Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হ্যানয় বৈঠকের ব্যর্থতা

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভিয়েতনামের হ্যানয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়া সংকটের সমাধানের পথ খুঁজতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্য দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকের আগে গত বছরের ১২ জুন সিঙ্গাপুরের সন্তোসা দ্বীপের এক হোটেলে এই দুই নেতা আলোচনায় বসেছিলেন। সিঙ্গাপুর বৈঠকের পূর্বে, এই দুই নেতার মধ্যে অশোভনীয় ভাষায় বাকযুদ্ধ চলেছিল। তবে, বাস্তবতা বুঝে দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যানয় বৈঠকে দুই নেতা সমঝোতায় না আসতে পারা বিশ্ববাসীর জন্য একটি চিন্তার কারণ। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করুক। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া আমেরিকার দাবি মানতে রাজি, যদি আমেরিকা বাণিজ্যিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাহলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে রাজি না হওয়ায় বৈঠকটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
তবে, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সিঙ্গাপুর, হ্যানয় বৈঠকের ধারাবাহিকতা দুই পক্ষকে ধরে রাখতে হবে। কোরিয়া উপদ্বীপের এই উত্তেজনা আজকের নতুন কোনো ঘটনা নয়। সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী চেতনার নাগপাশে অবিভক্ত কোরিয়া থেকে দুই কোরিয়ার জন্ম হয়। তৎকালীন, কোরিয়া যুদ্ধে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে, ১৯৫৩ সালের জুন মাসে যুদ্ধ বন্ধ হয়। এর পরবর্তীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ সংঘটিত না হলেও পরস্পর যুদ্ধংদেহী মনোভাব বজায় থাকে। ১৯৯৪ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে পুনরায় চরম বিরোধ দেখা দেয়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। এই বিরোধ হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে। তখন সংকটের সমাধান হয়েছিল শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই কোরিয়ার মধ্যে নতুন করে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ অবস্থার অবসান ঘটে শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে এবং সামরিক উত্তেজনার অবসান ঘটে। কিম জং উনের শাসনকালে এসে দুই কোরিয়ার সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তবে, সাম্প্রতিক এই শান্তি আলোচনাগুলোই পারে কোরিয়া উপদ্বীপের স্থিতিশীল পরিস্থিতি আনয়ন করতে। অন্যদিকে যুদ্ধ নিয়ে আসতে পারে অনেক বড় ক্ষতি। দুজন উত্তর কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ বিবিসির সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, যুদ্ধ হলে ২১ দিনে ২০ লক্ষ লোক প্রাণ হারাতে পারে। পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপকভাবে। এই সংকট সমাধানের জন্য চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়াকে নিয়ে এগুতে হবে। উত্তর কোরিয়ার ৯০ শতাংশ অর্থনীতি চীনের উপর নির্ভরশীল। তাত্তি্বকভাবে, উত্তর কোরিয়া এখনও রাশিয়াকে শ্রদ্ধা করে। এজন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে, সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে যথাউপযুক্ত ছাড় দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি সুনিশ্চিত করা।
মো. হাসান তারেক
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন