পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নবীপ্রেমের পথ ধরে যারা খোদার সান্নিধ্য লাভ করেছেন তাদের মধ্যে চির স্মরণীয় হযরত। বেলায়তের পথ পরিক্রমায় মনজিলে মকছুদের সোনালী গন্তব্যে পৌঁছেছেন। শুধু তাই নয় তার অনুসারীরাও যাতে সেই পথ ধরে খোদা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন সেজন্য রেখে গেছেন রাসুলনোমা তরিক্বত। যার ছায়াতলে এসে পথহারা মানুষ পেয়েছে নবীর নৈকট্য খোদার সান্নিধ্য। এভাবেই দিশাহীন সৃষ্টির দিশা হয়ে ধরণীকে আলোকিত করেছেন কাগতিয়ার মরহুম পীর সাহেব।
গতকাল বুধবার বাদ এশা চট্টগ্রাম রাউজান কাগতিয়া দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত কাগতিয়া দরবারের মরহুম প্রতিষ্ঠাতা স্মরণে ৬৬তম পবিত্র মিরাজুন্নবী (দঃ) ও সালানা ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে এ মহামনীষীর একমাত্র খলিফা, প্রিন্সিপাল শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী বক্তব্যে এ কথা বলেন।
এসময় মসজিদের বিশাল মাঠসহ পুরো দরবার শরীফ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কোথাও তিলধারণের কোনো জায়গা ছিল না।
এদিন ফজরের নামাজের পর খতম শরীফ, মোরাকাবা, ঈছালে ছাওয়াব, কবর যিয়ারত, মিলাদ-কিয়াম ও মুনাজাতের পর খতমে কুরআন ও বুখারী শরীফের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরছের কর্মসূচি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কাগতিয়া দরবার থেকে পূর্বেই ঘোষণা হয়েছিল ওরছে কারোর কাছ থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, টাকা-পয়সা, নজর-নেওয়াজ ইত্যাদি নেয়া হবে না, চলবে না শরীয়ত পরিপন্থী কোন কার্যকলাপ, শুধু কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণে পালিত হবে এ মহামণীষীর সালানা ওরছ। তাই কাগতিয়া দরবারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে একটানা দিন-রাত ব্যাপী ইবাদত-বন্দেগী, খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, মিলাদ-কিয়াম, যিকরে এলাহী, নির্দিষ্ট তরতীবে নবীর শানে দরুদপাঠসহ নানান কর্মসূচি। আলোকসজ্জিত করা হয় মসজিদসহ পুরো দরবার শরীফ। সপ্তাহজুড়ে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উত্তোলন করা হয়েছিল তোরণ এবং বিভিন্ন ভবন ও আইল্যান্ডগুলোতে শোভা পাচ্ছিল কুরআন-হাদিস ও মরহুম পীর সাহেবের বাণী সম্বলিত ফেস্টুন ও ব্যানার।
এদিন ভোর থেকে টুপি ও তসবিহ হাতে পায়ে হেঁটে, কেউবা গাড়িযোগে দলেদলে কাগতিয়া দরবারে আসতে থাকে এ মহামনীষীর লাখো অনুসারী, ভক্ত, হাজার হাজার আলেম, হাফেজ, যুবক, এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ধর্মপরায়ণ মুসলমান। প্রথমে জিয়ারত করে কুরআন তিলাওয়াত ও তাহলিল আদায় করতে থাকেন হাফেজ ও সাধারণ মুসলমানরা আর আলেমগণ আদায় করতে থাকেন খতমে বুখারী। ছোট শিশুরাও বসে নেই, তারাও দলবেঁধে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করতে থাকে। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে সবার মুখেমুখে শুধু উচ্চারিত হচ্ছে সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয়াত, তাহলিল ও নিম্নস্বরে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ যিকর এবং নবী (দঃ)’র শানে দরুদ পাঠ। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, প্রশান্তিময় পরিবেশ। শুধু দেশের নয়, সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে আসা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মধ্যপ্রাচ্য, সউদী আরব, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের শতশত অনুসারী এতে অংশ নেয়। জোহরের পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে এ কার্যক্রম। বিদেশে অবস্থানরত এ মনীষীর অনুসারীরাও বাদ পড়েননি, তারাও এদিন স্বস্ব স্থানে বসে আর মহিলারা নিজেদের ঘরে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকেন। জোহরের পর কবর জিয়ারত শেষে শুরু হয় আলোচনা। এতে আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুর, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ ওলামা পরিষদের সভাপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম হানফী, সচিব আল্লামা মুফতি কাজী মুহাম্মদ আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকী, সহ-এশায়াত সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ এমদাদুল হক মুনিরী, আল্লামা মুহাম্মদ সেকান্দর আলী, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হক প্রমুখ। বাদ আসর ফয়জে কোরআন, বাদে মাগরিব তাওয়াজ্জুহর মাধ্যমে নূরে মুহাম্মাদী বিতরণ, মোরাকাবা ও তাবাররুক বিতরণের পর এশার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে হামদ ও নাত। পরিবেশন করেন মুনিরীয়া যুব তবলীগের কেন্দ্রীয় হামদ-নাত পরিষদের সদস্যরা। পরিশেষে মুনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্র সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।