বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পর্যাপ্ত হ্যাচারি তৈরির দাবি ডিম সংগ্রহকারীদের : নদীর ধারে মাটির কুয়ায় রেণু ফোটানোর পুরনো কৌশল লাগসই প্রমাণিত, জেলেদের উৎসব
শফিউল আলম ও আসলাম পারভেজ : সরকারি শ্লোগানেই বলা হয় ‘মাছের পোনা দেশের সোনা’। অথচ আগাগোড়া অব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়ের অভাব ও চরম গাফিলতির শিকার হয়ে হালদা নদীর বুকে অর্থকরী রুই কাতলা মা-মাছের ছেড়ে দেয়া ডিম সংগ্রহ করে রেণু ফোটার প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই আংশিক নষ্ট ও অপমৃত্যু ঘটে। দেশ-জাতির বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দৈনিক ইনকিলাবে গতকাল (শনিবার) এ বিষয়ে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদে তোলপাড় হয়। অবশেষে টনক নড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। হালদা পাড়ে সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করেন মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ। সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের নষ্ট পরিত্যক্ত, ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি, ফাটল ধরা পাকা হ্যাচারির কুয়া পরিস্কার ও জোড়াতালি মেরামত, ডিপ-টিউবওয়েলগুলোর তড়িঘড়ি মেরামত করা হচ্ছিল। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, এসব প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল আরও আগেভাগেই। অবশ্য গতকাল আর কোথাও ডিম রেণু ফোটার পর্যায়ে নষ্ট বা মারা পড়ার ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এহেন অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা রোধে সবাই হয়েছেন সোচ্চার। হালদা নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক হ্যাচারি তৈরির জোরালো দাবি জানান ডিম সংগ্রহকারীদের। এলাকাওয়ারি সরকারি উদ্যোগে হ্যাচারি কমিটিতে টাউট-বাটপার ও অপেশাদারদের সরিয়ে প্রকৃত জেলে তথা ডিম সংগ্রহকারীদের নিয়ে কমিটি করারও দাবি উঠেছে। বিশেষজ্ঞ ও ডিম সংগ্রহকারী জেলেরা বলেছেন, ডিম ছাড়ার আগেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ও মানসম্মত হ্যাচারি-কুয়া তৈরিসহ সবধরনের পূর্ব-প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল। তার অভাবেই আংশিক ডিম-রেণু নষ্ট হয়েছে। তবে হালদার ধারে নদীর পানি দিয়েই মাটির গর্ত বা কুয়ায় রেণু ফোটানোর পুরনো কৌশল কিছুটা আধুনিকায়ন করায় তা লাগসই প্রমাণিত হয়েছে। হালদা নদীর উভয় তীরে জেলেদের মাঝে এখন চলছে রেণু ফোটানোর উৎসব। দক্ষিণ এশিয়ায় মিঠাপানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ মৌসুমে ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মা-মাছের ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছে। সেই ডিম থেকে রেণু ফোটাতে সময় যাবে ৯৬ ঘণ্টা। যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার। অর্থাৎ ফলাফল মিলবে মঙ্গলবার-বুধবার নাগাদ।
ইনকিলাবে গতকাল ‘হালদার ডিমের অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনলাইনেও পাঠকমহল তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পাঠক নাজমুল আনোয়ার বলেন, ‘হালদা নদী হতে আহরিত মা-মাছের ডিম সংরক্ষণ করতে হবে। অব্যবস্থাপনার কারণে ডিম ও রেণু কেন নষ্ট হচ্ছে তার তদন্ত হওয়া দরকার। আফসার উদ্দিন বলেন, ‘দায়ী কারা তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে’। এদিকে এশিয়াখ্যাত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে আহরিত ডিম হ্যাচারির কুয়া ও অতীত বুদ্ধি-কৌশল অনুসারে মাটির গর্ত বা কুয়াগুলোতে নিবিড় পরির্চযা চলছে। ডিম থেকে রেণুতে রূপান্তর হচ্ছে। রেণু ও পোনায় পরিণত হলে উপযুক্ত দাম মিলবে এই আশায় বুক বেঁধে ডিম সংগ্রহকারীরা মনের আনন্দে অপেক্ষা করছে উৎসবের আমেজে। ইনকিলাবের সংবাদের পরই উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে হ্যাচারির কুয়াগুলোতে পরিস্কার পানি সরবরাহের জন্য অকেজো ডিপ-টিউবয়েল মেরামতের কাজ দ্রæত শেষ করার পাশাপাশি কুয়ার দূষিত পানিও পরীক্ষা করেছেন মৎস্য অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার।
এখনো ডিম সংগ্রহকারীদের শঙ্কা কাটেনি। কেননা তারা বলছেন, উপজেলার মৎস্য ও হ্যাচারি কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতার কারণে ও হ্যাচারিগুলো যথাসময়ে প্রস্তুত না রাখায় আংশিক ডিম রেণু ও পোনায় রূপ না নিতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে অনেক ডিম সংগ্রহকারী আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ডিম সংগ্রহকারী যারা পুরনো নিয়মে মাটির কুয়ায় সঠিক পরির্চযা করছেন এবং সরকারি হ্যাচারির মধ্যে যেগুলো ভালো আছে সেখানে ঠিকঠাক মতো রেণু ফোটানোর কাজ চলছে। হালদা পাড়ে পর্যাপ্ত হ্যাচারি নির্মাণের দাবি জানিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা বলেছেন, প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ বা এপ্রিল-মে মাসের আগেই হালদা নদীতে মা-মাছ দলে দলে ডিম দিয়ে থাকে। ফলে নদীর পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে পরামর্শ করেই সঠিক জায়গায় হ্যাচারি নির্মাণ করার দাবি জানান ডিম সংগ্রহকারী ওসমান গণি ও কামাল সওদাগর।
হাটহাজারী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপাপ্ত মৎস্য অফিসার স্বাপন কুমার জানান, আমি আজ (গতকাল রোববার) মাত্র যোগদান করলাম। আমি হ্যাচারিগুলো পরিদর্শনে গিয়েছি। সেখানে ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনেছি। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ব্যাপারে পরীক্ষা করে দেখেছি। অক্সিজেনের মাত্রা স্বাবাভিক রয়েছে। হ্যাচারির কিছু নষ্ট কুয়ার কারণে ডিম ও পোনা নষ্ট হয়ে গেছে বলে কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী জানান। তবে পরিস্কার পানির জন্য মদুনাঘাট হ্যাচারিতে অকেজো ডিপ-টিউবয়েল মেরামত করা হচ্ছে। আর বাদবাকি সমস্যাগুলো আগামী পূর্ণিমা তিথিতে ডিম ছাড়ার পূর্বেই সমাধান করার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরো জানান, হ্যাচারিগুলোর দায়িত্বে থাকা গত কয়েক বছরের সুবিধাভোগী কমিটিগুলো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কমিটি করা হবে।
এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, কতিপয় টাউটশ্রেণির লোকের কব্জায় চলে গেছে হ্যাচারি কমিটিগুলো। তারা প্রায়ই অপেশাদার ও হোমড়া-চোমড়া। মূলত মধ্যস্বত্ত¡ভোগীর ভূমিকা পালন করে ওরা যথেচ্ছ ফায়দা লুটছে। নগদ টাকা হাতিয়ে কাউকে ভালো হ্যাচারির কুয়া দিচ্ছে, কাউকে নষ্ট কুয়া গছিয়ে ডিমের ক্ষতি করছে। কুয়ার বাণিজ্য করে যাচ্ছে। ওদের দাপটে প্রকৃত জেলে ও ডিম সংগ্রহকারীরা বলতে গেলে অসহায়। তাছাড়া হ্যাচারি কমিটির ‘নেতা’ পরিচয় ভাঙিয়ে ওরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে।
হালদা ও কর্ণফুলী নদী বিশেষজ্ঞ, হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া গতকাল ইনকিলাবকে জানান, এবার মৌসুমে রেকর্ড হারে মা-মাছ হালদায় ডিম ছাড়তে পারে এবং ছাড়লে কী করণীয় এ সম্পর্কে সরকারি বিভাগ এবং স্থানীয় হ্যাচারি কমিটিগুলোর কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। অথচ তাদের প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল। তাছাড়া প্রকৃত ডিম সংগ্রহকারী তথা অভিজ্ঞ জেলেদের নিয়ে হ্যাচারি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। মাটির গর্তের পানির কুয়ায় ডিম থেকে রেণু ফোটানো সহজ কৌশল ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে ডিম অপচয় হবে না; বরং আরও সুফল মিলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।