২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এ্যালার্জি শব্দটা যদিও আজ আর কারও কাছে নতুন কিছু নয়, তবুও এটা সম্পর্কে সার্বিক ধারণা থাকা সবার জন্য অতীব জরুরী। কেননা শ্বাসকষ্ট, একজিমাসহ বহু চর্মরোগের জন্য দায়ী এই এ্যালার্জি। ধুলাবালি, ফুলের রেণু, নির্দিষ্ট কিছু খাবার ও ওষুধ মানুষের শরীরে প্রদাহজনিত যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সাধারণভাবে তাকেই আমরা এ্যালার্জি বলে জানি। এ্যালার্জি শব্দটা দুটি গ্রিক শব্দের সমন¦য়ে তৈরি, সম্মিলিতভাবে যার অর্থ দাঁড়ায় পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া। কিছু এ্যালার্জেন (যা এ্যালার্জি তৈরি করে) এর নাম- মাইট (এমন কিছু যা পুরনো কাপড়ে জন্মায়) সিগারেটের ধোঁয়া কুকুর, বিড়ালের পশম, প্রস্রাব ও লালা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া - ফুলের রেণু - বিশেষ কোন খাবার - ঘরের ধুলাবালি - হরমোন ইনজেকশন - তুলা বা পাটের আঁশ -চুলের কলপ- পোকা মাকড়ের হুল- রং- স্যাঁতসেঁতে কার্পেট ইত্যাদি।
এ্যালার্জিতে আক্রান্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ : শরীরের যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহজে এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় সেগুলোর নাম ও উপসর্গ-
নাক-নাসারন্ধ্রের ঝিলি বা আবরণ ফুলে চোখচোখ লাল হওয়া এবং চুলকানো, কোন কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, ব্যথা করা, কানে কম শোনা ত্বক প্রদাহজনিত চুলকানি বা একজিমা, হাইভস ফুসফুস শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, শোঁ শোঁ শব্দ করা
এ্যালার্জির ঝুঁকি ও কারণ : শরীরে এ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার যে অস্বাভাবিক প্রবণতা তার প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের ভিত্তির ওপর জোর দিয়ে থাকেন। যেমন-
বংশগত কারণ : দেখা যায় এ্যালার্জি আক্রান্ত বাবা-মার সন্তানেরাও এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় এবং তাদের এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা নন-এ্যালার্জিক বাবা-মার এ্যালার্জিক সন্তান অপেক্ষা অনেক বেশি প্রকট। বাবা-মা কেউ এ্যালার্জিতে আক্রান্ত না থাকলেও সন্তানের ১৫% আশঙ্কা থেকে যায়। বাবা-মা কেউ যদি এ্যালার্জিতে আক্রান্ত থাকে তবে সন্তানের ৩০% আশঙ্কা থাকে কিন্তু উভয়েই আক্রান্ত থাকলে তা বেড়ে ৬০%-এর অধিক দাঁড়ায়।
পরিবেশগত কারণ : ঋতুজনিত কারণে (বিশেষ করে শীতকালে) বাতাসে যখন ফুলের রেণু বেশি থাকে তখন এ্যালার্জিও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বাতাস দূষণের পরিমাণ বেশি হওয়াতে সেখানে এ্যালার্জির প্রকোপও বেশি।
এ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও তার উপসর্গ-
এ্যালার্জিক রাইনিটিস : সাধারণভাবে যেটা হে ফিভার নামে পরিচিত। এ ধরনের এ্যালার্জিতে রোগীর অসম্ভব রকম হাঁচি হয়। এ জন্য এর নাম এ্যালার্জিজনিত হাঁচি। বাতাসে অত্যধিক মাত্রায় ফুলের রেণু এর প্রধান কারণ। এ ছাড়াও ধূলিকণা, কুকুর ও বিড়ালের লোম, ছত্রাকের কারণেও এটা হতে পারে। নিশ্বাসের সঙ্গে এই জাতীয় জীবাণু যখন নাকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, প্রদাহজনিত কারণে অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলো নানা ধরনের উপসর্গ প্রকাশ করে। নাক সংলগ্ন কান, সাইনাস এবং গলা ও এই কারণে আক্রান্ত হয়।
উপসর্গ : (ক) নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরা, (খ) নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, (গ) নাক চুলকানো, (ঘ) অসম্ভব রকম হাঁচি, (ঙ) কান ও গলা চুলকানো, খুসখুস করা ইত্যাদি।
এ্যালার্জিক এ্যাজমা বা হাঁপানি : কষ্টদায়ক এই এ্যাজমার বিভিন্ন কারণের মধ্যে এ্যালার্জি অন্যতম। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত এ সমস্যায় ফুসফুল ও এর অভ্যন্তরভাগে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এই প্রদাহ ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের পথকে সঙ্কীর্ণ করে। ফলে বাতাস ঢুকতে ও বেরুতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ভিটামিন সি-এর উৎস : কাঁচা মরিচ, বাঁধাকপি, আলু, লেবু, বাতাবী লেবু, কমলা লেবু, টমেটো, আঙ্গুর, পেয়ারা, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ এবং জিংক : এরা উভয়েই এ্যালার্জি উপশমে সহায়ক যা পাকস্থলীসহ অন্যান্য প্রদাহজনিত স্থানের প্রদাহ কমায়।
ভিটামিন এ-এর উৎস : বাঁধাকপি, ব্রকলি, লেটুস পাতা, পালংশাক, টমেটো, মরটশুঁটি, গাজর, কুমড়া, মিষ্টিআলু, ধনিয়াপাতা, পীচ, কলা, পেঁপে, তরমুজ, ভুট্টা ইত্যাদি।
জিঙ্কের উৎস : জিঙ্কের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস হলো ওয়স্টার মাশরুম যা এখন আমাদের দেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। অন্যান্য যে সব খাদ্যে জিঙ্ক বিদ্যমান সেগুলো হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শিম বীজ, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি। প্রাণিজ জিঙ্কের জন্য ভাল উৎস হলো মুরগির মাংস। এ ছাড়া শামুক, ঝিনুক ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক পাওয়া যায়।
ক্যারোটিনয়েড : ক্যারোটিনয়েড হলো উদ্ভিদের মধ্যস্থিত রঞ্জক বা রঙিন পদার্থ। এ সবের মধ্যে ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন, লাইকোপেন, ক্রিপটোজেন্থিন এবং জিজেন্থিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এগুলো এ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে কাজ করে।
উৎস : সবুজ, হলুদ অর্থাৎ রঙিন শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায়। যেমন গাজর, মিষ্টি কুমড়া, হলুদ, পালংশাক, ডাঁটা শাক ইত্যাদি। ট্রিপটোফেন সমৃদ্ধ খাবার যা সেরোটোনিনে পরিবর্তিত হয় তা এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন : গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি।
ঋষি মাশরুম : এই মাশরুমের এ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কমানোর এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে। এটা হিস্টামিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে ও প্রদাহ কমায়।
অনন্তমূল : এই গাছের পাতায় ও শিকড়ে টাইলোপিরিন নামে যে উপাদান থাকে তা এ্যালার্জিজনিত শ্বাসনালীর প্রদাহসহ এ্যাজমার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
কুঁচিলা : এ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাবার এক অনন্য নাম কুঁচিলা। এই গাছে স্টিকনিন, বøুসিনসহ নানা মূল্যবান উপাদান তৈরি হয়।
কোল্ড এ্যালার্জি থেকে রক্ষার উপায় : একটু শীতে বা ঠান্ডায় অনেকেই সর্দি, কাশি, গলা ব্যথায় ভোগেন, যা কোল্ড এ্যালার্জি নামে পরিচিত। এটা ঘাবড়াবার মতো তেমন কিছু নয় এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এ থেকে রা পাওয়া সম্ভব। যেমন-
- বেশি করে পানি পান করা
- বিশেষ পথ্যের দরকার নেই, তবে ফলের রস, বিশেষত কমলা লেবু বা পাতি লেবুর রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- গরম পানির ভাপ নেয়া। অন্তত দিনে চার বার। - এক টুকরো মিছরি, লবঙ্গ বা আদা মুখে রাখা।
- মধুর সঙ্গে তুলসী বা বাসক পাতার রস মিলিয়ে খাওয়া। সর্দি-কাশির সঙ্গে গলা ব্যথা হলে এক গ্রাস গরম পানিতে এক চামচ লবণ দিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার গার্গল বা কুলকুচা করা। সমপরিমাণ মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে ১০ মিনিট অন্তর বড় চামচের এক চামচ খেলে গলা ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
- ৫ গ্রাম শুকনো হলুদ গুঁড়ো, ২৫০ মি.লি. দুধ এবং ২ চামচ চিনি ১০ থেকে ১২ মিনিট ফুটিয়ে সে দুধ খেলে সর্দি কমে যায়।
আদা ও তুলসী পাতা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে তাতে এক কাপ মধু মিশিয়ে দিনে ৪ থেকে ৫ বার খেলে উপকার পাওয়া যায়।
খানিকটা পানি ফুটিয়ে তার সঙ্গে একটি পাতি লেবুর রস আর অল্প চিনি বা লবণ মিশিয়ে গরম গরম খেলে আরাম পাওয়া যায়।
সর্দি-কাশি লেগে থাকলে ওল পোড়ার সঙ্গে নারকেল কোরা ও ৫ থেকে ৭ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে খেলে সর্দির দোষটা কেটে যাবে।
ডা. আলমগীর মতি
হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক
চেয়ারম্যান মডার্ন হারবাল গ্রুপ
০১৯১১৩৮৬৬১৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।