চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আমি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার নিয়মিত পাঠক। আবার তার পাশাপাশি অনিয়মিত লেখকও বটে। বিভিন্ন কর্মব্যস্থতার কারনে ‘ইসলামী জীবন’ কলামে নিয়মিত লিখতে পারিনা। তবে এ কলামে যতগুলো লেখা আমি পাঠিয়েছি তার সবগুলোই ছাপানো হয়েছে। যদিও তা সংখ্যায় কম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম লেখায় আর মনোযোগ দিবনা শুধু ধর্মীয়জ্ঞান অর্জনে ও এবাদত বন্দেগীতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিব। কিন্তু ০৭/১০/১৮ইং তারিখের পত্রিকায় মার্টিন লুথার কিং এর একটি স্মরনীয় বানী এবং একই তারিখে অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ সাহেবের একটি কলাম ‘বন্ধ হোক এই পৈশাচিকতা’ পড়ে আমার মনটা বিমর্ষ হয়ে গেল। মার্টিন লুথার কিং এর বানীটি হলো ‘‘মানুষকে মানুষ কীভাবে হত্যা করে তা আমার কাছে দুর্বোধ্য’’। ১০/১০/১৮ইং তারিখের পত্রিকায় জামাল উদ্দিন বারী সাহেবের একটি কলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল্যবোধের সঙ্কট এবং সাম্প্রতিক সমাবর্তন পড়ে দেখলাম সারাদেশের হত্যা, ধর্ষন ও ছাত্রদের হিং¯্র আচরনের এক ভয়াবহ চিত্র। তাছাড়া পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের সর্বত্র হত্যা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানির অসংখ্য খবর। দেশের মানুষের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ে বিবেকবান মানুষ মাত্রই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম শিশু ধর্ষনের হার ১.৭ শতাংশ। শুধু ঢাকাতে ৭০% নারী ধর্ষন ও যৌন হয়রানির শিকার এবং অন্যান্য এলাকাতে ৮০% নারী ধর্ষন ও যৌন হয়রানির শিকার। সূ² দৃষ্টিতে অবলোকন ও গবেষনা করলে দেখা যায় আমরা সেই জাহেলী যুগে ফিরে যাচ্ছি। একজন বিবেকবান মানুষ কীভাবে আর একজন মানুষকে হত্যা করতে পারে, শিশু ও নারী ধর্ষন করতে পরে তা দুর্বোধ্যই বটে। হত্যা ও ধর্ষন ছাড়াও কিছু সংখ্যক মানুষ খুন রাহাজানি ও দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত। যারা এহেন অপকর্ম অহরহ করছে তাদের মধ্যে সামান্যতম নৈতিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় চেতনা বিদ্যমান নেই। ৯০% মুসলিম জনগোষ্ঠীর কিছু সংখ্যক মানুষের বিবেকহীন কর্মকান্ডে সাধারন বিবেকবান মানুষ উদ্বেগজনক অবস্থায় দিনাযাপন করছে যা কারো কাম্য নয়। অভিভাবকগন ছেলে মেয়েদের স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তা মুক্ত থাকতে পারছেনা। এমতাবস্থায় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী চিন্তামুক্ত ও নির্ভয়ে থাকার পরিবর্তে ভয়ভীতি ও উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে হারে মাদকে, রাহাজানি, চাঁদাবাজি এমনকি খুনখারাবিতে জড়িত হয়ে পড়েছে তাতে প্রত্যেকটি সচেতন মহল চিন্তিত এবং হতাশও বটে। যে ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যত কান্ডারী, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে তারা যদি নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বিবর্জিত হয়ে পড়ে তবে দেশের উন্নতি কাদের দিয়ে আশা করা যায়। সুতরাং প্রত্যেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে ভীষন চিন্তিত। ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, হত্যা, ধর্ষন, নিরসনের জন্য বিদ্যমান আইন বলবৎ রয়েছে বটে। বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করেও মানব সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা বিদূরিত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যারা আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করবে তারাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আইন প্রয়োগ করেও মানুষের মন থেকে অপরাধ প্রবণতা দূর করা যাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় দেশ থেকে তথা মানব সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা দূর করার জন্য সমন্বিত ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। আমার অভিমত হল বিদ্যমান আইন প্রয়োগের পাশা পাশি মানুষের মানসিকতার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এদেশের শতকরা ৯০ জন মুসলমান। সুতরাং মুসলমান হিসেবে প্রতিটি মানুষের মনে যদি আল্লাহভীতি ও রাসূল (দঃ) আদর্শ জাগ্রত করা যায় তবে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। রাসূল (দঃ) বিনয়ের, ভদ্রতার, উদারতার অনুপম আদর্শ। আমাদের ধর্মগ্রন্থ পাক কোরআনে এবং রাসূল (দঃ) এর অসংখ্য হাদিসে রয়েছে হারাম ভক্ষনের ভয়াবহ পরিনতির কথা, ধর্ষণ হত্যার বিভিন্ন শাস্তির কথা, মৃত্যুর পর অপরাধীদের জাহান্নামে নিক্ষেপের কথা। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় শিক্ষা কারিকুলামে যদি ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যায় তবে ধীরে ধীরে সুফল পাওায়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।