Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবনযুদ্ধে হারনামানা তিন নারীর গল্প

সেলিম আহমেদ, সাভার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ৫:৪৫ পিএম

জীবনযুদ্ধে হারনামানা তিন নারী মুন্নী বেগম, মনোয়ারা বেগম ও জাহানারা বেগম । সাভার পৌর এলাকার ছায়াবিথী মহল্লায় একটি ভাড়া বাড়িতে এই তিন জন কর্মজীবি নারীর বাস। এই বয়সে এসেও তারা কঠোর ঘামঝড়া পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছেন। তাদের ভাষায় ‘কাজ করে খাই, ভিক্ষা করে খাই না’।
স্বামী পরিত্যাক্তা মুন্নী বেগম (৪৫)। প্রায় তিন বছর আগে স্বামী রুস্তম আলী তাকে ফেলে চলে যায়। চরম অভাবের যন্ত্রনা-ক্ষুধা আর দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে ধিরে ধিরে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী মুন্নী বেগমের একমাত্র উপার্জনের বাহন ‘ঠেলাগাড়ী’ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন ঠেলাগাড়িতে করে ইট, বালু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌছে দিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোন রকম চলছে তার সংসার।
মেয়ে সোহাগী ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে লেখাপড়া করছে। এই ঠেলাগাড়ী চালিয়ে দুই মেয়ে মঞ্জিলা ও রুমানাকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে সোহেল ও সোহাগ চাকুরী নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। মায়ের খোঁজখবরও নেয়না আক্ষেপ করে বলেন মুন্নী।
তিনি বলেন, কঠোর ঘামঝড়া পরিশ্রম করে ২৫০টাকা থেকে ৫০০টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারি। আবার কোনদিন কোন আয়ই হয়না। সড়কের পাশে কাজের আশায় দিনভর ঠেলাগাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হয়। কাজের ডাক না পেলে বাড়ি চলে যাই।
মনোয়ারা বেগম (৬৫)। ১৮বছর আগে স্বামী শাওকাত আলী মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন তিনি। কোথায় কোন কাজ না পেয়ে ১৮বছর ধরে তিনি ঠেলাগাড়ী চালিয়ে একমাত্র মেয়ে শিরিন আক্তারকে (২০) মানুষ করেছেন। ঠেলাগাড়ি দিয়ে ইট, বালু টেনে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেই মেয়ে এখন আর কোন খবর নেয় না।
মনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, যখন টাকার দরকার হয় তখন মেয়ে আমার খোঁজ খবর নেয়। দিনভর ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ৩০০/৪০০টাকা যা রোজগাড় করি তাদিয়ে আমার চলতে হয়। এই বয়সে অনেকে কাজে নিতেও চায়না। তবুও মনের জোরে যতটুকু কাজ পারি তা থেকে কিছু টাকা জমালে সেই জমানো টাকা মেয়ে নানা তালবাহানা করে নিয়ে যায়। কি করবো মেয়েতো, টাকা না দিয়েও পারি না বলেন তিনি।
জাহানারা বেগম (৩৭)। স্বামী নুরুল হক মারা গেছে প্রায় ১৫বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন তিনি। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী জাহানারার একমাত্র আয়ের উৎস ঠেলাগাড়ী। ঠেলাগাড়ি চালিয়ে দৈনিক ২০০/৩০০টাকা যা রোজগাড় হয় তাদিয়ে চলছে তার সংসার।
জাহানারা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম ভিক্ষা করে চলতে হবে কিন্তু না, কারও কাছে হাত পাতিনি। ১০হাজার টাকা খরচ করে ঠেলাগাড়ী তৈরী করে ইট, বালু টেনে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কষ্ঠ হলেও মাথা উচু করে বেঁচে আছি।
ছায়াবিথি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম খান বলেন, আমরা বাসাবাড়ির কোন কাজ হলেই সড়ক থেকে ভিতরে নির্মানাধিন স্থানে ইট, বালু ঠেলাগাড়ী দিয়ে নেয়ার জন্য তাদের ডেকে নেই। তিনি বলেন, পুরুষরা কাজে ফাঁকি দেয় কিন্ত নারীরা কাজে ফাঁকি দেয়না।

 



 

Show all comments
  • Bijoy Babu ১ মে, ২০১৯, ৩:১৫ পিএম says : 0
    জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই তিন মাকে আমি সম্নান জানাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাভার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ