পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় জটমুক্ত। আমদানি-রফতানি পণ্যের চাপ বাড়লেও অলস বসে থাকে না জাহাজবহর। কন্টেইনারবাহী, খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রীর এলোমেলো স্তুপ নেই। জেটি-বার্থে কিংবা বহির্নোঙরে জাহাজের সময় নষ্ট হয়না। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে এসেছে। এরফলে কমেছে বন্দর-ব্যয়।
তৈরি পোশাকসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি, খালাস, ট্রানজিট মজুদ, ডেলিভারি পরিবহন এবং রফতানিমুখী পণ্য জাহাজীকরণ সহজ হয়ে উঠেছে। বৈদেশিক বাণিজ্য কন্টেইনার-নির্ভর। অনেকাংশেই ঝামেলামুক্ত। এরফলে গতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। বেগবান হয়েছে সামগ্রিকভাবে শিপিং খাত। বন্দর-শিপিং কার্যক্রম চাঙ্গা হওয়ার সাথে সাথে জাতীয় রাজস্ব আহরণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী ওঠানামায় গতবছরে প্রবৃদ্ধির হার ১৩ শতাংশ। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ। বন্দর ও শিপিং খাত বিস্তৃত হওয়ার কারণে আমদানি-রফতানি বাড়ছেই।
বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ ও চাহিদা সামাল দেয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-সীমা সম্প্রসারণ করা হবে মহেশখালী বহির্নোঙর পর্যন্ত। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদীর জাহাজ চলাচলের চ্যানেলের নাব্যতা বাড়াতে চলছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম। নতুন একাধিক কন্টেইনার টার্মিনাল ও ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। বন্দরে জাহাজ সরাসরি জেটিতে এসে ভিড়ছে। অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে নিরবচ্ছিন্ন। চট্টগ্রাম বন্দর ৫, ১০ বছর কিংবা আরও আগের তুলনায় অনেক উন্নত, সুশৃঙ্খল ও গতিশীল। অতীতে জেটিতে ভিড়ার জন্য ৩ দিন, ৫ দিন, ৭ দিন এমনকি ১০ থেকে ১২ দিনও জাহাজবহরকে বহির্নোঙরে অলস অপেক্ষায় থাকতে হতো। এখন ২৪ কিংবা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই জাহাজ জেটি-বার্থে ভিড়ছে। আমদানি পণ্য খালাস এবং রফতানি শিপমেন্ট করে বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে।
কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী ওঠানামায় চট্টগ্রাম বন্দর অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে চলেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টিইইউস। আগের বছর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২ লাখ। চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২০১৮ সালে ২৯ লাখ তিন হাজার ৯৯৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। ২০১৭ সালে হ্যান্ডলিং হয় ২৫ লাখ ৬৩ হাজার। যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৩ লাখ বেশি। কন্টেইনার-নির্ভর শিপিং বাণিজ্যের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রয়েছে। গত ২০১৬ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ২৩ লাখ ৪৬ হাজার, ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার, ২০১৪ সালে ১৭ লাখ টিইইউএস।
গত ২০১৮ সালে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন সাধারণ খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। এ খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। এ সময় বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া করে ৩ হাজার ৭৪৭টি। দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে কাস্টমস শুল্ক-কর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চার্জ-ট্যারিফ ছাড়াও সরকারের পরোক্ষভাবে বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার কোটি রাজস্ব আয় আসছে। এরমধ্যে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক দেশের একক বৃহৎ রাজস্ব জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের পরিমান ৪২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ৫৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
কী গ্যানট্রি ক্রেনসহ ভারী ও মাঝারি নতুন নতুন যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংযোজন, কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণসহ অবাকাঠামো সুবিধা সম্প্রসাণ, বন্দরের নানামুখী উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু বন্দর-শিপিং ব্যবস্থাপনার ফলেই গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারীগণ। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি এবং পোর্ট ইউজারস ফোরামের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম বলেন, বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য ইতিবাচক। বৈদেশিক বাণিজ্যের চাহিদা পূরণ এবং রফতানি আরও ব্যয় সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করেই দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
গত ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম এবং কাস্টম হাউস ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলো সার্বক্ষণিক খোলা (৭/২৪) রাখা হচ্ছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গত বছর নতুন ৬টি কী গ্যানট্রি ক্রেন সংযোজন হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে আসছে আরো ৪টি। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে ১০টি কী গ্যানট্রি ক্রেন বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের গতি দ্বিগুণ করবে। তাছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বন্দরের সাউথ কন্টেইনার ডিপো চালু হয়েছে। ২০২১ সালের গোড়াতে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মিত হবে। লালদিয়ার চরে কন্টেইনার টার্মিনালের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এরফলে অবাকাঠামো সক্ষমতা আরও বাড়বে। যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহ ও অবাকাঠামো সুযোগ-সুবিধা তৈরির লক্ষ্যে চলমান প্রকল্পে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। বন্দরে এখন আগের তুলনায় বড় আকারের জাহাজ ভিড়ছে। আগে যেখানে ১৫০ থেকে ১৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তো এখন ১৮০ থেকে ১৯০ মিটারের জাহাজ বার্থিং করছে।
জাহাজ আগমনের ক্রমবর্ধমান চাপ সামাল দেয়া এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আট বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-সীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে নৌ-সীমা ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করার প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘নিরাপদ পোতাশ্রয়’ হাজার বছরের চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সুবিধা নিয়ে যাত্রার শুরুতে বন্দরের নৌ-সীমা ছিল ৫ নটিক্যাল মাইল।
পরবর্তী সময়ে আলফা (এ), ব্র্যাভো (বি) এবং চার্লি (সি) নামে তিনটি অ্যাংকারেজে বিভক্ত করে বন্দরের নৌ-সীমা বাড়ানো হয় ৩১ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত। ২০১১ সালে তা ৭ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত হয়। এবার প্রস্তাবিত ৫০ নটিক্যাল মাইল নৌ-সীমা অনুমোদিত হলে সেটি পতেঙ্গা উপক‚লের উত্তরে কাট্টলী-সীতাকুন্ড এবং দক্ষিণে আনোয়ারার গহিরা থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া পর্যন্ত প্রসারিত হবে। কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি ঘিরে এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। জ্বালানি কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-সীমা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।