বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় সহিংসতা বেড়েছে। ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খুলনাঞ্চল। এরই মধ্যে তেরখাদা, রূপসা এবং কয়রা উপজেলায় একাধিক হামলা, মামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সব এলাকার নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর খেদুর ব্রিজের পাশে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকা ও আজকের সংবাদে কয়রা প্রতিনিধি কয়রা প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো.শাহজাহান সিরাজকে কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে এ হামলায় গুরুতর আহত সিরাজকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক সিরাজ প্রাইভেট পড়ানো শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
এ সময় খেদুর ব্রিজের পাশে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা ১৪/১৫ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সিরাজকে কুপিয়ে আহত করে। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে নদীতে ফেলে দেয়। সিরাজের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে শাহিন নামের এক যুবককে দা’সহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। গুরুতর আহতাবস্থায় সিরাজকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারের জের ধরে সাংবাদিক সিরাজের ওপর এ হামলা চালানো হয়।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক বিশ্বাস জানান, মহারাজপুর খেদুর ব্রিজের পাশে সাংবাদিক সিরাজের ওপর হামলার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিরামপুর গ্রামের শহীদুজ্জামান ওরফে জামালের ছেলে শাহীনকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, নির্বাচনের পর কয়রা উপজেলায় একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ উপজেলায় নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসীন রেজা বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এস এম শফিকুল ইসলামের কাছে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানে মারামারির ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে ৪ এপ্রিল খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী সহকারী সমিতির দফতর সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী সানা।
তিনি বলেন,‘ভোটের দিন রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিকের বাড়িতে হামলা চালায় এস এম শফিকুল ইসলামের কর্মী সমর্থকরা। এ সময় তার স্ত্রী তসলিমা খাতুন ও পুত্রবধু ফাতেমা খাতুনকে বেদম মারধর করে। বাড়িতে থাকা মোটরসাইকেলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেজাউল করিম, মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ওহিদ মোড়ল, সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, সাজাহান সিরাজ, এস এম জিয়াদ আলী, আজহারুল ইসলাম, সাহাদাত মোল্লা, মহারাজপুরে কুদ্দুস সরদার, ইসমাইল সরদার, শাহাজান মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। নেতাকর্মীরা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
রূপসা উপজেলাতেও গত কয়েকদিনে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা আক্তার লিপির বাড়িতে হামলা হয়েছে। এতে তার ছেলে আরাফাতসহ তিন জন আহত হয়। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
৪ এপ্রিল খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী আকবর আলী শেখ বলেন, ‘নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশার অনুসারীরা শ্রীফলতলা এলাকার আব্দুল মান্নান শেখ, সাইদুল হালদার, মামুন মুন্সি ও রিপন শেখকে বেদম মারধর করে।
তিনি বলেন, তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে চেয়ারম্যানের লোকজন। পুলিশ প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রূপসায় বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী কামাল উদ্দিন বাদশা।
তেরখাদা উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর অনুসারীদের ওপর এ হামলা চলছে। এর মধ্যে রামমাঝি এলাকার সোহেল শেখ, শেখ পুরা এলাকার শহিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, আনন্দ নগরের মাকসুদুল আলম, আজগড়া গ্রামের চৌকিদার নরেন্দ্র পোদ্দার, ধানখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর মোল্লাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা এখন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। নির্বাচনে এ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার কে এম শফিউল্লাহ বলেন,‘কোন সহিংসতার খবর আমার কাছে নেই। নির্বাচনের পর পুরো জেলায় পরিবেশ শান্ত রয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।