Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতিতে সময়ের কাজ সময়ে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। অতএব সকলের দৃষ্টিতে এটি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বা ইনক্লুসিভ ইলেকশন। কিন্তু এটা নিরপেক্ষ হয়নি। আমরা যতই বলাবলি করি, সরকার বা ক্ষমতাসীন পক্ষ ততই বিষয়টি অস্বীকার করে। উভয়পক্ষের ঘোষণা ও প্রচার করার সামর্থ্য সমান নয়, ভারসাম্যহীন। এ ছাড়াও একটি কর্মে বা একটি কর্মশক্তিতে, ক্ষমতাসীন সরকারপক্ষ অসম্ভব শক্তিশালী; সেটি হলো- ভয়-ভীতি দেখানো। গ্রেফতার করার কাজটি সরকারি পক্ষ অনায়াসেই করতে পারে। মামলায় অভিযুক্ত দেখিয়ে হয়রানি করার কাজটি সরকার অনায়াসে করতে পারে। এসব কাজ রাজপথের বিরোধী দলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই উভয়পক্ষের কর্মক্ষমতা ভারসাম্যহীন বলতেই হবে। 

নির্বাচনের পরে দলগুলোর করণীয় কী হতে পারে এটি কোনো গভীর গবেষণার বিষয় নয়। ইংরেজিতে বলে: ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েটস ফর নান’; বাংলায় মানে দাঁড়াবে- সময় এবং জোয়ারের পানি কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অর্থাৎ সময় এবং পানির স্রোত থেকে কেউ যদি কোনো উপকার পেতে চায়, তাহলে সময় ও স্রোতের চাহিদা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কাজ করতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষার সময় কোনো ছাত্র যদি নিজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসএসসির বই নিয়ে পড়ালেখা করে, তাহলে সে ফেল করতে বাধ্য। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার সময়, পরীক্ষার্থী যদি নিজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপরের ক্লাসের কিছু পড়ে তাহলে তার প্রস্তুতি জোরদার হয়। যে সিদ্ধান্তটা শনিবারে নেয়ার কথা, সেটি শনিবারে না নিয়ে একদিন আগে শুক্রবারে নেয়া হলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারীরা একটা দিন বেশি সময় হাতে পান; অপরপক্ষে শনিবারের বদলে সিদ্ধান্তটি রোববার নিলে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারীরা চব্বিশ ঘণ্টা সময় কম পাবেন। অতএব, আমার বক্তব্য হচ্ছে, সময়ের কাজ সময়ে করাই ভালো। কথাটি খুব পুরনো। অতি সুপরিচিত বাংলা প্রবাদ : ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ’। মানে একটি কাপড় পরতে পরতে যদি কোনো একদিকে একটু ছিঁড়ে যায় তাহলে ওই ছেঁড়া জায়গাটাই যদি এক ফোঁড় সেলাই দেয়া হয়, তাহলে আর ছিঁড়বে না। অপরপক্ষে, ছেঁড়া জায়গায় যদি এক ফোঁড় সেলাই দেয়া না হয়, তাহলে ছেঁড়া অংশের ব্যাপ্তি বাড়তেই থাকবে এবং এরপর সেটা রোধ করতে গেলে অনেক ফোঁড় সেলাই দিতে হবে। একই কথা ইংরেজিতে প্রকাশ করা হয়েছে এই ভাষায় : ‘এ স্টিচ ইন টাইম, সেইভস নাইন’। এই উদাহরণগুলো দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সময়োপযোগিতার প্রসঙ্গটি তুলে ধরছি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচন কোনোমতেই অংশদারিত্বমূলক বা নিরপেক্ষ ছিল না। নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই দেশব্যাপী আন্দোলন চলছিল; কঠোর আন্দোলন। এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দেশব্যাপী সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। নির্বাচনের পরের দিনই সরকারবিরোধী আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। নির্বাচনের কম-বেশি দুই সপ্তাহ পর, ১৮ কিংবা ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালের সন্ধ্যায়, ঢাকার গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘দল পুনর্গঠনের পর আবার আন্দোলন শুরু হবে।’ এখানে দুটো কাজের উল্লেখ আছে। যথাÑ দল পুনর্গঠন এবং পুনরায় আন্দোলন শুরু করা। ‘দল’ বলতে বিএনপি। গত পাঁচ বছরে, সেই প্রতিশ্রæত পুনর্গঠন শেষ হয়নি। তা অসমাপ্ত রেখেই বা আংশিকভাবে পুনর্গঠিত বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন যে, বিএনপি পুনর্গঠিত হলো কি হলো না তাতে আপনি জেনারেল ইবরাহিমের কী আসে যায়? উত্তরে বলব, ‘অনেক কিছু আসে-যায়।’ কারণ হলো, আমি নিজে একজন রাজনৈতিক কর্মী, আমি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নামক দলের চেয়ারম্যান। এই দলটি ২০ দলীয় জোটের অংশীদার। ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক ও শক্তি হচ্ছে বিএনপি। অতএব, প্রধান শরিকের সুস্বাস্থ্য আমার অবশ্যই কাম্য; কারণ আমাদের চিন্তাচেতনা ও কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগ এই প্রধান শরিককে কেন্দ্র করেই। আমার উপসংহার হলো, আংশিকভাবে পুনর্গঠিত বিএনপি এবং পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত বিএনপির শক্তিমত্তা ও কর্মক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য হতে বাধ্য। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখের নির্বাচনে আমরা আংশিকভাবে পুনর্গঠিত বিএনপিকে পেয়েছি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম যাই। গিয়েছিলাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দাওয়াতে। মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাক্তার শাহাদত হোসেন ফোনে দাওয়াত দিয়েছিলেন; আমি যেন ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় বিএনপি মহানগর কার্যালয়ে (নসিমন ভবন) বিএনপির একটি সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকি। আমাকে দাওয়াত দেয়ার পেছনে তিনি তিনটি যুক্তি দিয়েছিলেন। প্রথম যুক্তি: আমি চট্টগ্রামের সন্তান; দ্বিতীয় যুক্তি: আমি শহীদ জিয়ার সাথী, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা; তৃতীয় যুক্তি: আমি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দলের প্রধান। চট্টগ্রামে মহানগরের কাজীর দেউড়ি বা স্টেডিয়াম এলাকাতে সরকারি সার্কিট হাউজ অবস্থিত। এই সার্কিট হাউজেই, ৩০ মে ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, একদল বিদ্রোহী সেনার হাতে নিহত হয়েছিলেন, তথা শাহাদত বরণ করেছিলেন। ওই স্মৃতির ওপর ভিত্তি করে, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে সম্মান জানিয়ে, সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’। সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই জাদুঘরটি ছিল; এখনও আছে। কিছু দিন আগে সরকারপন্থী ছাত্রদের একটি নতুন সংগঠনের কিছু ছাত্র, সেই জাদুঘরের নামফলকটির ওপর আক্রমণ চালায়। তারা ‘জিয়া’ শব্দটিকে কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। অতঃপর পুরো নামফলকটি অনেক বড় একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেয়। ব্যানারটি দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরেরই সন্তান ও বর্তমান সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর নামে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়েই ছিলেন কারারুদ্ধ। উভয়েই সা¤প্রতিককালে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। সভাপতি কিছু প্রতিবাদমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেটারই ধারাবাহিকতায়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার নামের ওপর হামলা, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামের ওপর হামলা তথা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার নামের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে ওই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। নিজের রাজনৈতিক বিবেক আমাকে নির্দেশ করেছিল, আমি যেন ডাক্তার শাহাদাতের দাওয়াত গ্রহণ করি এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকি। যথাসময়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাই এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হই। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলোতে ছবিসহ সংবাদ, পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি ছাপানো হয়েছে; ঢাকা থেকে প্রকাশিত দু’একটি পত্রিকায় ছবিবিহীন সংবাদ ছাপানো হয়েছে। আলোচ্য সংবাদ সম্মেলনে, বিএনপি মহানগর সভাপতি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন; এর অতি সংক্ষিপ্ত সারমর্ম সংবাদপত্রে উল্লিখিত হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারির আলোচ্য সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তার শাহাদতের আহ্বানে, তার বক্তব্যের পরপরই আমিও বক্তব্য রেখেছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল মৌখিক; যার সারমর্ম নিম্নরূপ: বাংলাদেশের এই মুহূর্তের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঐক্যের বা জাতীয় ঐকমত্যের আহবান জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি তথা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে যদি এরূপ অসম্মানজনক আচরণ করা হয়, তাহলে কি সেটা জাতীয় ঐক্য বা ঐকমত্য সৃষ্টির অনুকূলে যাবে? আমার দৃষ্টিতে, যাবে না। আরো একটি কথা, জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনাবাহিনীর একজন অফিসার। অতএব জিয়ার নামের উপর অসম্মানজনক আচরণ করে, সব রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার প্রতি ও সব মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের প্রতি এক প্রকার অবজ্ঞা প্রকাশ করা হলো। সব রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাই যুদ্ধ করেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের তথা মুজিবনগর সরকারের অধীনে। অতএব, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করা, বিশেষত জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মতো একজন সেনানায়ক ও দেশনায়কের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা করার প্রতিবাদ জানাতেই হবে। শুধু প্রতিবাদ নয়, যে অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়েছে, সেটা সংশোধন করার দাবি জানাতে হবে। আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, বিএনপির সাথে পথচলা একটি শরিক দলের প্রধান হিসেবে সেই প্রতিবাদ ও সেই সংশোধন দাবি করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাক্তার শাহাদত আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি এরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সময় আমাকে স্মরণ করার জন্য ও দাওয়াত দেয়ায়। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ বেশ কিছু স্থানীয় নেতা উপস্থিত থাকলেও, ১৯৭১-এর রণাঙ্গনের কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কোনো সুপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পাইনি। ১৯ ফেব্রæয়ারি ২০১৯ তারিখের সংবাদ সম্মেলনের বা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছি, মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক জেনারেল ইবরাহিম এবং মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম জেনারেল জিয়াউর রহমান পারস্পরিকভাবেই স্মৃতির জগতে, আবেগের জগতে সমান্তরাল সম্পূরক পথের পথিক। অপর ভাষায় বলা যায়, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যদিও আকৃতিতে ও জনপ্রিয়তায় দল দুটোর মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ এবং বয়সে তিন দশকের তফাৎ তথাপি, রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথে সমান্তরাল ও সম্পূরক পথের পথিক। হ্যাঁ, দু’টি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন দল সব সমস্যার সমাধান হুবহু একইভাবে কল্পনা কিংবা একই রকমের প্রস্তাব নাও করতে পারে; ভিন্নতা থাকতেই পারে; কিন্তু তারা পরস্পরের শুভাকাক্সক্ষী তো বটেই। শুভাকাক্সক্ষী হওয়ার মানেই হলো, এক দল আরেক দলের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে। বিএনপির এখন দুঃখের সময় নয়; কিন্তু কঠিন সময়। আমরা পাশে ছিলাম গত প্রায় আট বছর; এখনও দূরে যাইনি। আমরা বিএনপির মঙ্গল চাই, কল্যাণ চাই, বিএনপি আরো শক্তিশালী হোক সেটা চাই, এ দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন সুসম্পন্ন হোক তা চাই, বিএনপি আত্মসমালোচনা করুক- সেটা কামনা করি। আত্মসমালোচনার কথা সব শেষে উল্লেখ করলাম। কারণ, প্রধান শরিকের সঙ্গে আট বছর থাকার ফলে, এর সুবিধা-অসুবিধা কিছু না কিছু অবশ্যই বুঝতে পেরেছি। সেটাকে মাথায় রেখেই আবেদন করছি, বিএনপি আত্মসমালোচনা এবং নিজেদের পুনর্গঠন সম্পন্ন করুক।
বারবার পুনর্গঠনের কথা কেন বলছি, তার কারণ আছে। সাড়ে সাত বছর জোটভুক্ত পথ চলার পর, বিগত সংসদ নির্বাচনে আমাদের দল একটি আসনে নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছিল। তবে এটি নিষ্কণ্টক ছিল না। আসনের নাম ‘চট্টগ্রাম-৫’। ভৌগোলিকভাবে সম্পূর্ণ হাটহাজারী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের এক নম্বর ও দুই নম্বর ওয়ার্ড মানে, দক্ষিণ পাহাড়তলী ও জালালাবাদ এই আসনের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আমি বিএনপির সদস্য নই কিন্তু জোটভুক্ত একটি শরিক দলের সদস্য এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেহেতু স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে আমার ইন্টারঅ্যাকশন কেমন হয়েছিল, কী কী সুবিধা-অসুবিধা ছিল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সবকিছুই লিখিতভাবে দৈনিক পত্রিকার কলামে আলোচনা করার জন্য উপযুক্ত সময় হয়তো এখন নয়। আলোচনার উপযুক্ত সময় হয়তোবা আরো কিছু দিন পরে। যা-ই নিবেদন করতে চাই এবং যা-ই আলোচনা করতে চাই সেটা সাংগঠনিক বিষয়। ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন। বাছাইয়ে যখন আমি তথা ধানের শীষ টিকে গেলাম, তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে একজন প্রার্থী হিসেবে আমার কর্মকাণ্ড শুরু। আরো অন্তত দশ দিন, পুনশ্চ : বেশি না হলেও অন্তত দশ দিন আগেই, এই কার্যক্রম শুরু করতে পারতাম, যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি দূরদৃষ্টিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত হতো। অবশ্যই বলে রাখতে হবে, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আমি অনুমোদিত প্রার্থী হলেও আমাদেরই ২০ দলীয় জোটের অন্য দু’টি নিবন্ধিত দলের দু’জন সম্মানিত প্রার্থী, ওই দু’টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতিতে এবং বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের সম্মতিতে, ওই দুইটি দলের তথা নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়েই বাছাইপর্বে টিকে যান এবং ১০ ডিসেম্বরের পরেও বহাল, কার্যক্ষম ও নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে তৎপর ছিলেন। যা হোক, যেটা হয়নি বা যেটা পরিহার করা সম্ভব হয়নি সেটার ওপর আলোচনা এখন করছি না। ১০ ডিসেম্বর ২০১৮-এর পর আমার প্রথম পাঁচটি কাজের অন্যতম ছিল হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য-সচিব বরাবর মৌখিকভাবে ও এসএমএসের মাধ্যমে একটি আবেদন রাখা।
আবেদনের বিষয় ও ভাষা ছিল অনেকটা এইরকম: ‘আমি জেনারেল ইবরাহিম, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য মনোনীত হয়েছি এবং টিকেছি। মেহেরবানি করে, হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একটি সভা আহ্বান করুন, যেন নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।’ বলাই বাহুল্য, বিবিধ কারণে কমিটির সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি বা করা সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি? উত্তরটি সাংগঠনিক। এরূপ আরো বহু প্রশ্ন আছে যেগুলো সাংগঠনিক তৎপরতা, সাংগঠনিক আনুগত্য ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। সেগুলো আজ আলোচনা করছি না; ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ আলোচনা করব। তাই বারবার তাগাদা দিচ্ছি, আমাদের জোটের প্রধান শরিক বিএনপি যেন তাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠন, শুধু আক্ষরিক অর্থে নয়, বাস্তবিক অর্থেই সম্পন্ন করে।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতিতে সময়ের কাজ
আরও পড়ুন