নিয়ে স্থায়ী কমিটি যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য পদও দ্রুত পূরণ করতে হবে।
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তার দলের সংগ্রামী ও সাহসী নেতা। আর যে সব নেতা দল ক্ষমতায় যাওয়ার পরও সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত থেকে, সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দলের সুনাম ও সম্মান রক্ষার্তে কাজ করেন তারা হলেন প্রকৃত ত্যাগী নেতা। দল পুনর্গঠনে এই সব সাহসী ও সংগ্রামী নেতাদের যেমন প্রয়োজন তেমনি নির্লোভ-নি:স্বার্থবান ত্যাগী সিনিয়র নেতাদেরও প্রয়োজন।
বিএনপির এমনই এক প্রবীণ নেতা যিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে দলে সাথে আছেন। পদ-পদবির জন্য কখনো লালায়িত হননি। দল ক্ষমতায় থাকার সময় কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেননি। সেই প্রবীণ নেতার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলকে পুনর্গঠন করতে প্রথমে স্থায়ী কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। ভবিষ্যতে স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য মারা গেলে বা অন্য কোনো কারণে পদশূন্য হলে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে তা পূরণ করা উচিত। একইভাবে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কমিটির অন্যান্য পদও শূন্য হলে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে। গঠনতন্ত্রে এ বিষয়টি সংশোধন করা প্রয়োজন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ এ সম্পর্কে বলেন, দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি অব্যাহত আছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায় সম্মেলন হচ্ছে কমিটি হচ্ছে। খুব শিগগিরই দলের কাউন্সিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।