গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর ক্ষেত্রে আগামী ২০ মাসে শেষ করতে হবে ৭৮ শতাংশ কাজ। অথচ প্রকল্প শুরুর প্রথম ১৯ মাসে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র সাড়ে ২১ শতাংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশাবাদ জানালেও নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে প্রকল্পটি ধীরগতিতে চলছে বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এমনকি মহাসড়ক বিভাগের পিছিয়ে থাকা ১০ প্রকল্পের মধ্যেও রয়েছে মেট্রোরেল। নির্মাণকাজে পিছিয়ে থাকায় ‘অব্যয়িত’ থেকে যাচ্ছে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের ‘একটা বড় অংশ’।
মহাসড়ক বিভাগের তথ্য বলছে, মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন ৬-এর নির্মাণকাল নির্ধারিত ছিল ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত। পরে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ও আগারগাঁও-মতিঝিল অংশটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের সংশোধিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। পুরো কাজ শেষ করতে মহাসড়ক বিভাগের হাতে সময় আছে মাত্র ২০ মাস।
দুই ধাপে চলছে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কাজ। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও অংশের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শেষ করতে মাত্র আট মাস সময় হাতে আছে।
উত্তরা-আগারগাঁও অংশটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ৩৯৩টি পিয়ার (খুঁটি) বসবে এই অংশে। এখনো ১৮৪টি পিয়ারের কাজ বাকি আছে। পিয়ারগুলোকে শক্ত ভিত দিতে পাইল নির্মাণ হচ্ছে ৭৬৬টি, যদিও বাকি আছে ২৭৩টি পাইলের কাজ। একইভাবে ১০৮টি টিআই গার্ডারের মধ্যে বাকি আছে ৩৩টি। ৪ হাজার ৫৭৭টি প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিংয়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮৬৯টির। উড়ালপথের মধ্যে মাত্র আড়াই কিলোমিটারে স্থাপন হয়েছে ভায়াডাক্ট। দিয়াবাড়ি থেকে শুরু হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ভবন পর্যন্ত মোট নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। হাতে মাত্র আট মাস সময় থাকলেও চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল বাদে স্টেশনের আর কোনো কাজ শুরুই হয়নি।
মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। ঝুলন্ত তার (সিম্পল ক্যাটনারি ওভারহেড ওয়্যার) থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছবে ট্রেনের ইঞ্জিনে (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট মোটর)। প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল ব্যবস্থা সরবরাহ ও নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত নকশা সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক কেবল স্থাপনের জন্য সবে শুরু হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে টঙ্গী ও মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন। সাবস্টেশন দুটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ বর্তমানে এগিয়ে চলছে।
মোট ২৪ সেট ট্রেন চলবে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোতে। ট্রেনগুলো নির্মাণ করছে জাপানি রোলিংস্টক নির্মাতা কাওয়াসাকি-মিত্সুবিশি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মহাসড়ক বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, পাঁচ সেট ট্রেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ও বাকি ১৯ সেট ২০২১ সালের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। মহাসড়ক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেনগুলোর চূড়ান্ত নকশার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বগি নির্মাণের কাজ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনায় গঠিত ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ঠিকমতোই এগিয়ে চলছে। দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন।
আগামী ২০ মাসের মধ্যে ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ করা কীভাবে সম্ভব, জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাবেক এ সচিব বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঠিকাদারদের সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে তদারকি।
এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে মহাসড়ক বিভাগ। প্রতিবেদনে ‘অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়’, এমন দশটি প্রকল্প তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছে বাস্তবায়নাধীন উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল।
নির্মাণকাজে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থের ‘একটা বড় অংশ’ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। গত ১০ মার্চ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত সভায় এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতিনিধি।
উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ করা হচ্ছে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ, যার দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ১১ কিলোমিটার। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ অংশের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ হবে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হবে।’
আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পরিষেবা স্থানান্তর ও চেক বোরিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১৯৭টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ৩৫টি ট্রায়াল পিট এবং ৪৫০টি বোরড পাইলের মধ্যে তিনটি সম্পন্ন হয়েছে। কারওয়ান বাজার-মতিঝিল অংশে ১৫১টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ৩৭টি, ৬৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ছয়টি বোরড পাইল সম্পন্ন হয়েছে।
১৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি নির্মাণ করছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। অন্যদিকে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশ জাপানের টেক্কেন করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড। আর কারওয়ান বাজার-মতিঝিল অংশটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানি সুুমিতোমো মিতসুই কনস্ট্রাকশন ও ইতাল-থাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।