পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি ৯৭ বছর বয়সী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বলেছিলেন ‘ওটার নাম জাতীয় পার্টি নয়, হওয়া উচিত যাত্রা পার্টি’। ৩৩ বছর আগে করা সেই ভবিষ্যদ্বাণী যেন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। মেরুদন্ডহীন নেতৃত্ব, আপোষকামিতা এবং জনমতের বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী ভোগবিলাসের রাজনীতি দলটিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘নাচের পুতুলে’ পরিণত করেছে। যাত্রাপালার মতো ক্ষমতাসীনরা যে গল্প নাচার নির্দেশনা দেন সেভাবেই দলটি রাজনৈতিক মঞ্চে নাচানাচি করে। বিনিময়ে পায় ক্ষমতার কিছু অংশ ও কিছু উচ্ছিষ্ট। এক সময়ের শক্তপোক্ত শেকড়ের দলটির পরজীবী স্বর্ণলতার মতোই আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে বেড়ে উঠছে।
জাপার চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের ৯০তম জন্মদিন পালন নিয়ে চলছে মহা প্রস্তুতি। ২০ মার্চ তার জন্মদিন পালনের জন্য ঢাউস আকারের ‘এরশাদের ৯০তম জন্মদিন উদযাপন পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা মহা ব্যস্ত নেতার জন্মদিন পালনের কর্মযজ্ঞ নিয়ে। জন্মদিন পালনের প্রস্তুতির ব্যস্ততায় অনেকের ঘুম হারাম। কিন্তু গত পয়লা জানুয়ারি ছিল দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রয়োজন মনে করেনি দলটির নীতিনির্ধারকরা। দেশের আমজনতার চিন্তা-চেতনা নিয়ে দলটির নেতাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই; একমাত্র কর্ম যেন হুইল চেয়ার সঙ্গী হওয়া এরশাদের জন্মদিন পালন। অথচ এই দলটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতিওয়ালাদের প্রচন্ড বাধার মুখেও সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংযোজন করেছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ দেশে সড়ক যোগাযোগে মহাবিপ্লব ঘটিয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সময় সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারসহ অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’৮২ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে ক্ষমতায় এলেও এরশাদের শাসনামলে দেশে রাজনীতি চর্চায় গণতান্ত্রিক স্পেস ছিল। ভিন্ন মত ও পথের রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বু্িদ্ধজীবী, সুশীল, পেশাজীবী, ছাত্র-শিক্ষকরা সরকারের খারাপ কাজের তীব্র সমালোচনা করতে পারত; এবং মিটিং-মিছিলও নির্বিঘ্নে হতো ঢাকায়। বর্তমান সময়ের মতো ‘রাস্তায় নামলেই গ্রেফতার হয়রানি’র মতো ভীতিকর পরিবেশ ছিল না। এখনকার মতো মিডিয়া না থাকলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল, ক্রসফায়ার, গুমের ভয় ছিল না। নির্বাচনে কারচুপি ছিল বটে; তবে নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যালটে সিল মারার কৌশল ছিল না। দেশের পীর-মাশায়েখ, আলেম সমাজ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক তথা তৌহিদী জনতা দলটির সমর্থন করায় তৃণমূল পর্যায়েও দলটির ছিল শক্ত ভিত। গত কয়েক বছর দলটির নেতৃত্ব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর লড়াই এবং ক্ষমতার মধু খাওয়ার প্রতিযোগিতায় পড়ে ভুল নেতৃত্ব এবং পরমুখাপেক্ষি চেতনার কারণে দলটি এখন হয়ে পড়েছে শেকড়হীন। দলটির নাম শুনলেই মানুষ মনের অজান্তেই উক্তি করে ‘বেঈমান-দালালের দল’!
এরশাদের জীবদ্দশায় দলটির অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, সাধারণ মানুষ দূরের কথা নেতা-কর্মীরাও এখন দলটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এক সময় জাতীয় পার্টিকে রংপুরের আঞ্চলিক দল বলা হতো। রংপুরকে বলা হতো লাঙ্গলের ঘাঁটি। সেই রংপুরেও স্থানীয় (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। পাঁচ দফায় দলীয় প্রতীকে দেশে ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য এক উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ১০ জন থেকে ২০ জন প্রার্থী লবিং-গ্রুপিং করলেও লাঙ্গল প্রতীকে কেউ প্রার্থী হতে চান না। এবার ৪৯৩ উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ১৩০ জন লাঙ্গলের প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। বিগত ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ৩ জন প্রার্থী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক চেষ্টা করেও দু-চারশ’ প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের অনুকম্পায় কয়েকটি আসন পেলেও অধিকাংশ প্রার্থী দলের নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে এখন দলবিমুখ। সাংগঠনিক অবস্থা এমন যে, পার্টির পক্ষ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেউ যাননি। যাননি পুরান ঢাকায় অগ্নিকান্ডে হতাহতদের প্রতি সমাবেদনা জানাতে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতেও সিনিয়র নেতাদের দেখা যায় না। এখন দলটির সব নেতার ব্যস্ততা এরশাদের জন্মদিন পালন নিয়ে। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘থু থু বাবা’ ‘হিল বাবা’খ্যাত আনপ্রেডিক্টেবল এরশাদকে নিয়ে যে কট‚ক্তি-বক্রকথা এবং ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে তা শুনলে কান লাল হয়ে যায়। টিভি টকশোতেও একই ধরনের বক্তব্য আসছে এরশাদ ও তার দলের সুবিধাবাদী পলিসি নিয়ে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতার গর্ভে থেকে জাতীয় পার্টির জন্ম হলেও ১৯৯১ সালের পয়লা জানুয়ারি দলটি পুন: জন্ম লাভ করে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ’৯১ সালের পয়লা জানুয়ারি গুলশান পার্কে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে দলটিকে পুন: প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর মিজান চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কাজী জাফর আহমদসহ সিনিয়র নেতাদের গণমুখী কর্মকৌশলের কারণে দলটি জনমানুষের সহানুভূতি লাভ করে। কারাগারে থেকে ’৯১ এবং ’৯৬ সালের নির্বাচনে এরশাদ ৫টি করে আসনে জয়লাভ করেন। রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, বায়তুল মোকাররম, মানিক মিয়া এভিনিউয়ে লাখ লাখ লোকের সমাবেশ প্রমাণ দেয় স্বৈরাচারী কায়দায় জন্ম নিলেও দলটি গণমুখী। কিন্তু ’৯৬ সালের নির্বাচনের পর এরশাদের মুক্তি এবং ‘জিনাত-এরশাদ’ রঙ্গলীলার রাজনীতি দলটিকে বিতর্কের মুখে ফেলে দেয়। গত ২০ বছর জাতীয় পার্টি কখনোই গণমুখী কর্মসূচি নেয়নি। মাঝে ’৯৮ সালে চারদলীয় জোট করে গণমানুষের পক্ষে কিছু দিন থাকলেও দলটি কার্যত আওয়ামী লীগের ছাতার নিচে চলে যায়। দলের ভেতরে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ এবং ভাইকে দল উইল করে দেয়ার দলটি কার্যত হুমকির মুখে। দলটির সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশই এরশাদের চেয়ে এখন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতার নামে বেশি বন্দনা করেন। কেউ কেউ অসুস্থ এরশাদকে ব্যবহার করে আয়-রোজগার করছেন। কর্মীদের ভাষায় কেউ নতুন নতুন মুরগি এনে, কেউ মুরগি সাপ্লাই দিয়ে আয়-রোজগার করছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের বি-টিমের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় দলের কর্মসূচিও নির্ধারণ করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। এক সময়ের দাপুটে স্বৈরশাসন এখন হয়ে গেছেন বোধবুদ্ধিহীন রোবট। নির্বাচনী এলাকা রংপুর সফরে গিয়ে শরীর সায় না দেয়ায় হোটেল থেকে বের হতে পারেননি। এখন তাকে ঘিরে যারা ক্ষমতার মধু খাচ্ছেন তারা জন্মদিন পালনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা জানান, সাধারণ নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হলেও এরশাদকে ভালোবাসেন। তবে যারা স্যারের (্এরশাদ) জন্মদিন পালন নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ করছেন তারা অসুস্থ হুইল চেয়ারের ওপর নির্ভরশীল এরশাদকে এখনো ভাঙিয়ে খাচ্ছেন।
দেশের খুব কম নেতাই ৯০ বছর জীবিত ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে ছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনকাল ছিল ৪৫ বছর। একমাত্র মওলানা ভাসানী দীর্ঘজীবন পান। কিন্তু তিনি কখনো ক্ষমতা দূরের কথা এমপি পর্যন্ত হননি। এরশাদ ৯ বছর দেশ চালিয়েছেন। ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। কিন্তু ক্ষমতার লোভ দেশের রাজনীতিতে তাকে কোথায় নিয়ে গেল? বোধবুদ্ধিহীন চিন্তা চেতনা, মেরুদন্ডহীন নেতৃত্ব এবং এমপি-মন্ত্রী-সংসদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য পরমুখাপেক্ষী রাজনীতি এরশাদকে গণমানুষের কাছে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতায় তাকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন; কিন্তু এরশাদ অসুস্থ কেউ খোঁজ নেয় না। এত বড় মাপের নেতার ৯০তম জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি বাঁকা চোখে দেখতে দলটির নেতাকর্মীরাই। একেই বলে ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’! আর এরশাদের ৯০তম জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি নিয়ে সাধারণ মানুষ যা বলছেন তা মুদ্রণের অযোগ্য। হায়রে এরশাদ! ক্ষমতার রাজনীতি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়!!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।