পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এখন থেকে সাড়ে এগারো শ’ বছরেরও আগে (১০৩০ সালের ২১ এপ্রিল) ‘ফাতেহে আজম’ (মহান বিজয়ী) নামে খ্যাত আবুল কাসেম মাহমুদ গজনভী ইন্তেকাল করেন। তিনি ৯৭১ সালের ১ নভেম্বর মোতাবেক হিজরী ৩৬১ সালের ১০ মহররম জন্মগ্রহণ করেন। ৯৯৮ সালে তিনি বাদশাহ হন। তাঁর পিতা সবুক্তগীন স্বপ্নে দেখেন যে, তার গৃহে আতেশ কাদা (অগ্নিকুণ্ড) হতে একটি বিশাল বৃক্ষ জন্ম নিয়েছে, যার ছায়াতলে আলেমেদ্বীন বসতে পারেন।
বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখে ফেরেশতা’র বর্ণনা অনুযায়ী, সুলতান সবুক্তগীন মাহমুদের জন্মের খবর পান চুনাব নদীর তীরে যা সোহদরা শহরে অবস্থিত, পরবর্তীকালে যা উজিরাবাদ নামে খ্যাতি লাভ করে। তিনি তখন স্থানীয় শাসকের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। তিনি জানতেন, হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর জন্ম দিবসে খানা-ই-কাবার মূর্তিগুলো উল্টো হয়ে পড়ে গিয়েছিল। ইরানে হাজার হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত পূজার অগ্নিকুণ্ডগুলো নিভে গিয়েছিল। সবুক্তগীন আরও জানাতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সমগ্র জীবন ধরে হক ও বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং মূর্তিসমূহ ধ্বংস করেছেন। এ জন্য সবুক্তগীন দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহতাআলা যেন তার পুত্র মাহমুদকে ‘বুত শেকন’ অর্থাৎ মূর্তি ধ্বংসকারী বানান।’ সুলতান সবুক্তগীনের এ দোয়া কবুল হয়েছিল। মাহমুদের জন্ম দিবস উদযাপন উপলক্ষে সবুক্তগীন সোহদরার আশেপাশের বহু মূর্তি ও মন্দির ধ্বংস করেন।
সুলতান মাহমুদ তার ৩২ বছরের রাজত্বকালে কম বেশি চল্লিশটি বড় বড় যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধের সময় অসংখ্য সংঘর্ষে অংশ গ্রহণ করেন। প্রত্যেক যুদ্ধেই আল্লাহতাআলা তাকে বিজয় দান করেন। মাহমুদকে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামরিক ও প্রশাসনিক জীবন পর্যন্ত বিতর্কিত করার প্রবণতা অমুসলিম ঐতিহাসিক ও লেখকদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো লেখক তাকে ‘গোলামজাদা’ (কৃতদাসের পুত্র) বানিয়ে ছেড়েছেন। অভিযোগের ধারায় কবি ফেরদৌসীর বিজয়ে এক কাল্পনিক কাহিনীও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, মাহমুদের জন্মের বাইশ বছর পূর্বে ফেরদৌসী তার ‘শাহনামা’ রচনার কাজ আরম্ভ করে ছিলেন এবং শাহ ইয়াজদেগার্দ ইরান (পারস্য) এর সর্বশেষ বাদশাহ, যিনি হজরত উসমান (রা.) এর খেলাফত আমলে নিহত হন, এর সপ্তম অধঃস্তন পুরুষ ছিলেন মাহমুদ। মুসলমানদের অব্যাহত বিজয়ের ফলে ইয়াজদেগার্দের বংশ তুর্কিস্তানে গিয়ে আত্মগোপন করেছিল। এ জন্য তারা তুর্কি নামে অভিহিত হতে থাকে। যেহেতু মাহমুদ একজন উত্তম ঘোড় সোওয়ার ছিলেন, এজন্য সবুক্তগীন তাকে সঙ্গে রাখতেন। কখনও কখনও তাকে বড় বড় যুদ্ধে অভিযানকারী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করতেন। বিভিন্ন যুদ্ধে তার বীরত্বপূর্ণ ভ‚মিকার কারণে সবুক্তগীন তাকে ‘সাইফুদ্দোলাহ’ উপাধি প্রদান করেন।
আলোচ্য বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে সবুক্তগীন গোলাম ছিলেন না। সুতরাং, মাহমুদ গোলামের পুত্র ছিলেন না। তারা ছিলেন খাঁটি রাজ বংশের লোক। আর যে কারণে তাকে গোলামজাদা বলা হয় তা এই যে, গজনা বা গজনির প্রতিষ্ঠাতা আলপতগীন (৯৬২-৯৬৩) ছিলেন তুর্কি গোলাম। তিনি উন্নতি লাভ করে খোরাসানের প্রধান সেনাপতি হয়ে যান। অতঃপর ৯৬২ সালে গজনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। আবু মনসূর সবুক্তগীন (৯৭৭-৯৯৭) প্রথমে আলপতগীনের গোলাম ছিলেন এবং অসাধারণ যোগ্যতা বলে তিনি আলপতগীনের দামাদ (জামাতা) হয়ে যান এবং শ^শুরের মৃত্যুর পর সবুক্তগীন গজনির বাদশাহ হিসেবে সিংহাসন লাভ করেন। বর্ণিত পরিচিতি অনুযায়ী সুলতান মাহমুদকে গোলামজাদা বলা হয়, যার জবাব পূর্বেই দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, স্থানীয় রাজনীতির প্রতি সুলতান মাহমুদের অনাগ্রহের কারণে ইসলাম প্রচারে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। যদি তিনি অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতেন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুসলমান শাসক এবং উপযুক্ত সামরিক বাহিনী নিযুক্ত করে যেতেন তাহলে অবশ্যই হিন্দুস্থানে মুসলমানদের সংখ্যা হতো বিপুল এবং সম্ভবত ইংরেজরা কখনও হিন্দুস্থান শাসন করতে সক্ষম হতো না। কেননা, তখন তারা হিন্দুদের সাথে মিলিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ পেতনা। লটুপাট করা, মারধর করা, সুলতান মাহমুদের রীতি ছিল না। কিন্তু তিনি শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের ওপরও কোনো বাড়াবাড়ি করেননি, কেবল জায়েজ ‘মালে গণিমত’ এবং জরিমানা অর্থাৎ জিযিয়া আদায় করাকেই যথেষ্ট মনে করতেন।
সুলতান মাহমুদ একজন মহান মোজাহেদ ও গাজী ছিলেন। তার জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল ইসলামের প্রচার, কোফর এবং প্রতীমাপূজার অবসান ঘটানো। যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে তিনি শত্রুকে সব সময় ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন এবং দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করার পরেই তিনি তরবারি ধারণ করতে বাধ্য হতেন। তিনি কখনও গোপন হামলা করেননি। তিনি প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতেন এবং শত্রুকে চিন্তা-ভাবনা করার যথেষ্ট সুযোগ দান করতেন।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন খুবই দানশীল, ন্যায় বিচারক এবং খোদাভীরু মানুষ। ভ্রাতাদের এবং আত্মীয় স্বজনদের প্রতি তিনি ছিলেন দয়াশীল। তিনি অধীনস্থ কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার কথা স্মরণ রাখতেন। কারও প্রতি অন্যায়ভাবে পক্ষপাতিত্ব করতেন না। স্বীয় দায়িত্বাবলী পালনে ছিলেন কঠোর নীতির অনুসারী। প্রতি বছর নিজের মালের যাকাত আদায় করতেন এবং এ অর্থ তার প্রজাসাধারণের কল্যাণে ব্যবহার করতেন। এ ব্যাপারে কারও বিরোধিতা সহ্য করতেন না। তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে লজ্জা বোধ করতেন না।
সুলতান মাহমুদ দুনিয়ার প্রথম শ্রেণীর বিজয়ীদের একজন ছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি, সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা দ্বারা তিনি যুদ্ধের নকশা রচনা করতেন এবং বিস্ময়করভাবে যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তাঁর জীবনের সিংহভাগ অতিবাহিত হয়েছে রণাঙ্গনে, কিন্তু একবারও তিনি পরাজিত হননি। তাঁর শান্দার বিজয়মালা সেকান্দারে আজম (মহান আলেকজান্ডার) এর চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। তিনি এতই নির্ভীক ছিলেন যে, সর্বদা প্রথম সারিতে থেকেই যুদ্ধ করতেন। বলা হয়, বিভিন্ন যুদ্ধে তার শরীরে আঘাতের সংখ্যা ছিল ৭২টি। অত্যন্ত নিরাশ অবস্থায়ও তার মধ্যে বীর পালোয়ানদের ন্যায় উৎসাহ প্রেরণা জাগরুক ছিল। যদিও তিনি অভিযানগুলোর কারণে অধিকাংশ সময় তাঁর রাজধানী হতে দূরে অবস্থান করতেন, তথাপি নিজের প্রজাসাধারণের সর্বদা খেয়াল রাখতেন। তিনি সর্ব প্রকারের প্রতিবন্ধী, অসহায়দেরকে উপযুক্ত ভাতা প্রদান করতেন এবং গরীব, দরিদ্র, অভাবীদেরকে প্রতিদিন দান-খয়রাত করতেন। হিন্দুদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতেন এবং তার হিন্দু প্রজারা তাদের সকল ধর্মীয় রীতি-প্রথা স্বাধীনভাবে পালন করত।
সুলতান মাহমুদ খোদ বড় আলেম ও কবি ছিলেন। তিনি শৈশবেই উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন। ফেকা ও হাদীসে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। তিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তিনি পিতার নিকট হতে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা শেখেন। তিনি সরকারি কাজ কর্মের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। সেনাপতি হিসেবে তিনি অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতার পরিচয় দান করেন। তিনি খোরাসানের গভর্নর হিসেবে সকল বিরুদ্ধশক্তিকে দমন করেন। ইসলামী দুনিয়ার বিখ্যাত আলেম ও কবিগণ তার আলীসান দরবারে এসে ভীড় জমাতেন। তাদের মধ্যে শাহনামার বিখ্যাত লেখক ফেরদৌসী সর্বাপেক্ষা খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। বলা হয়, সুলতান উলামা ও কবিদেরকে বার্ষিক চার লাখ দীনার দান করতেন। তিনি গজনায় একটি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করেন। একটি শানদার কুতুবখানা প্রতিষ্ঠা করেন যাকে সজ্জিত করা হয় বিভিন্ন বিজিত এলাকায় প্রাপ্ত মূল্যবান জিনিস দ্বারা। নির্মাণপ্রেমিক এ সুলতান রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের বহু মসজিদ, বাগান, পুকুর এবং অপরাপর জনকল্যাণমূলক ইমারত গুলোকে সজ্জিত ও সৌন্দর্যমন্ডিত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে আবু রাইহান মোহাম্মদ আল-বেরুণীকে সুলতান মাহমুদের শাসনামলের বিশিষ্টজনদের প্রধান হিসেবে গণ্য করা হয়। গণিত, ইতিহাস, ভ‚গোল, সমাজবিজ্ঞান, রসায়ন এবং খনিজ বিষয়ে তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। সুলতান মাহমুদ পাঞ্জাব জয় করার পর আল-বেরুণী সেখানে অবস্থান করে সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শিতা লাভ করেন। তিনি হিন্দু দর্শন পূর্ণভাবে অধ্যয়ন করেন, হিন্দুদের ইতিহাস, ধর্ম, এবং তাদের প্রথাগুলো সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণগুলো লিপিবদ্ধ করেন যা ‘কিতাবুল হিন্দ’ (ভারত গ্রন্থ) নামে প্রসিদ্ধ।
অমুসলিম ইতিহাস লেখকদের রচনাবলীতে সুলতান মাহমুদ গজনভীর বিজয়মালাকে অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলেও খুব উজ্জ্বল করে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন লুটেরা, হত্যাকারী, অর্থলোভী, জালেম বিজেতা এবং হিন্দুদেরকে তিনি জোর করে মুসলমান বানাতেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনো কোনো মুসলমান লেখকও এসব ভিত্তিহীন, অসত্য তথ্য, অমুসলমান লেখকদের রচনাবলী হতে যাচাই-বাছাই না করে নিজেদের রচনাবলীতে বেমালুম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হিন্দুস্থানের নানা স্থানে মন্দির ও মূর্তিপূজার বহু কাহিনী শুনেছিলেন সুলতান মাহমুদ। হিন্দুদের হাস্যকর বিশ্বাস, পূজারী ও পণ্ডিতদের ভোগ-বিলাসিতা, প্রতারণা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি অপকর্ম অসংখ্য সরলপ্রাণ মানুষকে কোফর ও বাতিলের বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল। মূর্তি-প্রতীমা ছাড়াও জীবজন্তু, গো, সাপ এবং বানর ইত্যাদি, চাঁদ, সূর্য এবং বৃক্ষারাজিরও পূজা পর্যন্ত সাধারণ ব্যাপার ছিল। এ পূজা ও রীতি-প্রথার জমজমাট ব্যবস্থা তিনশ বছর থেকে লাগাতার চালু ছিল, অথচ এ দীর্ঘকাল সিন্ধু ও মুলতান মুসলমান শাসকদের অধিকারে ছিল। ইসলাম প্রচারে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো ভ‚মিকা তারা দেখাতে পারেননি। মোহাম্মদ ইবনে কাসেমের বিজিত এলাকাগুলো তারা অতি কষ্টে ধরে রেখেছিলেন। এহেন সংকটময় অবস্থায় একজন মর্দে মোজাহেদ, ইসলামের প্রচারক, দুঃসাহসী, বীর, যোগ্য সিপাহসালারের প্রয়োজন ছিল। সময়ের এ আবেদনে সুলতান মাহমুদ গজনভী সাড়া দিতে বাধ্য হন। তিনি হিন্দুস্থানে অভিযান পরিচালনার জন্য সুচিন্তিতভাবে পরিপকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি ভাবেন একই অভিযানে সমগ্র হিন্দুস্থানকে পরাজিত করা সম্ভব নয় এবং একই সঙ্গে হিন্দুস্থানের সকল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা সামরিক দিক দিয়েও উচিত হবে না। বেশি এলাকা জয় করার এবং বেশি বেশি মূর্তি ধ্বংস করার জন্য জরুরি ছিল হিন্দুস্থানের মজবুত ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্রগুলো অধিকার করা। এভাবে শত্রুর সামরিক শক্তিকে চুর্মার করা এবং মন্দির ও মূর্তিসমূহ ধ্বংস করা সম্ভব। শত্রুর সামরিক শক্তি সর্বত্র ছিটিয়ে ছড়িয়ে ছিল। কোফর ও বাতিলের প্রধান কেন্দ্রগুলো দূর-দূরান্তে অবস্থিত হওয়া ছাড়াও একটি অপরটি চেয়েও দূরে ছিল। এ জন্য প্রয়োজন ছিল প্রথমে নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করা। সুলতান মাহমুদের হিন্দুস্থানে ১৭টি অভিযান পরিচালনা ছিল তাঁর বৃহত্তর পরিকল্পনারই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সুলতান মাহমুদ গজনভী ১০০০ হতে ১০২৬ সাল পর্যন্ত হিন্দুস্থানে ১৭টি সফল সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তার এসব অভিযানকে ঐতিহাসিকগণ তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। প্রথমত: সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো জয় করা, দ্বিতীয়ত: মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখল করা এবং তৃতীয়ত: দূর-দূরান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো কব্জা করা। এসব অভিযানের মধ্যে কয়েকটি ছিল বিদ্রোহীদের দমন, স্থানীয় শাসকদের ওয়াদা খেলাফি ও প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নে জেনে শুনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য শাস্তি প্রদান। মাহমুদের নিজের সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মধ্য এশিয়ার ইরান, আফগানিস্তান প্রভৃতিতে বিদ্রোহীদের দমনের জন্য খোদ তাকে স্বশরীরে যেতে হয়েছিল।
সুলতান আবুল কাসেম মাহমুদ যখন ক্ষমতাসীন হন তখন তিনি কেবলমাত্র গজনা, বাসত এবং বলখের শাসনকর্তা ছিলেন। কিন্তু ১০৩০ সালের ২১ এপ্রিল তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর সাম্রাজ্য কাস্পিয়ান সাগর ও ইরাক হতে গঙ্গা সাগর পর্যন্ত এবং আরাল সাগর ও এশিয়া মাইনর হতে আরব সাগর ও বেলুচিস্তানের মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।