Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাটখাতের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:২০ এএম

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, মজুরি কমিশন ও বদলিশ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবীতে মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সড়ক- রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ ধর্মঘটের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক ঘন্টা ধরে ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়। সড়ক অবরোধের কারণে পাটকল এলাকার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ও ব্যারিকেড সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করছিল। পুলিশের হ্স্তক্ষেপে কোথাও কোথাও রেলপথ ও সড়ক অবরোধ থেকে শ্রমিকরা সরে গেলেও তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। এসব দাবী নিয়ে ইতিপূর্বেও শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল কর্তৃপক্ষ বিজিএমসিরে চেয়ারম্যান ২৮ মার্চের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ বেশকিছু দাবী বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও শ্রমিকদের কোনো দাবী পুরণ না হওয়ায় তারা আবারো বিক্ষোভ-ধর্মঘটের ডাক দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। পাটকল শ্রমিকদের এই বঞ্চনা ও বিক্ষোভের সাথে এ খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার চিত্রই উঠে আসে। এক সময় দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল যে পাটখাত, তা এখন অন্যতম লোকসানী শিল্পখাত হিসেবে সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় পাটদিবস এবং দুইদিনের পাটপণ্য মেলার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গত মার্চের প্রথম সপ্তায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহারসহ পাটশিল্পের বিনিয়োগ কিভাবে লাভজনক করা যায় তা নিয়ে কাজ করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারের পক্ষ থেকে পাটশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং পাটখাতকে লাভজনক করার আশাবাদ কোনো নতুন বিষয় নয়। একদশকের বেশী সময় ধরে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যহত আছে এবং শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে পাটশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ ও প্রত্যাশার কথা শোনানো হচ্ছে। কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। সারাবিশ্বে পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে মানুষ সিনথেটিক পণ্যের বদলে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। সবচেয়ে সুলভ ও বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পাটের মত প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। চাহিদাবৃদ্ধির পাশাপাশি পাট ও পাটপণ্য রফতানী বৃদ্ধির সাথে সাথে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলোর লোকসান কমে আসার কথা থাকলেও আদতে তা দেখা যাচ্ছে না। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত(২০১৭-১৮) অর্থবছরে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলোতে লোকসান ছিল ৪৬৬ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে লোকসান হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা বছর শেষে আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশী হওয়ার আশঙ্কা ফুটে উঠেছে।
পাটখাতে সংকট নিরসন করে এর সম্ভাবনা ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত পাটের আভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাটপণ্যের বাজার চাঙ্গা করার সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। পাটের আভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধিকল্পে অনেক আগেই খাদ্যপণ্যের মোড়কে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইন করা হলেও আইন বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় তা পুরোপুরি কাজে আসেনি। কথা ছিল পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বর্হিবিশ্বে পাটপণ্যের নতুন বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাটের অর্থনৈতিক সুদিন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলে লোকসান বৃদ্ধির বাস্তবতা থেকে বোঝা যায়, সে প্রত্যাশাও পুরণ হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও পুঁজি কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে নতুনভাবে কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল খাতের এই ব্যর্থতা ও লোকসানের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও তদারকির অভাব। গার্মেন্ট শিল্পের মত পাটখাতেও বেসরকারী উদ্যোগই আমাদেরকে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাতে পারে। অতীতে রাষ্ট্রায়াত্ত অনেক পাটকল বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়ার পর অধিকাংশ পাটকলই লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে লুপ্তপ্রায়। রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলোকে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট বন্ধ করে লাভজনক করে তোলা অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলতে হবে। অপ্রয়োজনীয় জনবল বাদ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী দাওয়া পুরণ এবং পাটখাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে গবেষণা ও সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে এ খাতে নতুন নতুন পণ্য ও দেশে-বিদেশে নতুন বাজার সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাটশিল্পের সাথে দেশের পাটচাষী, পাটকল শ্রমিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বার্থ জড়িত। পাটকল শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ-অবরোধে নেমে আসুক এটা কারোই কাম্য নয়। আগামী রমজান মাস ও ঈদের আগেই রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া পুরণ হবে, এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন