পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719379483](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিন বছর আগে ভারতের প্রতি মানবিকতা দেখিয়ে বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলের আওতায় কলকাতা-আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা পথে কোনো ধরনের মাশুল ছাড়াই পরীক্ষামূলকভাবে একটি লোহার চালান যাওয়ার সুযোগ দেয়। এরপর এ পথ ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ এবং ১০ হাজার টন চালের চালান যাওয়ারও সুযোগ দেয়া হয়। এসব পরীক্ষামূলক ও মানবিক কারণে ভারতকে নৌ ট্রানজিট ব্যবহারের আগে ২০১১ সালে ভারত, নেপাল ও ভূটানকে সড়ক, রেল ও নৌপথে ট্রানজিট দিতে ট্যারিফ কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি নৌপথে পণ্যপরিবহনে টনপ্রতি ১০৫৮ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে। ভারত এই মাশুল দিতে কোনোভাবেই রাজী হয়নি। মাশুল কমানোর জন্য সে বাংলাদেশের ওপর চাপ দিতে থাকে। অবশেষে তারই জয় হলো। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøওটিএ) ভারতের দাবী মোতাবেক টনপ্রতি ১৯২ টাকা মাশুল নির্ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌ ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। গত ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এক হাজার টন ঢেউটিনের প্রথম চালান কলকাতা থেকে আগরতলায় গিয়েছে। এর ফলে ভারত যা চেয়েছে এবং যেভাবে চেয়েছে, তাই বাংলাদেশ সরকার দিয়ে দিয়েছে। নৌ ট্রানজিটের এই মাশুল পূর্ব নির্ধারিত মাশুলের চেয়ে পাঁচগুণ কম। আগের নির্ধারিত মাশুল বহাল থাকলে বাংলাদেশ এক হাজার টন পণ্য ট্রানজিটে পেত ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এখন পাবে মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই যে নৌ ট্রানজিট-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো, তা দেশের মানুষ জানে না। সরকারের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। অনেকটা গোপনে চালু হয়েছে। দুয়েকটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ না করলে হয়ত জনগণ তা সহসা জানতই না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কোর কমিটির যিনি প্রধান ছিলেন তার কাছেও ১৯২ টাকা মাশুল নির্ধারণের বিষয়টি বোধগম্য হয়নি। তিনি বলেছেন, ট্রানজিটের সম্ভাব্যতা, পণ্য পরিবহনের প্রবাহ, বিনিয়োগসহ হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই মাশুলের পরিমাণ পুরোপুরি যৌক্তিক ছিল। নৌপথের নতুন মাশুল কোন কোন বিবেচনায় করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এত কম মাশুল নির্ধারণ করে সরকার জাতিকে বিস্মিত করেছে। তিনি দাবী করে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর এ ব্যাপারে জাতির কাছে ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ১৯২ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভাগ্য, ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য প্রাপ্তির কোনো কিছুই তারা পায়নি। সরকারও আদায় করতে পারেনি। উল্টো ভারতের এমন কোনো আবদার নেই, যা রক্ষা করেনি। ভারত যা চেয়েছে, তাই দিয়েছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, চাওয়ামাত্র বাংলাদেশ যেন ভারতকে সব দিতে বাধ্য থাকবে। সরকারও যেন উদগ্রীব, ভারত কখন চাইবে আর কখন দেবে। তার যেন চাওয়ার কিছু নেই। ভারতের একের পর এক বাঁধ নির্মাণ ও আন্তঃনদী সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহরের কারণে যে বাংলাদেশের নদ-নদী শুকিয়ে ত্রাহি অবস্থা এবং বিশাল অংশ মরুকরণের পথে, এটি যেন সরকারের কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। আমাদের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও তার মন্ত্রী যেন কিছুই দেখছেন না। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে যে পানিশূন্য করে ফেলা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার করুণ চিত্র যেন তার চোখে পড়ছে না। তার কাছে যেন ভারতের কল্যাণটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারও ভারতের প্রতি এতটাই দরদ এবং মানবিকতা প্রদর্শন করে চলেছে যে, বিগত কয়েক বছর বিনা মাশুলে ভারতকে অবাধে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিয়েছে। যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নৌ ট্রানজিট শুরু হয়েছে, তখন মাশুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে এমনই নত হয়েছে যে, ভারত যা দিতে চেয়েছে, তাই মেনে নিয়েছে। দেশের মানুষের স্বার্থের কথা একবারের জন্যও ভাবেনি। বলাবাহুল্য, নির্ধারিত মাশুল যদি টনপ্রতি ১০৫৮ টাকা ঠিক থাকতো, তাহলে বাংলাদেশ শুল্কের মাধ্যমে আর্থিকভাবে বিপুল লাভবান হতো। সরকার তা করতে না পেরে উল্টো দেশের জনগণের উপর একের পর এক করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। নতুন নতুন ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করে মানুষকে চিঁড়েচ্যাপ্টা করার ব্যবস্থা করছে। অনেকটা জবরদস্তি করে তাদের পকেট থেকে অর্থ আদায় করছে। মানুষের জীবনযাপনকে কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আগামী সপ্তাহে নতুন অর্থ বছরের যে বাজেট ঘোষিত হবে, এ নিয়ে সাধারণ মানুষ বড়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ইতোমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, নতুন করে জিনিসপত্রের দামের সাথে ভ্যাট যুক্ত করা হবে। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা ভেবে মানুষ যারপরনাই শঙ্কিত। ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগবে, সরকার ভারতের জনগণের পণ্য পরিবহনে এতটা মানবিক উদার হলেও, আমাদের প্রতি কেন এত অমানবিক হচ্ছে? ভারতের পণ্যের ক্ষেত্রে টনপ্রতি নির্ধারিত ১০৫৮ টাকা মাশুল নির্দিষ্ট করতে পারল না কেন? উল্টো আমাদের উপর কেন এই বোঝা চাপানো হচ্ছে? ট্রানজিট মাশুলটি ধরে রাখতে পারলে তো বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে লাভবান হতো এবং সাধারণ মানুষ নতুন করারোপের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেত। সরকার জনগণের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এটাও মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থের চেয়ে ভারতের স্বার্থকেই বড় করে দেখছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের জন্য জীবনমরণ সমস্যা হয়ে থাকা পানির ন্যায্য হিস্যা ভারতের কাছ থেকে আদায়ের বড় একটি কৌশল ছিল ট্রানজিট। এই ইস্যুটিকে সামনে রেখে ভারতের সাথে কূটনৈতিক বার্গেনিং করা যেত। এতে বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তির বিষয়টি কিছুটা হলেও আলোর মুখ দেখত। দুঃখের বিষয়, এসবের কিছুই না করে ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট দিয়ে দেয়া হয়েছে। মাশুল নির্ধারণও ভারতের কথাই রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার শেষ কৌশলটি হাতছাড়া করে পানি প্রাপ্তির বিষয়টি চিরতরে বিলীন করে দিয়েছে। এখন ভারতের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যার দাবী যতই তোলা হোক না কেন, সে যে পাত্তা দেবে না, তা এক প্রকার নিশ্চিত। ইতোমধ্যে তা পরিলক্ষিতও হয়েছে। জনগণ এখন এটা মনে করতে পারে, সরকারের সাথে ভারতের অসাধারণ যে বন্ধুত্ব রয়েছে, এ বন্ধুত্ব দিয়ে আর যাই হোক, সরকারের ক্ষমতা প্রলম্বিত করা ছাড়া দেশ ও জাতির কোনো উপকার হবে না। আমরা আশা করব, সরকার ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে এবং ট্রানজিটের মাশুল নির্ধারণের বিষয়ে জনগণের সামনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।