পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও/ আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব’ (নেপোলিয়ন বোনাপার্ট)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৈত্রী-রোকেয়া হলের ছাত্রীরা প্রমাণ করেছেন এরাই আমাদের মা-বোন; আগামীর কন্যা-জায়া-জননী। প্রতিবাদী হয়ে ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের ভোটের অধিকার আদায় করা এই মেয়েরা ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শাসক সুলতানা রাজিয়া, ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের নেত্রী দেবী চৌধুরানী, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার উত্তরসূরী। ঢাবির এই ছাত্রী এবং তাদের সুযোগ্য সন্তানরাই জাতিকে নতুন পথ দেখাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৈত্রী হল, রোকেয়া হল ও অন্যান্য হলের ছাত্রীরাই ভোটের অধিকার হারানোর এই দেশে নারী সমাজের অধিকার আদায়ের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন। নারী অধিকার আদায়ের নামে বিদেশি এনজিও’র অর্থে যে নেত্রী ও তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা প্রায়ই রাজপথে মিছিল করেন; টকশো উত্তপ্ত করেন তারা ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমাদের এজেন্ট। বিদেশীদের টাকায় এদেশে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চায় এজেন্টের ভূমিকায় নেমে তারা আধুনিক-স্মাট বেশভুঁষার ধোয়া তুলে বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা করছেন। নারী স্বাধীনতার নামে উলঙ্গপনার নৃত্য করে সমাজে অশান্তির বীজ বপণ করছেন। মুখচেনা ওই নারীরা এদেশের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন না; করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হলগুলোর শিক্ষার্থীরা। ১১ মার্চ গোটা বিশ্ব দেখেছে আমাদের এই মেয়েদের ভোটের অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী চেতনা।
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। জাতীয় কবির এই উক্তি যথার্থই। ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নারীদের ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে যে ৬শ’ ৭৬ জনকে বীর যোদ্ধাকে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করা হয়; তার মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র দু’জন; ডা. সেতারা বেগম ও তারা ভানু বিবি (তারামন বিবি)। কিন্তু হাজার হাজার মা তাঁর চোখেরমণি প্রাণপ্রিয় সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন দেশমাতৃকারযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে তাদের অনেকেই ফিরে এলেও কতজন ফিরে আসতে পারেননি তার হিসেব নেই। সেই মহিয়সী নারীরা পুত্রকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়ে নিজেরা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন-স্বার্বভৌম। ’৫২ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের মিছিলে সামনের কাতারে ছিলেন নারীরাই।
নির্বাচনকে উৎসব মনে করা দেশের মানুষ এখন ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের আমজনতা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ভোটের অধিকারের জন্য জীবন দিতে যারা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তারা এখন উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না; এমনকি প্রার্থী হতেও চাচ্ছেন না। যার জন্য অধিকাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাননি। কারণ মানুষ মনে করছেন তাদের ভোট দিতে দেয়া হবে না; দিলেও তিনি যাকে ভোট দেবেন প্রশাসনযন্ত্র তাকে বিজয়ী ঘোষণা করবে না। ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ শব্দমালা শুধু সংবিধানের শোভাবর্ধন করছে। ভোটের প্রতি মানুষের এই অনিহার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মৈত্রী হলের ছাত্রীরা নিজেদের ভোটের অধিকার কিভাবে আদায় করে নিয়েছেন মিডিয়ার সচিত্র খবরের বদৌলতে দেশ-বিদেশের মানুষ দেখেছেন। নির্বাচনের সময় গোপনে সিলযুক্ত ব্যাটল বাক্স উদ্ধার করেছেন ছাত্রীরাই। জালভোট, ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্লজ্য দলদাস কর্তৃপক্ষের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। উপমহাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রদূত মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের নামে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া হলে তিন ট্রাঙ্ক ভর্তি ব্যালট উদ্ধার করেছে শিক্ষার্থীরা। আরো হলসহ কয়েকটি হলে একই দৃশ্য দেখেছে ছাত্রছাত্রীরা। শুধু তাই নয়, নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে অনশন কর্মসূচিও পালন করেছে ছাত্রীরা। যদিও হল প্রভোস্টের ঘষেটি বেগমের ভূমিকার কারণে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের হেনস্তা হতে হয়েছে। ভীতি আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।
নির্বাচনে ভোট দেয়া ও প্রার্থী হওয়া নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন আতঙ্কিত। জুলুম নির্যাতনের ভয়ে নিজেদের ভোটের অধিকার ছেড়ে দিয়েছেন। নির্যাতনের ভয়ে নিজেদের ভোট প্রয়োগের অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হন; তখন ছাত্রীরা তুমুল প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। তারা চলমান ভীতি সংস্কৃতির শ্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজেদের ভোটের অধিকার আদায় করে নিয়েছেন। তারা বিশ্ববাসীকে জানান দেন এই আমাদের আগামীর কন্যা-জায়া-জননী।
ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী যোদ্ধার নাম সুলতানা রাজিয়া। এই নারী ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শাসক (সুলতানী আমল)। সুলতানী শাসনামলে ১২৩৬ থেকে ১২৪০ পর্যন্ত তিনি ভারতবর্ষ শাসন করেন। বুদ্ধিমতী, চৌকস, প্রজাপ্রীতি ও যুদ্ধকৌশলী হিসেবে তাঁর ছিল সুখ্যাতি। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্যা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লার পরাজয়ের পর যারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম দেবী জয়দুর্গা চৌধুরানী। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ওয়ারেন হেস্টিংস হাজার সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে রংপুরের পীরগাছার দেবী চৌধুরানীর ‘মন্থনা’ পরগনা। ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে করতে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন বীরাঙ্গনা দেবী চৌধুরানী। ইলামিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দারসহ আমাদের অনেক মহিয়সী নারী-পুরুষদের পাশাপাশি ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় তারা পেয়েছেন গৌরবের জায়গা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ‘ভোটের অধিকার আদায়ের’ ঘটনা সুলতানা রাজিয়া ও বীরাঙ্গনা দেবী চৌধুরানীর মতো না হলেও এটা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচনের দিকে দেশ-বিদেশ সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, অব্যবস্থাপনা, দলবাজী চেতনা এবং অপকৌশলে পড়ে ভোট দিতে বাধাপ্রাপ্ত হন। জাতীয় নির্বাচনের মতোই ডাকুস নির্বাচনেও ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভোটের বাক্স ভর্তির অপচেষ্টা হয়। কিন্তু লড়াকু ছাত্রীরা কিছুটা হলেও সেই অপচেষ্টা রুখে দিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত; দেশে কিছু নারী নেত্রী রয়েছেন তারা নারীর অধিকারের নামে তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন করছেন যুগের পর যুগ ধরে। মূলত: বিদেশি এনজিওর প্রেসক্রিপশনে সীমাবদ্ধ এই নারী নেত্রীদের আন্দোলন। এরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে নারীর স্বাধীনতা বলতে রাস্তায় পুরুষের মতো নারীর চলাফেলা করা, পর্দা না করা, পথে প্রান্তরে নারী-পুরুষ একাকার হয়ে হাঁটা এবং আল্টা-মর্ডান হওয়াকে প্রচার করেন। প্রগতিশীলতার নামে পশ্চিমা ও হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি চর্চায় নারীদের উৎসাহিত করেন। এনজিও কর্মী, নারী নেত্রীরা মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে দেশে নারীমুক্তি ও ক্ষমতায়নের কথা প্রচার করেন; অথচ সমঅধিকারের নামে নারী সমাজের প্রতি বেলেল্লাপনা ছড়িয়ে দেন। পর্দার বিরোধিতা করে নারীদের মগজ ধোলাই করেন। হেজাব পর্দায় শিক্ষিত নারীদের নিরুসাহিত করে পশ্চিমা স্টাইলে চলাতে প্ররোচিত করেন। এতে করে কিছু শিক্ষিত নারীর প্রতি পুরুষদের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। এনজিও কর্মী ও তথাকথিত ওই নারী নেত্রীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটের অধিকার আদায়কারী ছাত্রীদের তুলনা চলে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।