বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রবাসীবহুল সিলেট অঞ্চলের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সি। এদের বেশিরভাগই গড়ে ওঠেছে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই, অবৈধভাবে। এসব ট্র্র্যাভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মানবপাচার, অবৈধভাবে বিদেশ যেতে প্রলুব্ধ করা, টাকা নিয়ে বিদেশ না পাঠানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
গত শুক্রবার লিবিয়া থেকে নৌকায় চড়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যান বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ওই নৌকায় বাংলাদেশি ও মিশরীয় মিলিয়ে ৮৫ থেকে ৯০ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। ৪০-৪৫ জন বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ, তাদের লাশ উদ্ধারের আশাও ফিকে হয়ে আসছে। এদের অধিকাংশই সিলেটী। ট্রাভেলস এজেন্সি মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে ঝুঁকি নিয়ে ইতালির পথে পাঠায় তাদের।
ভূমধ্যসাগরের ওই নৌকাডুবির পর ফের আলোচনায় এসেছে মানবপাচারের বিষয়টি। ট্রাভেলস এজেন্সির নামে অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। টনক নড়ে প্রশাসনের। মানবপাচারে জড়িত অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামে সিলেটের জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচটি টিম শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সোমবার ও মঙ্গলবার (১৩ ও ১৪ মে) দু’দিনের অভিযানে ৩২ প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেলস এজেন্টস অব বাংলাদেশ-এর সিলেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, ট্রাভেলস এজেন্সি চালু করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এমন নিবন্ধন আছে সিলেটের প্রায় দুইশ’ প্রতিষ্ঠানের। তবে নিবন্ধন ছাড়াই আরও পাঁচশ’ ট্রাভেল এজেন্সি আছে সিলেটে। অবৈধভাবে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
২০১৮ সালে সিলেট নগরে এমন ৭৪টি অবৈধ এজেন্সির তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল আটাব। তবে এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে প্রায় ১৫০টি ট্রাভেল এজেন্সির। অথচ নগরীর ভেতরেই তিনশতাধিক ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে বলে জানিয়েছে আটাব।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘সিলেটে বৈধের চেয়ে অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সিই বেশি। এরা বিদেশ পাঠানোর নামে নানাভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এসব মানবপাচারকারীদের কারণে সিলেটের সাধারণ মানুষ অনেককে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপ পাঠাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেককে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সির সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় অবৈধ এজেন্সি ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়েছি।
তিনি আরোও বলেন, সরকার কোনো যাচাই বাচাই না করেই মানবপাচারকারীদের লাইসেন্স দিচ্ছে। যার ফলে সরকারের বৈধতা নিয়ে মানবপাচার করছে কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী। তাই লাইসেন্স প্রধানের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতে আরো সচেতন হতে হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার তথ্যানুযায়ী, সিলেট নগরীতে বর্তমানে বৈধ ট্রাভেলস এজেন্সির সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৫০ টি ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের প্রায় দেড়শটির মতো ট্রাভেলস এজেন্সির লাইসেন্স রয়েছে। অনেকের লাইসেন্স করা আছে কিন্তু নবায়ন করা নেই। নবায়ন না করলে এটা স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুযায়ী প্রতি মাসেই অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সি ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এইমাসে একটি দুর্ঘটনার জন্য আরও গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এজন্য ৫টি টিম গঠন করে অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো খোঁজে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মানবপাচারকারীদের ট্রাভেলস এজেন্সির লাইসেন্স প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বলতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।