Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিশাল অর্থনৈতিক সম্পদ

সম্পত্তি উদ্ধার করে কাজে লাগালে দেশ সমৃদ্ধ হবে

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চট্টগ্রাম বন্দর ও রেলওয়ের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৩৭৩ একর জমি এখনও দখলদারদের কব্জায়। স্বর্ণের চেয়েও দামি এসব ভূমি বিশাল অর্থনৈতিক সম্পদ। বন্দর, শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেদখল এসব জমি উদ্ধার করে কাজে লাগানো গেলে বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে। আর তাতে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। গতিশীল হবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়লেও সে তুলনায় অবকাঠামো সুবিধা অপ্রতুল। বন্দরে প্রতি বছরই বাড়ছে জাহাজ ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। পর্যাপ্ত জেটি, ইয়ার্ড ও টার্মিনালের অভাবে প্রায় জটের কবলে পড়ছে বন্দর। জটের কারণে একটি জাহাজ অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করলে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার ক্ষতি গুণতে হয় আমদানিকারকদের। অথচ বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ১০০ একর জমি এখনও বেদখল রয়ে গেছে। বন্দরের ধারক কর্ণফুলীর তীরে বেদখল আরও ৫৮ একর মূল্যবান জমি।
বন্দর সূত্র জানায়, প্রায় একযুগ আগে পতেঙ্গা এলাকায় ২২ একর জমি উদ্ধার করে একটি বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালের কাছে ভাড়া দেয়া হয়। বন্দর ভাড়া পায় পাঁচ কোটি টাকা আর সরকার রাজস্ব পাচ্ছে বছরে ১০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে বেদখল ১০০ একর জমি উদ্ধার করে ভাড়া দেয়া হলেও বছরে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব। জেটি, ইয়ার্ড নির্মাণ করা হলে আয় হবে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বারিক বিল্ডিং থেকে সদরঘাট হয়ে কর্ণফুলীর তীরে বেদখল জমি উদ্ধার করে সেখানেও লাইটারেজ জেটি নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ২১৫ একর মূল্যবান জমি এখনও বেদখল রয়েছে। সরকার রেলকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন চালুরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন দেশে আর নতুন করে কোনো মহাসড়ক নয়, রেলপথের উন্নয়ন করতে হবে।
আর এ প্রেক্ষাপটে রেলের বেদখল জমি উদ্ধার জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জমি উদ্ধার করে কাজে লাগানো গেলে বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেদখল জমি উদ্ধার করা হবে। চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার রেল যোগাযোগ দ্রুততর হলে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বিকশিত হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, এনার্জি হাবসহ চট্টগ্রামকে ঘিরে উন্নয়নের যে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা সচল রাখতেও বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। জেটি ও ইয়ার্ডের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায়ই কন্টেইনার এবং জাহাজ জট বিরাজ করে।
তিনি আরও বলেন, এতে করে আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়ছে। এ অবস্থায় বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগাতে হবে। বন্দরের বেদখল জমি উদ্ধার করে জেটি, ইয়ার্ড নির্মাণ করা হলে বন্দরের গতি বাড়বে। সেইসাথে আমদানি-রফতানি গতিশীল হবে। আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় পণ্যের দাম কমবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, বন্দর এবং রেলওয়ের বেদখল সম্পত্তি উদ্ধার করে কাজে লাগানো গেলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সক্ষমতা বাড়লে অর্থনীতির চাকা আরও বেশি সচল হবে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতি হওয়ার সরকারের যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়ন করতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরের ভূ-সম্পত্তি উদ্ধারে প্রভাবশালীদের সাথে আপোস করার কোনো সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে প্রতিবছর নয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বেদখল জমি উদ্ধার করে দ্রুত কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। পতেঙ্গায় লালদিয়ার চরে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ বে-টার্মিনাল প্রাথমিকভাবে চালু হবে, সীতাকুন্ড যে টার্মিনাল হচ্ছে সেটি চালু হবে ২০২৬ সাল নাগাদ। এ সময়ের মধ্যে বন্দরের যে প্রবৃদ্ধি তা মোকাবেলা করতে হলে লালদিয়া টার্মিনাল বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটি চালু হলে ৫ লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। পিপিপির আওতায় এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পাঁচটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, বন্দরের মোট ১৬০০ একর জমির মধ্যে ১৫০০ একর বন্দরের দখলে রয়েছে। বাকি ১০০ একর বেদখল হয়ে গেছে। এ জমির পুরোটাই বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা লালদিয়ার চরে। উদ্ধার অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, খুব শিগগির লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।
উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশনায় ১৫৮ একর জমি উদ্ধারে কর্ণফুলীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। প্রথম দফায় নগরীর সদরঘাট থেকে শুরু করে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ৪ শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। তবে উদ্ধার অভিযান থেমে যাওয়ায় ওই জমি ফের বেদখল হতে শুরু করেছে। সরকারি তরফে বলা হচ্ছে কৌশলগত কারণে উচ্ছেদ অভিযান আপাতত বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কমকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে।



 

Show all comments
  • এইচ আর রাসেল ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
    এই বিশাল সম্পত্তি উদ্ধার করে কাজে লাগালে দেশ অনেক সমৃদ্ধ হবে
    Total Reply(0) Reply
  • অমিত কুমার শাহা ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে দখলদারদের কব্জা থেকে সরকারি সকল জমি উদ্ধার করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • উবায়েদ ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    বেদখল এসব জমি উদ্ধার করে কাজে লাগানো গেলে বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে। আর তাতে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। গতিশীল হবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
    Total Reply(0) Reply
  • এহছানুল হক ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    রেলের বেদখল জমি উদ্ধার জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জমি উদ্ধার করে কাজে লাগানো গেলে বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • ওমর সানি ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এই নিউজটি করায় রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম সেলিম সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল কালাম আযাদ ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগাতে হবে। বন্দরের বেদখল জমি উদ্ধার করে জেটি, ইয়ার্ড নির্মাণ করা হলে বন্দরের গতি বাড়বে। সেইসাথে আমদানি-রফতানি গতিশীল হবে। আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় পণ্যের দাম কমবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ