মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বালাকোট নিয়ে আলোচনা কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। এটা ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা এবং পাল্টা প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
প্রথমত, বিমান শক্তি ব্যবহার করে একটি ক্লাসিক ধরনের সন্ত্রাস-দমন অভিযান চালায় ভারত। এ ধরনের অপারেশন নিয়মিত চালায় ইসরাইল তার অপারমাণবিক প্রতিবেশী ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয়ত, প্রথমবারের মতো ভারত শুধু ‘ইটের বদলে পাটকেল’ ধরনের অপারেশন চালায়নি বরং বিমান শক্তি ব্যবহার করে আগাম হামলা চালিয়েছে। তৃতীয়ত, প্রথমবারের মতো দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
চতুর্থত, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ও ভারতের সংঘাতটি ছিলো যেকোন দুই দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম সশস্ত্র বিমান যুদ্ধ। মজার বিষয়, কোন পক্ষই যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। এটা ছিলো পাকিস্তান ও ভারতের শত্রুতার ইতিহাসে সবচেয়ে সভ্য আচরণ। দুই দেশের মধ্যে যে চারটি যুদ্ধ হয়েছে তার কোনটিই জনবসতিতে হয়নি এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করা হয়নি।
তাছাড়া আগের মতো কোনপক্ষই পরস্পরকে হুমকি দিতে পারমাণবিক শব্দটি উচ্চারণ করেনি। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানই কঠোর নিরবতা বজায় রাখেন। ১৯৯০-এর দশক থেকে জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলকে পারমাণবিক ফ্লাশপয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এখন পাকিস্তান ও ভারতকে একই নামে অভিহিত করছে পশ্চিমা মিডিয়া।
পঞ্চমত, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ইতোপূর্বে অনেক সংকট তৈরী হয়েছে যা সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়নি। ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালের সংকটে অভিযোগ করা হয় যে ভারত ইসরাইলের সহযোগিতায় পাকিস্তানের বিকাশমান পারমাণবিক সামর্থ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছিলো। ১৯৮৬ সালের অপারেশন ব্রাস ট্যাকস, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯৯ সালে কার্গিলের ঘটনা, ২০০১-২ সালে অপারেশন পারাকরাম ও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলা– এসব ঘটনার কোনটিতে শত্রুতা সংঘাতে রূপ নেয়নি।
ষষ্ঠত, এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টি অনুমোদন করেন (বিমান হামলার তিন দিন আগে তিনি বলেছিলেন: পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত বড় কিছু করার পরিকল্পনা করছে)। তবে যুদ্ধের বিস্তার রোধও নিশ্চিত করেছেন তিনি। আটক পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দনের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন আমরা শিগগিরিই সুখবর পাবো। এর মানে হলো যুক্তরাষ্ট্র ঘটনার উপর কঠোর দৃষ্টি রাখছিলো এবং পরিস্থিতি অবনতি হওয়া রোধ করছিলো। পাকিস্তানের বালাকোটে ভারত বোমা বর্ষণ করে, যা প্রথমবারের মতো সীমিত পাক-ভারত যুদ্ধের রূপ নেয়।
সপ্তমত, অভিনন্দনের ৬০ ঘন্টার আটকাবস্থা ছিলো শত্রুর ভূখন্ডে হামলা চালানোর দায়ে আটক কোন পাইলটের জন্য সবচেয়ে কম সময়ের কারাবাস। সে আটক হওয়ায় যুদ্ধের মনযোগ অন্য দিকে ঘুরে যায় এবং পরিস্থিতির অবনতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে পাইলটের মুক্তির উপর।
অষ্টমত, দুই পক্ষের রাজনৈতিক নেতারাই তুলনামূলক পরিপক্কতার পরিচয় দেন। পাকিস্তানের শান্তির মনোভাব- যা ভারতীয় ‘হক’ যারা যুদ্ধ চান তাদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হয়নি- সংঘাতের নির্ধারক পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তান পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো ও যুদ্ধ না চাইলেও, আলোচনা চাইলেও ভারত নিজেকে বিজয়ী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
অপ্রয়োজনীয় হামলা চালিয়ে নিজের মর্যাদা বাড়ানোর তালে ছিলো ভারত। কিন্তু দ্বিতীয়বার পাকিস্তানে হামলা চালানোর অনুমতি দিতো না যুক্তরাষ্ট্র। তাই ২৭ ফেব্রুয়ারি তিন বাহিনী প্রধান তাদের সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন: পাকিস্তান আক্রমণ করলেই শুধু আমরা পাল্টা আক্রমণ করবো। নবমত, ভারত এই প্রথম একটি সন্ত্রাসের উৎসে আঘাত হেনেছে, কোন সন্ত্রাসী লঞ্চপ্যাডে হামলা করেনি, যেমনটা করা হয়েছিলো ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে।
দশমত, ভারত যে অসামরিক প্রিএম্পটিভ এ্যাকশনের কথা বলেছে তা একেবারেই বাজে কথা। বালাকোটে জয়শে মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ সুবিধা ধ্বংস করতে না পারলেও ভারতের সবটুকু কাজই ছিলো সামরিক।
পরিশেষে, পাকিস্তানি সন্ত্রাসী এসেট ও তাদের প্রভুদের মধ্যে আলাদা করতে না পারায় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতিপক্ষের কোন বেদনাদায়ক কোন ক্ষতি করতে পারেনি। এক ঢিলে দুই পাখি মারার জন্য মাথাগুলো এক জায়গায় হওয়া প্রয়োজন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের গোপন তৎপরতা চালানোর ক্ষমতা কখনোই প্রমাণিত হয়নি।
সব মিলিয়ে বার্তাটি স্পষ্ট: নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো বিমান হামলা চালাতে গিয়ে ভারত তার কৌশলগত সংযম নীতির উচ্চ নৈতিক মূল্যটি হারিয়ে ফেলেছে। কৌশলগত ইচ্ছার মাধ্যমে এর প্রতিশোধ নেয়া হবে। ভারত পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না চাইলেও সীমিত কাউন্টার-টেরোরিজম অপারেশন চালিয়েছে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিলো এবং সে অন্তত একটি জঙ্গিবিমান হারিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিলো ক্ষিপ্র, এতে বুঝা যায়: তোমরা সেটা করতে পারো, আমরাও পাল্টা আঘাত হানতে পারি। সবচেয়ে বড় কৌশলগত অপসারণ হলো, ভারত যদিও ৫০ বছরের পুরনো লাল রেখাটি অতিক্রম করেছে, সে কিন্তু এখন বলতে পারছে না যে বিমান হামলা হলো নতুন স্বাভাবিক অবস্থা অথবা এটি একটি গেম-চেঞ্জার। আনন্দোল্লাসকে যুৎসই করতে সামরিক বিশেষজ্ঞরা একে প্যারাডাইম শিফট বলতে চাচ্ছেন। বিমান শক্তিতে যতই নমনীয়তা ও চামৎকারিত্ব থাকুক না কেন এর সঙ্গে মূল্য ও পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকিও জড়িত। ফলে আরেকবার ভারত বা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে উভয়-সংকটে পড়ে যাবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।