Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনবে পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ

মো. ওসমান গনি | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট একটি। আমাদের দেশে পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। এক সময় বাংলাদেশ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। বাংলাদেশে প্রচুর পাটের চাষ হতো। অনেক পাটকল ছিল। এসব পাটকলে চাকরি করে দেশের হাজার হাজার লোকজন তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে পাটের চাষ কমে যায়। এক এক করে বন্ধ হতে থাকে দেশের পাটকলগুলো। এখনও দেশে কিছু কিছু পাটকল জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। পাটকলগুলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, দেশে বেড়ে যায় বেকার লোকের সংখ্যা। এক সময় সরকার বিভিন্ন রকম (লাভ/লোকসানের) অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়। ফলে লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে যায়। তাদের পরিবারগুলোতে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। তবে বর্তমান সরকার হারিয়ে যাওয়া পাটকে আবার অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষের আওতায় আনার জন্য জোরালো ভূমিকা নিয়েছে। পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্য পাট থেকে পলিথিনের সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাজারে বিক্রি হওয়া পলিথিনের ব্যাগ আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলিথিন পঁচে না, গলেও না। এগুলো মাটির মধ্যে স্তরের সৃষ্টি করে। যা চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যার জন্য সরকার পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজের পরিবেশের ও নিজের অস্তিত্বের কথা চিন্তা না করে হরহামেশায় পলিথিন ব্যবহার করছে। এই পলিথিনের ব্যাগ বন্ধ করার জন্য সরকার তার বিকল্প পাটের তৈরি পলিথিনের সোনালি ব্যাগ তৈরি করার চিন্তা করছে। প্রথম অবস্থায় সরকারিভাবে এ ব্যাগ বাজারজাত করণ করা হলেও পরবর্তীতে বেসরকারিভাবেও অহরহ পাটের ব্যাগ তৈরি করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পাট থেকে তৈরি ‘সোনালি ব্যাগ’ বাজারজাতে যাবে সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস পরিদর্শনকালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এ তথ্য জানান। পাট বাংলাদেশের মহামূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার থেকে যে বাজেট লাগবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সেটার ব্যবস্থা করবে। সোনালি ব্যাগ খুব দ্রুত বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে ব্র্যাডিং করবে। সেজন্য সরকার যত দ্রুত সম্ভব পাট থেকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ বাজারজাত করতে যাচ্ছে। সরকারিভাবেই সেটা করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে বেসরকারিভাবে সোনালি ব্যাগের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করার চিন্তা সরকারের রয়েছে।

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালি ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সূ² সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই, বাংলাদেশ পাট দিয়েই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হবে।
পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় ১২ মে ২০১৭। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত্বাবধানে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। গত বছরের ২ অক্টোবর পাট থেকে সোনালি ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য যুক্তরাজ্যের এক কোম্পানির সঙ্গে বিজেএমসির একটি সমোঝতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি এনডিএ স্বাক্ষরিত হয়।
পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ সেলুলোজ বিদ্যমান। তাছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। নতুন আবিষ্কৃত এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। তা ছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে। পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া এই ধরনের প্যাকেজিংয়ের বিদেশেও অত্যন্ত চাহিদা রয়েছে।
বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে একটি ম্যানুয়েল পাইলট প্ল্যান্ট দিয়ে ‘সোনালি ব্যাগ’ তৈরির কাজ করছে। তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। তাই এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় আরও একটি মেশিনের মাধ্যমে দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে দৈনিক এক লাখ পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। বাংলাদেশে এই প্রথম পাট থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। সরকার চায় সারাবিশ্বে পাটের ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশকে সবাই এই পাটের মাধ্যমে আরও বেশি বেশি সম্মান দেবে। সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে অনুকরণ করবে। এই সোনালি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। এটি খুব সহজে পচে যায়। কিন্তু পলিথিনের ব্যাগ যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনিভাবে সহজে পচেও না। পরিবেশবান্ধব এ সোনালি ব্যাগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবে। এজন্য বাজেট দরকার। এই ব্যাগ পচনশীল। এটিতে কোনো ধরনের প্লাস্টিক নেই। তাই পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। তাছাড়া এটা পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তবে পলিথিনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাট


আরও
আরও পড়ুন