পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় ‘স্ত্রীর প্রমোশন ও ভাইয়ের ডিমোশন’ ইস্যুতে নিজের নেতৃত্ব নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ। ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা পদ থেকে সরিয়ে স্ত্রী রওশনকে সংসদে উপনেতা করায় মূলত তিনি এই চ্যালেঞ্জে পড়েন। লাঙ্গলের দুর্গ রংপুর হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম। জিএম কাদেরকে ৫ এপ্রিলের মধ্যেই পার্টি এবং সংসদের পদে পুনর্বহাল করা না হলে রংপুর বিভাগের সব দায়িত্বশীল নেতা পদত্যাগ এবং জাতীয় পার্টির সব ধরণের কার্যক্রম প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জাপা নেতারা সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। এ যেন এরশাদের জন্য ‘ইট মেরে পাটকেল খাওয়া’ অবস্থা। হুইল চেয়ারের সঙ্গী অসুস্থ এরশাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১-ক ধারা প্রয়োগ করে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদ ‘নারীকে পুরুষ ও পুরুষকে নারী’ বানানো ছাড়া সবই করতে পারেন। তিনি কখন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না। ১৯৮২ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে এরশাদ সিএমএলএ হয়েছিলেন। তখন নিত্যদিন নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেন। সে জন্য সিএমএলএ পদবির নতুন নামকরণ করা হয় ‘ক্যানসেল মাই লাস্ট অ্যানাউন্সমেন্ট’। তিনি নিজের সিদ্ধান্ত কখন পরিবর্তন করেন কেউ জানেন না। ফেসবুকে একটি ‘লাইক’ দিতে যে সময় লাগে সে সময়ের মধ্যেই এরশাদ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন বলে প্রচার রয়েছে। দেশের রাজনীতিতে আনপ্রেডিক্টেবলখ্যাত এরশাদ ছোটভাই জিএম কাদেরকে ২২ মার্চ দলের কো-চেয়ারম্যান ও ২৩ মার্চ সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা পদ থেকে সরিয়ে দেন। ২৪ মার্চ স্ত্রী রওশন এরশাদকে সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা করেন। ২০ মার্চ ৯০তম জন্মদিন পালনে এরশাদের ‘এটাই হয়তো আমার জীবদ্দশায় শেষ বক্তব্য’ ঘোষণার পর হঠাৎ করে জিএম কাদেরকে অব্যাহতি তাকে চ্যালেঞ্চে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য জাপার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ ও মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে এরশাদকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছেন।
গণবিরোধী এবং সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে এরশাদ বহুবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। জাতীয় পার্টি ১০ দফায় ভেঙ্গেও গেছে। কিন্তু এবারের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। এক সময়ের ‘গণধিকৃত স্বৈরশাসক এরশাদকে যারা ‘রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা’ করেছেন তারাই এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন। ক্ষমতায় থাকার সময়ও এরশাদ রংপুরে সভা সমাবেশ করতে পারেননি। এরশাদের সভা আয়োজন হলেই জনগণ জুতা প্রদর্শনী করতেন। ’৯০ এর পটপরিবর্তনের পর ‘বন্দী এরশাদকে ফাঁসি থেকে বাঁচাতে ‘হামার ছাওয়াল’ শ্লোগান দিয়ে যারা আন্দোলন করে ’৯১ এর নির্বাচনে এরশাদের প্রার্থীতা গ্রহণে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রশাসনকে বাধ্য করেছিলেন তারাই এই চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। জনতা টাওয়ার মামলায় ’৯৯ সালে দ্বিতীয় দফা কারাগারে গেলে এরশাদের মুক্তির দাবিতে এরাই ‘এরশাদ মুক্তিমঞ্চ’ গঠন করে তহবিল সংগ্রহ করেন। শুধু তাই নয় গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী হলেও ভোট দিতে যাননি এরশাদ। অথচ তাকে এমপি করেছেন স্থানীয় নেতারা। ওই নেতাদের মতে অসুস্থ এরশাদ সিন্ডিকেট ও টাউটদের খপ্পড়ে পড়ে রক্তের ভাই জিএম কাদেরকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল উপস্থিত ছিলেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাপার মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলা জাপার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, নীলফামারী জেলার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ, কুড়িগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, লালমনিরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক ময়েন উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান স্বপন, দিনাজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ শফি রুবেল ও পঞ্চগড় জেলা সভাপতি আবু সালেহসহ শতাধিক নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এইচ এম এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে জাপাকে ধ্বংসের গভীর ও পরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে। সেই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতেই জাপার কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে দলের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে; যা জাপার মূলধারার কোনও স্তরের নেতাকর্মীর পক্ষে মানা সম্ভব নয়। জাপাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা এবং চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা রংপুর বিভাগের আট জেলা, মহানগর, পৌরসভা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির ক্রান্তিকাল থেকে এখন পর্যন্ত দলকে সংগঠিত করার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটি কুচক্রীমহল দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্ররোচনা দিচ্ছে। এতে করে জাপার সুনাম ক্ষুন্ন ও দলের চেয়ারম্যান এরশাদের ব্যাপারেও দেশের জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল ধারণা হচ্ছে। ওই কুচক্রীমহলটির প্ররোচনায় গত ২২ মার্চ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে স্বপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা দলের প্রধান এইচ এম এরশাদের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই, এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জিএম কাদেরকে পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে জিএম কাদেরের অব্যাহতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পুনরায় তাকে স্বপদে বহাল করার জন্য এরশাদের প্রতি দাবি জানাই। অন্যথায় রংপুর বিভাগের সব নেতাকর্মী গণপদত্যাগ এবং সেই সঙ্গে রংপুর বিভাগে দলের যে কোনও কর্মকান্ড প্রতিহত করা হবে।
যারা জাপা করেন তাদের কাকে কখন এরশাদ ‘কোতল’ করেন আর কাকে ‘মাথায় তুলে নাচেন’ বোঝা মুশকিল। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মতো এরশাদকে ঘিরে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এরা এক সময় এরশাদকে ‘নানান কিছু’ সাপ্লাই দিতেন। এরশাদ তাদের কাছে দুর্বল হওয়ায় এখন ওরা ক্ষমতাধর। ওদের ‘নাচের পুতুল’ হয়ে গেছেন এরশাদ। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও কে তার শত্রু আর কে মিত্র তিনি চিনতে পারেন না। তিনি দলে যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদে পড়ছেন। ক্ষমতা হারানো এবং দফায় দফায় এমপি হওয়ার পর এরশাদের শখ ছিল একদিনের জন্য হলেও প্রেসিডেন্ট হবেন। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগদানের সময় সে চুক্তিও হয়। ভাগ্যের সিঁকে ছেঁড়েনি। পরবর্তীতে সংসদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার ‘খায়েশ’ প্রকাশ করেন। দশম সংসদে স্ত্রীর ক্যারিকেচায় পড়ে সে শখও পুরণ করতে পারেননি। ২০১৪ সালে এরশাদকে সাইজ করে নির্বাচনে গিয়ে রওশন সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন। তখন জিএম কাদের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরও বিপদগ্রস্থ বড়ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন। শুধু তাই নয় স্ত্রী রওশন ২২ বছর থেকে পৃথক বাসায় থাকেন। ২০০৭ সালে জাপাকে ভেঙ্গে নিজের নেতৃত্বে পৃথক দল গঠন করেন রওশন। তিনি বিএনপির পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেন। ওয়ান/ইলেভেনে সে নির্বাচন অবশ্য বাতিল হয়ে যায়। এবার সংসদে এরশাদ শুধু বিরোধী দলের নেতা নন, হয়েছেন হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননদেরও নেতা। ১৪ দলীয় জোটের শরীক আওয়ামী লীগ বাদে সব দলের নেতা এরশাদ। যদিও ১৪ দলের নেতারা তাঁকে বিরোধী দলের নেতা মানতে রাজী নন। বাস্তবতা সংসদীয় রীতিতে হয় সরকারি দলে, না হয় বিরোধী দলে থাকতে হবে। মাঝামাঝি কোনো পথ নেই। এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের নেতা হয়ে ভাই জিএম কাদেরকে উপনেতা করেন। অসুস্থতার কারণে তিনি স্বাভাবিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। উপনেতাই সংসদের কাজ চালান। জিএম কাদের দলকে সত্যিকারের বিরোধী দল করতে চাচ্ছেন। কিন্তু সিন্ডিকেট রওশন এরশাদকে উপনেতা পদে বসিয়ে নিজেদের আয় রোজগার অব্যাহত রাখতে চান। এই বিরোধেই ভাইয়ের বদলে স্ত্রীকে মূল্যায়ন করে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছেন এক সময়ের দৌদ্যান্ত প্রতাপশালী এরশাদ। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।