Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএসএফের হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে এক বাংলাদেশী যুবকের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তার দু’হাতের সব নখ উড়ড়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। ওই যুবক যে অপরাধই করে থাকুক না কেন, সে জন্য তার আঙুলের নখ উড়ড়ে ফেলতে হবে, এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা আর কিছু হতে পারে না। পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করেন, যে বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে পাখির মতো বাংলাদেশী হত্যা করে, তার পক্ষে আঙুলের নখ উপড়ে নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যার কথা অনেকরই স্মরণ আছে। ফেলানী কাঁটাতাঁরের বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আসতে পারেনি। ওই অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ সদস্যরা। বিশ্ব মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যে হত্যাকাণ্ডের অবাধ-অভয় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, সে কথাও বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে আসে। কিন্তু হত্যাকাণ্ড যেমন বন্ধ হয়নি তেমনি ফেলানীসহ কোনো হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি। ফেলানী হত্যার বিচার নিয়ে রীতিমত তামাশা করা হয়েছে। যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশী যুবকের নখ উপড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেই সীমান্তেই এ মাসের প্রথম দিকে দু’জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ বছরের প্রথম ৩৯ দিনে বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৭ জন বাংলাদেশী। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা যে আগের চেয়ে বেড়েছে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার প্রমাণ বহন করে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৪ বছরে অন্তত ৮৫০জন বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে।
শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, সীমান্তে বাংলাদেশীদের নানাভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি করে আসছে বিএসএফ। অবৈধ অনুপ্রবেশ, গুলিবর্ষণ, ক্ষেত-খামার তছনছ, ফসল ও মাছ লুট, অপহরণ, বাংলাদেশী নারীদের শ্রীলতাহানি ইত্যাদির মত গর্হিত অপরাধ লাগাতারই করে আসছে বিএসএফ। বাংলাদেশের সীমান্ত-নাগরিকদের সব সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়ভীতি, নাশকতা ও ক্ষয়ক্ষতির আশাংকার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। এমতাবস্থায়, বিজিবি কী করছে, সেটা খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। বিজিবির পারফরমেন্সে সীমান্ত-নাগরিক তো বটেই দেশের কোনো নাগরিকই সন্তুষ্ট নয়। সীমান্তে হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অনাচার বন্ধে বিজিবি কিছুই করতে পারেনি বা পারছেনা। সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশ, পণ্য,অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান রুখতেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। না হলে অবাধে লোক, পণ্য, অস্ত্র ও মাদক আসছে কী করে? পক্ষান্তরে আমরা মাঝে-মধ্যেই বিএসএফ-বিজিবির শুভেচ্ছা বিনিময়, ভ্রমণ বিনিময়, রাখিবন্ধন, মিষ্টি বিতরণের খবর দেখতে পাই। এসব দোষের কিছু নয়। কিন্তুু এসবের পরও তো সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, অপহরণ, লুটপাট ও দুর্বৃত্তাচার বন্ধ হচ্ছে না। কেন এসব বন্ধ করতে পারছেনা, তার জবাব বিজিবি এড়িয়ে যেতে পারে না। সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব বিজিবির ওপর। এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। সীমান্ত-নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সব ধরনের অনুপ্রবেশ রোধ তার অনিবার্য দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। বিএসএফের যে কোনো অন্যায়, যথেচ্ছাতার ও আগ্রাসী তৎপরতার যথোচিত প্রতিবাদ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করাও তার কর্তব্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশী যুবকের নখ উপড়ে নেয়ার প্রতিবাদ বিজিপি করেছে কিনা, এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত তা জানা যায়নি। বিলম্বে হলেও এর কড়া প্রতিবাদ করা উচিৎ বলে মনে করে পর্যবেক্ষক মহল।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ বাংলাদেশের দিক দিয়ে একটা বড় ইস্যু। এই ইস্যুতে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। দুই সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও এ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। সকল পর্যায়ের আলোচনাতেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত-হত্যা বন্ধ এবং তা শূণ্যে নামিয়ে আনার তাকিদ দেয়া হয়েছে। ভারতের তরফে বরাবরই আশ্বাস দেয়া হয়েছে, সীমান্ত-হত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিকভাবেই একথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যত মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়, বিশ্বের আর কোনো সীমান্তে তত হয় না। সীমান্ত কেন্দ্রিক এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত খুবই জরুরি। সীমান্তে আর কোনো হত্যাকাণ্ড হবে না, ভারতকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট ভূমিকা নিতে হবে। বিএসএফ একের পর এক বাংলাদেশীদের হত্যা করবে, তাদের ওপর নৃশংস ও বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়ন চালাবে আর বাংলাদেশ শুধুই ‘বন্ধুত্বের জয়গান’ গেয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফের হত্যা
আরও পড়ুন