পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ আর নেই। গতকাল (শনিবার) থাইল্যান্ডের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। ৬৯ বছর বয়সী সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ গত ২ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। স্কয়ারে কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১১ এপ্রিল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককে নিয়ে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তিন সপ্তাহ ধরে ব্যাংককের হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ। মাহফুজ উল্লাহর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগে ব্যাংককে একবার তার বাইপাস সার্জারিও হয়েছিল।
মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ জানান, রাত সাড়ে ১২টায় ব্যাংকক থেকে তার ভাইয়ের লাশ দেশে আসার কথা। লাশ দেশে এসে পৌঁছালে আজ রোববার জোহরের নামাজের পর ঢাকার গ্রীন রোডের জামে মসজিদে এবং বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মাহফুজ উল্লাহকে দাফনের প্রস্তুতির কথা জানান মাহবুব উল্লাহ।
মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকতা জীবনে তাঁর মতো একজন নির্ভীক সাংবাদিকের পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া দেশবাসীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গণতন্ত্র হরণ ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতিতে তাঁর মৃত্যু গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে গভীর হতাশার সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বরাবরই তিনি ছিলেন নির্ভীক ও দ্বিধাহীন। অবৈধ সরকারের রক্তচক্ষু’র কাছে তিনি কখনোই মাথানত করেননি। সরকারী ক্রোধের পরোয়া না করে গণতন্ত্রের পক্ষে তাঁর উচ্চারণ ছিল শাণিত ও সুস্পষ্ট। বর্তমান দু:সময়ে তাঁর মতো একজন ঋজু ও দৃঢ়চেতা মানুষের বড়ই প্রয়োজন ছিল। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, স্বতীর্থ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এদিকে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লার ইন্তেকালের পরপরই মরহুমের বাসায় উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, শ্যামা ওবায়েদসহ আর অনেকেই। তারা মরহুমের পরিবারের কাছে গভীর সমবেদনা জানান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না প্রদান করেন।
মাহফুজ উল্লাহর জন্ম ১৯৫০ সালে নোয়াখালীতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নেন মাহফুজ উল্লাহ। আইয়ুব খানের শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তিনি পরে ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার ১৯৭২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতায় তার অবদান রয়েছে। মাহফুজ উল্লাহ মাঝে চীনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন তিনি। তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। এছাড়া টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত দেখা যেত তাকে। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা মাহফুজ উল্লাহর বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ: আ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি, যাদুর লাউ, যে কথা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), উলফা অ্যান্ড দ্য ইনসারজেন্সি ইন আসাম, বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ হার স্টোরি, স্বাধীনতার প্রথম দশকে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।