পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব বয়ে যাচ্ছে বিএনপির ওপর দিয়ে। ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহ পাওয়ার প্রত্যাশায় ‘নেতৃত্বের অসহায়ত্ব’ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পাতানো খেলার মতো একের পর এক এমপি সংসদে গিয়ে শপথ নিচ্ছেন। বিএনপি যেন হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন। সুবিধাবাদী এই এমপিদের শপথ নেয়া থেকে বিরত রাখার কোনো রাজনৈতিক কর্ম-কৌশল দেখা যায়নি; দায়িত্বশীল নেতাদের শুধুই ‘কথার বাগড়াম্বর’ দলটির নেতাদের করে তুলেছে আশাহত। প্রশ্ন হলো শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত এবং বেগম জিয়ার হাতে গড়া বিএনপি নামের বটবৃক্ষের কান্ড কি এই ঝড়ে ভেঙ্গে পড়বে? ঝড়-বাতাসে বটগাছের দু’চারটি পাতা ঝড়ে গেলে কি বটগাছের তেমন ক্ষতি হয়?
১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘ক্রনিকেল অব আ ডেথ ফরটোল্ড (পূর্বঘোষিত একটি মৃত্যুর কালপঞ্জি) বইয়ে সান্তিয়াগো নাসার হত্যার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সান্তিয়াগোকে খুন করা হবে আগে থেকেই এই বার্তা গ্রামের সবাই জানতেন। বিএনপির অবস্থা অনেকটা সে রকমই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবেন না। আগের রাতেই ভোট হয়ে যাবে এবং এর মধ্যেই কয়েকজন জিতে যাবেন। পরবর্তীতে তারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে পর্যায়ক্রমে শপথ নিয়ে সংসদে যাবেন! এই ছক যেন তৈরিই ছিল এবং সেটা বিএনপির নীতি নির্ধারকরা জানতেন। কারণ ঘটনা প্রবাহ সে বার্তাই দেয়। প্রথমে শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। শপথ নেয়ার আগে তিনি ঐক্যফ্রন্টের নীতি নির্ধারকদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন ‘শপথ নেয়ার ব্যাপারে আমার কমিটমেন্ট আছে’। অতপর শপথ নেন সিলেট-২ থেকে নির্বাচিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খান। তিনি দাবি করেন দলের সিদ্ধান্তেই শপথ নিয়েছেন। যদিও গণফোরাম থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে। সবশেষ গতকাল শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। শপথ নেয়ার পর তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতনের কথাই সংসদে তুলে ধরার ঘোষণা দেন। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ বলেছেন, যেহেতু ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত শপথের সময় রয়েছে সে জন্য দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। শপথের বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রার্থীর নিজস্ব বিষয়। এখানে দলীয় কোন স্বাক্ষর এর প্রয়োজন হয় না। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের লেখা ‘সান্তিয়াগোকে পর্ব ঘোষিত খুন’ কাহিনীর সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপিদের ‘একে একে শপথ’ নেয়ার কাহিনীর সঙ্গে কি মিলে যায় না?
সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ করতে হবে।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমানের নাম গতকাল ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। মিডিয়া থেকে শুরু করে হাটে-মাঠে-ঘাটে তার শপথ নিয়েই আলোচনা সমালোচনা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার শপথ নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য, বক্তব্য পোস্ট, লাইক দেয়া হয়েছে। বলা যায় জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর থেকে ধুঁইয়ে দেয়া হচ্ছে। বিএনপির নেতারা তাকে ‘বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক, গণদুশমন’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে ধিক্কার দিচ্ছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, এই একাদশ সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সেখানে সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনার কথাই আসে না। সেখানে যোগদান একধরনের বেঈমানী। দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দলের আদর্শ, সিদ্ধান্ত এবং নেত্রীকে জেলখানায় রেখে কেউ যদি শপথ নিয়ে থাকেন বা ভবিষ্যতে নেন তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে চলার যোগ্যতা রাখেন না। তারা হলো গণদুশমন। তাদের বিচার জনগণই সময়মতো করবে। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শপথ নেয়ার পর জাহিদুর রহমান এমপি বলেছেন, ‘বিএনপি আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও আমি হবো না। আমি ৩৮ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে রয়েছি’। প্রশ্ন হলো বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকলেই কি সবার পক্ষ্যে দলের আদর্শ, নীতি, দর্শন ধারণ করা সম্ভব? বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে গতকাল কথা বলে মনে হয়েছে এদের অনেকেই শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত নন। অথচ যুগের পর যুগ ধরে বিএনপি করছেন; এবং নানাপন্থায় ‘বড় দল বিএনপির নেতা’ হিসেবে সুবিধা নিচ্ছেন। বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, বিএনপিকে অনেক বেঈমান বিশ্বাসঘাতক এখনো রয়েছে। এরা দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ করেন। ২০০৮ সালে এদের অনেকেই চিহ্নিত হয়েছেন; কেউ সংস্কারের নামে বেগম জিয়াকে মাইনাস করার চেষ্টা করেছেন, কেউ কেউ সে সময় গর্তে থেকে পীঠ বাঁচিয়েছেন। দলের এবং বেগম জিয়ার দুর্দিনে এরা কখনোই সামনে থাকেননি।
সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় দল বিএনপির ওপর দিয়ে যেন বয়ে যাচ্ছে বৈশাখী ঝড়। দমকা হওয়ায় দলটির সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। নানান রোগে আক্রান্ত হলেও তিনি এখনো দৃঢ়চেতা। ‘আপোষহীন’ নেত্রী হিসেবে তিনি নিজের মুক্তি বা অন্যকোনো কারণে ‘সমঝোতা’ করে সংসদে যেতে নারাজ। তাঁর মতো দৃঢ় এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেত্রীর সহযোগী হিসেবে বর্তমান যারা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের দৃঢ়তা কতটুকু; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে দলের লাখ লাখ কর্মী বাহিনী, কোটি কোটি সমর্থন, সেই দলের নীতি নির্ধারকরা অসহায়ত্বের শ্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সম্প্রতি এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ক্ষমতাসীনদের অনুকম্পা নেয়ার কৌশল যোগ্য নেতৃত্বের রাজনীতি হতে পারে না। এটা কোনো ভাল লক্ষণ নয়’। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। বর্তমানে যারা নেতৃত্বে রয়েছেন; তারা ‘ভীতির রাজ্যে’ বসবাস করছেন। নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হতে ‘নেতা ভাড়া’ করে এনে নেতৃত্বে বসিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট এবং দলের আদর্শের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস না থাকলে যা হয় বিএনপিতে তাই হচ্ছে। বেগম জিয়ার মতো আপোষহীন নেত্রীর দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এমন আন্দোলনভীতি রাজনীতি শোভা পায় না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়া যা দেখিয়েছেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তার একশ ভাগের এক ভাগ দেখানো গেলে বিএনপিকে এই দুর্বিপাকে পড়তে হতো না।’ দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ভাড়াটে নেতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; এবং এলডিপির সভাপতি কর্ণেল (অব) অলি আহমদ নির্বাচনের আগে টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তার কাছে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে বলে ঘোষণা দেন।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে মাঠ দখলের কর্মসূচি চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং ভাড়াটে নেতারা মাঠে নামার আগ্রহ দেখাননি। এমনকি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ করেও কোনো দাবি আদায় করতে পারেননি। যেন নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ছক কষেই প্রার্থী দিয়েছেন। এমন ঘটনা রয়েছে যে নির্বাচনের এক মাস আগে নতুন দল গঠন করেছেন এমন অপরিচিত ব্যাক্তিকে লাঙ্গলের ঘাটিখ্যাত রংপুরে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়। এমন ব্যাক্তিদের নমিনেশন দেয়া হয় তাদের প্রায় অর্ধশত প্রার্থী নির্বাচনের আগে এলাকায় যাননি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানীতে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার চিত্র উঠে এসেছে। একই চিত্র উঠে আসে ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের গণশুনানীতে। টিআইবির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শতকরা ৪৭ কেন্দ্রে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয়া হয়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, একাদশ এটা ছিল আঁতাতের ভোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও এখন সেটা স্বীকার করছে। সে অবস্থায় বিএনপির কয়েকজন ‘পটে আঁকা ছবির’ মতো নির্বাচিত হলেন। তারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে পর্যায়ক্রমে শপথ নিচ্ছেন। এই শপথের গুঞ্জন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি বেগম জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে হলেও এমপিদের শপথ নেয়া প্রস্তাবনা দেয়া হয়। তারপরও দলের দায়িত্বশীল নেতারা ‘পটে আঁকা ছবি’ মতো নির্বাচিত সুবিধাবাদী নেতাদের শপথ নেয়া থেকে বিরত রাখার কৌশল গ্রহণ করলেন না! দলের এমপিদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি যেন অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এসব কিছুই কি গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘পূর্বঘোষিত একটি মৃত্যুর কালপঞ্জি’র নামান্তর!
দেশের রাজনীতিতে বিএনপির বটবৃক্ষ। ঝড় যতই শক্তিশালী হোক, বটগাছের লতা-পাতা উড়ে যাবে কিন্তু বৃক্ষের কাÐ ভাঙতে পারে না। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটা দৃশ্যমান। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মধ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ধারা নতুন রাজনীতি জাতিকে উপহার দেন। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে যেভাবে দলটির ওপর দিয়ে সুনামী হয়ে যাচ্ছে; হাজার হাজার নেতার বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে; তারপরও তাদের কাবু করা যায়নি। দলের আদর্শ থেকে সরানো যায়নি। তবে এই সময়ে দলটিতে একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা কখনো সংস্কারের নামে কখনো নেত্রী মাইনাস করে কখনো ‘ডকটিন অফ নেসেসিটি’র দোহাই দিয়ে দলের পীঠে কুড়াল মারার চেষ্টা করেছেন।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপিতে অনেকে নেতা লোভে পড়ে চলে গেছেন। কাউকে আবার সন্দেহের কারণে বিতাড়িত করা হয়েছে। বিএনপি বটবৃক্ষের মতোই দÐায়মান। জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি করেন। ১৯ দফা কর্মসুচি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা দলে নানান মত পথের নেতারা যোগ দেন। জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়ার মৃত্যু দলকে অথৈই সাগরে ভাসিয়ে দেয়। দুর্বল মাঝি বিচারপতি আবদুস সাত্তার দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ক্ষমতাচ্যুত হলে বিএনপি সাগরে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে গৃহবধু বেগম জিয়া বিএনপির হাল ধরেন। ১ এপ্রিল তিনি বর্ধিত সভায় বক্তৃতা করলে দলের নেতারা মাঝি খুঁজে পান। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। অতপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপির পূর্ণ বিকাশ ঘটে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্ব তাকে অন্যমত উচ্চতায় নিয়ে যায়। ১৯৮৩ সালে বেগম জিয়া যখন রাজনীতিতে নামেন তখন শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. আবদুল মতিন মিরপুরের বিউটি সিনেমা হলে সম্মেলন করে বিএনপি দ্বিখাÐিত করেন। কিন্তু হুদা-মতিনের বিএনপি বেশিদিন টেকেনি। দলের মহাসচিব ছিলেন প্রখ্যাত সংগঠনক কেএম ওবায়দুর রহমান। ১৯৮৮ সালে হঠাৎ গুজব ওঠে কে এম ওবায়দুর রহমান ও ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত এরশাদের মন্ত্রী হচ্ছেন। ওই বছরের ২১ জুন দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ওবায়দুর রহমানকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ৩ জুলাই মহাসচিব পদে নিয়োগ পান ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার। কে এম ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জনতা দল। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুজব ছড়িয়ে পড়ে বিএনপির ‘শেষ’ হয়ে যাবে। কিন্তু যায়নি। দল থেকে বের হয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০৪ সালে বিকল্প ধারা গঠন করেন। ২০০৬ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবার ঠিক আগের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম কর্ণেল (অব:) ড: অলি আহমেদ কিছু নেতা-কর্মী, মন্ত্রী ও এমপিকে নিয়ে বিএনপি ত্যাগ করেন এবং বি. চৌধুরীর বিকল্পধারার সাথে নিয়ে গঠন করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। কিন্তু বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি থেমে থাকেনি। সুবিধাবাদী যারা এমপি হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিচ্ছেন তারা একদিন হারিয়ে যাবেন। কিন্তু বিএনপি বটবৃক্ষের মতো টিকে থাকবে। তবে যাদের অগোছালো নেতৃত্বের কারণে বিএনপির এই দুরবস্থা তারা ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবেন না। জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বাসিন্দা কামাল আনোয়ার আহমেদ বলেন, গণতন্ত্রের মাতা ও আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথ গ্রহণ করে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যা করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।