পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’তে ‘সি-চেক’ (বড় ধরনের মেরামত) করা বাংলাদেশ বিমানের বিমান গত ৮ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ বিমানটি এর আগেও দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল। একাধিকবার বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমানটি। ভারতের নি¤œমানের কোম্পানীতে মেরামত করায় আবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, কিছু দিন আগে হায়দরাবাদ থেকে সি চেক সেরে দেশে ফেরার পথে আকাশে বিকল হওয়া এই এয়ারক্রাফটিকে কেন আবারও অপারেশনে রাখা হচ্ছে- তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা যায়, পুরনো এই বিমানটি গত ৬ মার্চ ভারতের হায়দরাবাদ থেকে বড় ধরনের মেরামত সেরে দেশে আসার পথেই দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। তখন এয়ারক্রাফটির ইঞ্জিনের ওপর থাকা বø্যাংকেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিন অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং ইঞ্জিন অয়েল বিপজ্জনক মাত্রায় চলে আসে। তখন আকাশেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু অল্পের জন্য রক্ষা পায়। বিশেজ্ঞরা এই বিমান সি-চেকের জন্য ভারতীয় কোম্পানীর বদলে অন্য কোনো কোম্পানীতে নেয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভারতের হায়দরাবাদের অখ্যাত কোম্পানীকে দিয়ে বিমানটি মেরামত করেন।
মূলত চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের এই এয়ারক্রাফটটিকে ভারতের হায়দরাবাদের ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’তে পাঠানো হয় ‘সি-চেক’ (বড় ধরনের মেরামত) করানোর জন্য। ১৫ দিনে ‘সি-চেক’ শেষ করার কথা থাকলেও সময় লাগে প্রায় দেড় মাস। মেরামতের পর দেশে আসার পথে বিমানটির বø্যাংকেট পুড়ে যাওয়ায় ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’র সি-চেকের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এর দুই মাস যেতেই ফের দুর্ঘটনার শিকার হয় এয়ারক্রাফটি। গত বুধবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করতে গিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এই বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। দূর্ঘটনায় অল্পের জন্য পাইলটসহ ৩৩ যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা পেলেও পাইলটসহ ১৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সবাই শঙ্কামুক্ত। এতে বিমানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মুখপাত্র জানান, বিজি-০৬০ ফ্লাইটটি বুধবার বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে ফ্লাইটটি ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে।
এ সময় বৃষ্টি ও ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পাইলট ও ১৮ যাত্রী আহত হন। ফ্লাইটটিতে এক শিশুসহ ২৯ যাত্রী, দুজন পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে আহত ১৯ জনকে ইয়াঙ্গুনের নর্থ ওকলাপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি প্রথমে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী।
এদিকে ইয়াঙ্গুন থেকে ১৭ যাত্রী নিয়ে দেশে ফিরেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইট ড্যাশ-৮ কিউট-৪০০। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় বিশেষ ফ্লাইট বিজি ১০৬১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আর রানওয়েতে ছিটকেপড়া বিমানে আহত ১৪ যাত্রী এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি আহত ৪ যাত্রী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যাত্রীকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমানের জনসংযোগ শাখার জিএম শাকিল মেরাজ জানান, ৬ সদস্যের এই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের চিফ অব ফ্লাইট সেইফটি ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরী। বিমানে থাকা যাত্রীদের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। শাকিল মেরাজ জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনায় কবলিত ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ উড়োজাহাজটির ক্ষতি নিরূপণে বিমানের গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল মিয়ানমারে গেছে। তিনি জানান, আহত যাত্রী যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে তার সবকিছুই করা হচ্ছে। বিমানের কন্ট্রি ম্যানেজার মীর আক্তার সেখানে আছেন, গতকাল সন্ধা থেকে সার্বক্ষণিক আপডেট নিচ্ছেন। বিমানটির কতটা ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইরে শাকিল মেরাজ বলেন, আমরা যেটুকু ছবিতে দেখেছি, একটা হিউজ ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে অ্যাক্সিডেন্টের পর, বডির স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার জন্য বিমানের পক্ষ থেকে গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের একটি টিম সেখানে গেছেন। তারা সেখান থেকে এসে অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট দিলে আমরা মিডিয়া আপডেট দেব। শাকিল মেরাজ আরো বলেন, বিমানটি বীমার আওতায় রয়েছে। বীমার শর্ত অনুসারে আহত যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এদিকে বিমানে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ ওঠায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্র ও গডফাদারদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারা যাতে কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য অলিখিত এই সিদ্ধান্ত গত সোমবার শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুত্রের দাবি, বিমানের দুর্নীতিবাজ ও মাফিয়া চক্রের সদস্যদের তালিকাসহ দুর্নীতির দলিল-দস্তাবেজ ও তথ্য-উপাত্ত দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে। নিশ্চিত করেছে, যে কোনো সময় এ চক্রের প্রত্যেকের পাসপোর্টও জব্দ করা হতে পারে। দুদকও ইতিমধ্যে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি বিশেষ টিম প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক অবস্থায় সংস্থার মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগ, কার্গো শাখা ও প্রকৌশল শাখার অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শাখার তদন্ত করবে।
বিমানের টিকিট ও কার্গো কেলেঙ্কারির অভিযোগে ওএসডি হওয়া পরিচালক মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস আশরাফুল আলম ও যুক্তরাজ্যের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলামসহ মার্কেটিং ও কার্গো শাখার দুর্নীতিবাজদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। এ তালিকাও গত সোমবার দুদকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পাশাপাশি চক্রের সব সদস্যকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মতিঝিল বিক্রয় অফিসের সহকারী ম্যানেজার মো. এনায়েত হোসেন, সহকারী ম্যানেজার পারভেজ আলম, পরিতোষ তালুকদার, জিয়াউদ্দিন ঠাকুর, সোলায়মান রিয়াদ প্রমূখ। এছাড়া মতিঝিল অফিসের সাবেক কর্মকর্তা শামসুল করিম, আতিকুর রহমান চিশতীর নামও রয়েছে এ তালিকায়। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি নির্ভর যোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র বলছে, শুধু ইতিমধ্যে চিহ্নিত হওয়া এ সেক্টরের গডফাদারসহ মাফিয়া চক্র নয়, নেপথ্যে থেকে যারা এই চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিক যে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে তাতে দেখা গেছে, বিমানের এই সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরকারি দলের কোনো নেতা কিংবা রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একের পর এক দুর্নীতি, শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে ইতিমধ্যে বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে বিমান। মূলধনের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ এখন আড়াই গুণের বেশি। নতুন চার বিমান কেনার ঋণ যুক্ত করলে এটা বেড়ে প্রায় পাঁচ গুণে দাঁড়াবে। যা অঙ্কের হিসাবে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিমানের দেনা রয়েছে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।
গত ২৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স লিমিটেডের টিকিট বিক্রি ব্যবস্থাপনার নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কার্যবিবরণীতে বিস্তর তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠকে দুর্নীতির ১০টি ধাপ উল্লেখ করে বিমান সচিব সভায় বলেন, বিমানের রিজার্ভেশন বা টিকিট বিক্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবে সামান্য কিছু টিকিট অনলাইনে সচল রেখে বাকি টিকিট বøক করে রাখা হয়। অথচ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিলে টিকিট পাওয়া যায়। এভাবে টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। অনেক সময় অনেক সিট খালি রেখে বিমান যাত্রা করে। দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগ সামনে নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মন্ত্রণালয় ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে। এর ভিত্তিতে টিকিট দুর্নীতির বহু প্রমাণিত তথ্য বেরিয়ে আসে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।