পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ফ্লাইওভার। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু ও ভুলতা ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে দেশের দুটো প্রধান মহাসড়কের যানজট অনেকটাই কমবে। কমবে ভোগান্তি। গতি পাবে অর্থনীতি। কারণ যানজটে প্রতিদিন কোটি কোাট টাকা গচ্চা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। অন্য একটি হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতির পরিমান কমপক্ষে ২৭৪ কোটি টাকা। অবশ্য এটি পুরনো হিসাব। বর্তমান হিসাবে এর পরিমান ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আর যাতায়াতে সময় অপচয়ের কারণে যাত্রীদের ক্ষতি ১ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানবাহনের ক্ষতি ৫৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া যানজটে জ্বালানী অপচয় হয় ২ হাজার কোটি টাকা, পরিবেশগত ক্ষতি ১ হাজার কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ৩০০ কোটি ও অন্যান্য ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতি ৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আর্থিক ক্ষতির পরিমান কম।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রাম ও প্রধান সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল সুগম করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু চার লেনের সুফল পাওয়ার আগেই যানজটের যন্ত্রণায় সব ¤øান হয়ে যায়। অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়তে থাকে। যানজটে একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি। চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে এক লেনে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে যানজট লেগেই থাকে। তার উপর সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনটি সেতুর কারনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি যানবাহন চলাচল ও মালামাল পরিবহণের জন্য মোটেও উপযোগী নয়।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ঝুঁকির মুখে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর পাশেই মহাসড়কে জনদুর্ভোগ কমাতে আরও তিনটি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক বিভাগ। ২০১৬ সালে কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল হলেও কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে। তবে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী ওভারপাসের নির্মাণের কাজ চলছে। সেতটিু নির্মাণ করা হয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে।
সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, সেতুটি চালু হলে মহাসড়কে বিদ্যমান ভোগান্তি অনেকটাই নিরসন হবে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়কপথের যোগাযোগ যুগোপযোগী, সহজ, দ্রæত ও যানজটমুক্ত করতে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতটি খুলে দিলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ভ্রমণ সময় অর্ধেকে নেমে আসবে। দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তে মাত্র ৪ ঘণ্টায় এ পথের দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এ ছাড়া এতে যানজট লাঘবের পাশাপাশি দুর্ঘটনা নূন্যতম পর্যায়ে নেমে আসবে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সহজতর, সাশ্রয়ী হবে বলেও আশা করছেন এ সড়কে চলাচলরত যাত্রী, ব্যবসায়ী ও চালকরা।
অন্যদিকে, নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪ লেন বিশিষ্ট ৩ তলা ভুলতা ফ্লাইওভার সরকারের একটি মেগা প্রকল্প। আগামীকাল শনিবার এশিয়ান হাইওয়ের (বাইপাস) ভুলতা ফ্লাইওভারের গাজীপুর-মদনপুর সড়কের একটি লেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে এখানকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কমবে সাধারন মানুষের ভোগান্তিও। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম ফ্লাইওভার পরিদর্শন করেন।
স্থানীয়রা জানান, রুপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তহম পাইকারি কাপড়ের বাজার ‘গাউছিয়া মার্কেট’। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগস্থল হওয়ায় এখানে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। ভুলতা ফ্লাইওভারটির একপাশ খুলে দেওয়া হলে যানজট নিরসন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। এতে করে সারাদেশের এ উপজেলার সাথে সারাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা গতিশীল হবে। ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ হওয়ার কারণে এ এলাকায় জমির দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় যানজট তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এক ঘন্টার পথ যেতে সময় লাগে তিনঘন্টা। ভুলতা ফ্লাইওভারের কাঞ্চন-মদনপুর লেনের উদ্বোধন হলে যানজট অনেকাংশে যাবে বলে তারা মনে করেন। এতে করে সাধারন মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এ ফ্লাইওভারটি চালু হলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ বিভাগসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা জনগনের যাতায়াত ও পন্য পরিবহন দ্রæত, সহজ ও নিরাপদ হবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ২৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ লেন বিশিষ্ট ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রæপ কোং, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও এএম বিল্ডার্স। চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার। মূল ফ্লাইওভারের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা, সড়ক নির্মাণে ব্যয় ১১২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ধরা হয় সাড়ে সাত কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল গত বছরের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরো ১ বছর বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে চলতি বছরের ৮ আগষ্ট ফ্লাইওভারটি নির্মাণে আরও ৫৮ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৪৮৬ টাকা বাড়ায় মন্ত্রীসভা কমিটি। গবেষক, কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, ভুলতা ফ্লাইওভারটি রূপগঞ্জবাসীর জন্য একটি স্বপ্নের ফ্লাইওভার। আর এ ফ্লাইওভারটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে সকলে। চালুর পর যানজট মুক্ত থাকবে ভুলতা এলাকা। পাট ও বস্ত্রী মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, চার লেন বিশিষ্ট ৩ তলা ফ্লাইওভারটির এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) কাঞ্চন-মদনপুর সড়কের ফ্লাইওভারটির পুরো সম্পন্ন হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।